কমছে গ্যাসের উৎপাদন, বাড়ছে এলএনজি আমদানি

চলতি বছরে এলএনজি আমদানিতেই খরচ হবে ৫৬ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা

সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
Printed Edition
সাগরপথে এলএনজি সরবরাহ
সাগরপথে এলএনজি সরবরাহ |সংগৃহীত

ক্রমেই অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ফলে দেশে বাড়ছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নির্ভরতা। এই তরল গ্যাসের পুরোটায় আমদানি করতে হয়। গ্যাসের চাহিদা মেটাতে চলতি পঞ্জিকা বছরে ৯৮টি এলএনজি কার্গো আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৯০টি কার্গো আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এসব কার্গো আমদানিতে ব্যয় হবে ৪৫৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৫৬ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা (১ ডলার=১২৩ টাকা হিসাবে)। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র মতে, প্রতি বছর দেশে অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন কমছে। চলতি বছরের মার্চে দৈনিক গ্যাসের গড় উৎপাদন ছিল এক হাজার ৮৬২ এমএমসএফডি। এর আগে ২০২৩ ও ২০২৪ সালের একই মাসে গ্যাসের গড় উৎপাদন ছিল দুই হাজার ১৭৬ এমএমসিএফডি এবং দুই হাজার ৪০ এমএমসিএফডি। বিভিন্ন মাসে উৎপাদন হ্রাস বৃদ্ধি ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে চলতি বছরের মধ্যে ৫০টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভারের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় গ্রিডে ৬৪৮ এমএমসিএফডি গ্যাস যুক্ত হবে। একইভাবে আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভারের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় গ্রিডে ৯৮৫ এমএমসিএফডি গ্যাস যুক্ত হবে। এ ছাড়া চলতি বছরেরর মধ্যেই গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় বিদ্যমান সিস্টেম/কারিগরি লস ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা হচ্ছে তিন হাজার ৮০০ এমএমসিএফডি। এর বিপরীতে দৈনিক গড় উৎপাদনের পরিমাণ দুই হাজার ৭০৭ এমএমসিএফডি। অর্থাৎ দৈনিক ঘাটতি প্রায় ১১ শ’ এমএমসিএফডি। এলএনজি আমদানির মাধ্যমে এ ঘাটতি পূরণ করা হয়। এদিকে ডলারের দাম বাড়ার কারণে এলএনজি কার্গো আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি এলএনজির গড় মূল্য প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ দশমিক ৫০ ডলার। আর স্পট মার্কেট থেকে কেনা হলে প্রতি এমএমবিটিইউয়ের গড় মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১৪ ডলার।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, আমদানিকৃত গ্যাসের মোট বিক্রয়মূল্য হচ্ছে ৩৮ হাজার ৯৭০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। অর্থ ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। এদিকে জ্বালানি খাতে মোট ভর্তুকির পরিমাণ হচ্ছে ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি বাদ দিলে এ খাতে বছরে নিট ঘাটতি দাঁড়ায় প্রায় ১১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। প্রতি ঘনমিটারে গ্যাসের মূল্য পার্থক্য (প্রাইস গ্যাপ) হচ্ছে ৭ টাকা ৮ পয়সা।

সূত্র জানায়, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এদিকে, অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে পরিচালিত দেশী-বিদেশী শিল্প কারখানা চালনোর জন্য প্রতি বছর এলএনজির চাহিদা বাড়ছে। এই জন্য প্রতি সপ্তাহে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এলএনজি ক্রয় সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে। যাতে দেশের অভ্যন্তরে এলএনজি কোনো ঘাটতি না হয়। তিনি আরো বলেন, এলএনজি খাতে সরকারকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২০২৫) অর্থবছরে এলএনজি খাতে সরকারকে ১৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। গত অর্থবছরে যা ছিল ছয় হাজার ৩৫ কোটি টাকা।