বেশির ভাগেরই নেই বৈধ কাগজপত্র
স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকির অভাব
পটুয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা গলাচিপা। এই উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন চর কাজল ও চর বিশ্বাস। এই দুই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চর বিশ্বাসের ক্লোজার বাজারে জাহাঙ্গীর মল্লিকের বাড়ির নিচতলায় বসেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বাজারের গলির ভিতর-বাড়ির সামনে টাঙ্গনো হয়েছে ব্যানার আকারের সাইন বোর্ড। নাম দেয়া হয়েছে ‘কাজল রেখা ডায়াগনস্টিক সেন্টার।’ সাইনবোর্ডে দুইজন চিকিৎসকের নামও দেয়া হয়েছে। তারা সপ্তাহে দু’জন রোগীও দেখছেন।
কিন্তু এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই কোনো যন্ত্রপাতি, রোগ নির্ণয়ের যন্ত্র বা টেকনোলজিস্ট, নেই অনুমোদন। অবৈধভাবেই চলছে এই ডায়াগনস্টিকটি। শুধু এটি নয় নয়, এই উপজেলায় অনুমোদন ছাড়াই একের পর এক গড়ে উঠছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অনুমোদনহীন ছাড়াও বেশিরভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বছর পার হয়ে গেলেও নবায়ন করেনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩৩টি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অনেকে অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম চালু করলেও পরে আর নবায়ন করেননি। ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত বেশির ভাগই নবায়নের জন্য আবেদন করেনি। তবে উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের তৎপরতায় ইতোমধ্যে ১৮টি ডায়াগনস্টিক নবায়নের জন্য আবেদন করেছে। তালিকাভুক্তির মধ্যে তিনটির কোনো অনুমোদন নেই বলে জানানো হয়েছে। এ তালিকার বাইরে বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক রয়েছে, যা তালিকাভুক্তি করণের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তালিকাভুক্তির বাইরে অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠার মধ্যে রয়েছে চর বিশ্বাসের কাজল রেখা ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
সরেজমিন দেখা যায়, গ্রামের বাজারের অলিগলিতে অনুসন্ধান চালিয়ে অনুমোদন না নিয়ে খুলে বসা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘ফ্যামিলি কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার (বর্ধিত)। উপজেলার বকুলবাড়ীয়া চৌরাস্তা বাজারে খোঁজ পাওয়া যায় ইসলামিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রতনদি তালতলী ইউনিয়নের কাটাখালী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চর বিশ্বাস ইউনিয়নের ক্লোজারসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে মহিলা ডাক্তার দ্বারা সিজার ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হয় বলে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে।
কাজল রেখা ডায়াগনস্টিকের স্বত্বাধিকারী কাজল রেখা বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিয়মকানুনগুলো তার জানা নেই। তার এখানে কোনো যন্ত্রপাতিও নেই। শুধু ডাক্তার যে দিন আসেন, তারাই যন্ত্রপাতি নিয়ে আসে এবং চিকিৎসা সেবাসহ রোগ নির্ণয় করে রিপোর্ট দেন। ডাক্তার না আসলে সেন্টার বন্ধ করে দিবো। আরেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বলেন, উপজেলায় পরিদর্শন টিমকে ম্যানেজ করেই এভাবে নবায়ন না করেই ব্যাবসা সবাই করে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, যে সকল প্রতিষ্ঠান নবায়ন করেননি তাদের নবায়ন করতে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত উপজেলার সব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তালিকার কাজ চলমান রয়েছে। অবৈধ প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সিভিল সার্জন বরাবরে তালিকা পাঠানো হচ্ছে।
সিভিল সার্জন মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, নবায়নের জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে বলা হয়েছে। নবায়ন না করলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



