কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে মজুদদার, কালোবাজারি ও প্রতারণামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ১৩টি ট্র্যাভেল এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এ কে এম মনিরুজ্জামান (নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ) স্বাক্ষরিত নিবন্ধন সনদ বাতিল আদেশ সংক্রান্ত এক চিঠিতে এমন তথ্যই উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠির আদেশের কপি এয়ার কিং অ্যাভিয়েশনের ব্যবস্থাপনা অংশীদার মো: অহিদুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটি ৬ মাসের মধ্যে (সেপ্টেম্বর-২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস) ৬ মাসের মধ্যে এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সাথে জড়িত ট্র্যাভেল এজেন্সিকে চিহ্নিত ও পর্যলোচনা করে গত ২৫ মার্চ একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনে সুনিদ্দিষ্টভাবে উদঘাটিত হয়, অধিক চাহিদাসম্পন্ন রুটগুলোর টিকিট ‘অ্যাডভান্স প্যামেন্ট’ প্রদানপূর্বক গ্রুপ বুকিংয়ের নামে অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য ব্লক করে রাখা এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেরা অথবা সাব এজেন্টের মাধ্যমে উচ্চমূল্যে বিক্রি করার ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্স ও জিএসএর সিন্ডিকেটের সাথে ট্র্যাভেল এজেন্সির জড়িত থাকার প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আদেশে আরো বলা হয়, মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তীতে বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে সংশ্লিষ্টদের শুনানিতে লিখিত জবাবসহ উপস্থিত হতে বলা হলেও তারা শুনানিতে উপস্থিত হননি, যা বাংলাদেশ ট্র্যাভেল এজেন্সি বিধিমালা ২০২২ এর বিধি-১০ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এরপরও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়। সেই শুনানিতেও বিধি বহির্ভূতভাবে এসব এজেন্সি অনুপস্থিত থাকেন। তাই বাংলাদেশ ট্র্যাভেল এজেন্সি বিধিমালা লঙ্ঘন এবং গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলি লঙ্ঘন করায় জনস্বার্থে ভোক্তা সুরক্ষা ও আকাশ পরিবহন খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য এয়ার কিং অ্যাভিয়েশনসহ অন্যদের নিবন্ধন বাতিল করা হলো। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সিটিকম ইন্টারন্যাশনাল ট্র্যাভেল এজেন্সি প্রা: লি, আরবিসি ইন্টারন্যাশনাল, মেঘা ইন্টারন্যাশনাল এয়ার সার্ভিস, মাদার লাভ এয়ার সার্ভিস, জেএস ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরস, হাসেম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ফোর ট্রিপ লিমিটেড, কিং এয়ার অ্যাভিয়েশন, বিপ্লব ইন্টারন্যাশনাল ট্র্যাভেল এজেন্ট, সাদিয়া ট্র্যাভেলস, আত-তাইয়ারা ট্র্যাভেলস ইন্টারন্যাশনাল ও এনএমএসএস ইন্টারন্যাশনালসহ মোট ১৩টি ট্র্যাভেল এজেন্সির নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হয়। ওই আদেশে বলা হয়েছে, নিবন্ধন সনদের ৭ নম্বর শর্ত অনুযায়ী বাতিল হওয়া ট্র্যাভেল এজেন্সি থেকে এয়ার টিকিট ক্রয়-বিক্রয়সহ সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এর আগে গত আগস্ট মাসে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধকল্পে টিকিটের গায়ে বিক্রয়মূল্যের উল্লেখ করার নির্দেশনা থাকলেও তা অনুসরণ না করার নজির দেখা যাচ্ছে। যাত্রীর স্বার্থ রক্ষায় ট্র্যাভেল এজেন্সিকে এয়ার টিকিটের গায়ে ট্র্যাভেল এজেন্সির নাম, লাইসেন্স নম্বর এবং টিকিটের বিক্রয়মূল্য স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। যাত্রীদের উদ্দেশ্য বলা হয়, টিকিটের বিক্রয় মূল্য এবং ট্র্যাভেল এজেন্সির নাম রয়েছে কি না তা বুঝে নিতে হবে। কোনোভাবে অনিবন্ধিত ট্র্যাভেল এজেন্সির কাছ থেকে টিকিট ক্রয় করা যাবে না। মূল্যবৃদ্ধি বা সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে ট্র্যাভেল এজেন্সির নিবন্ধন বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল। এরপরই মন্ত্রণালয় ১৩টি ট্র্যাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
উল্লেখ্য, ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিকদের নাম ব্যবহার করে সাব এজেন্টরা বিভিন্ন এলাকায় অফিস খুলে আবার কখনো ভ্রাম্যমাণ টিকিট বিক্রি করে যাচ্ছে। এতে বিদেশগামী অনেকেই নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন বলে অসংখ্য অভিযোগ ইতোমধ্যে বীমা ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে। এসব অফিস থেকেই বিদেশে লোক পাঠানোর নামে আদম পাচারের ঘটনাই বেশি ঘটছে। তারপরও অধিকাংশ নামধারী টিকিট বিক্রির সাব এজেন্ট চক্রের সদস্যরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।