দেশে অতিথি পাখি এক-তৃতীয়াংশ কমেছে

অবৈধ শিকার, বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক আবাসস্থলের সঙ্কটসহ একাধিক কারণে পরিযায়ী এসব পাখি বাংলাদেশকে অনিরাপদ মনে করছে। ফলে দেশে গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনক হারে অতিথি পাখির সংখ্যা কমছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক
Printed Edition

দেশে অতিথি পাখি কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। অবৈধ শিকার, বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক আবাসস্থলের সঙ্কটসহ একাধিক কারণে পরিযায়ী এসব পাখি বাংলাদেশকে অনিরাপদ মনে করছে। ফলে দেশে গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনক হারে অতিথি পাখির সংখ্যা কমছে।

পাখিবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশে ছয় হাজার ৫৮০ প্রজাতির পাখি বিদ্যমান। এর মধ্যে ২৫০ প্রজাতি পরিযায়ী পাখি। প্রতি বছর এসব পাখি তাদের প্রজননক্ষেত্র অথবা শীতকালীন আশ্রয়ের সন্ধানে হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের হাওর-বিলে আসে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি হাওরে অবাধে পর্যটকদের চলাচল ও পাখিশিকারিদের হানায় ধ্বংস হচ্ছে হাওর, বিলে থাকা পাখিদের স্বাভাবিক আবাসস্থল। আর এতে পাখির মূল্যবান আবাসস্থলগুলো হুমকির মুখে পড়ছে। বার্ডস ক্লাবের তথ্যমতে, গত ১০ বছরে শুধু সুনামগঞ্জের হাওরে পাখির সংখ্যা কমেছে ৮৫ শতাংশ। ১৫ সালে প্রায় দুই লাখ, ১৮ সালে ৬০ হাজার, ২২ সালে ৩০ হাজার, ২৩ সালে ৪৩ হাজার এবং ২৪ সালে; গত ১৫ বছরে সবচেয়ে কম মাত্র ২৩ হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছে ।

টাঙ্গুয়ার হাওরের তথ্য তুলে ধরে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্স পাখি (আইইউসিএন) বলছে, এ হাওরে দেশী-বিদেশী মিলিয়ে দুই শতাধিক প্রজাতির পাখি ছিল। পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় প্যালাসিস ঈগল পাখিও আছে এ হাওরে। কিন্তু ২০১১ সালের আইইউসিএনের এক জরিপে টাঙ্গুয়ার হাওরে ৬৪ হাজার পাখির অস্তিত্ব দেখানো হয়েছে। যেখানে ৮৬ জাতের দেশীয় এবং ৮৩ জাতের বিদেশী পাখির কথা উল্লেখ করা হয়।

অপরদিকে মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিলে এক সময় শীতকালে ঝাঁকে-ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি আসত। সম্প্রতি বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সহায়তায় বাইক্কা বিলের জলচর পাখিদের নিয়ে শুমারি সম্পন্ন করে সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডি (সিএনআরএফ) নামে একটি সংস্থা। এতে বিলে নতুন গণনায় ৩৮ প্রজাতির সাত হাজার ৮৭০ জলচর পাখি, ২৪ সালে ৩৩ প্রজাতির চার হাজার ৬১৫ জলচর পাখি দেখা গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ বছর উল্লেখযোগ্য ৭৫০টি মেটে মাথার টিটি, ৬৩৯টি রঙিলা কাস্তেচরা, ১০০টি কালা মাথার কাস্তেচরা দেখা গেছে।

মৌলভীবাজারের প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন হাকালুকি হাওরে জলচর পরিযায়ী পাখির সংখ্যা গত কয়েক বছরের তুলনায় কম দেখা গেছে। হাওরের বিভিন্ন বিলে দুই দিনব্যাপী পাখিশুমারির পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ তথ্য জানিয়েছেন। ১৯৯৯ সালে সরকার হাকালুকি হাওরকে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ বা ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া) ঘোষণা করে।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব বলছে তাদের একটি প্রতিনিধিদল ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি হাওরের ৪৫টি বিলে এ শুমারি চালায়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওমর শাহাদাতের নেতৃত্বে আট সদস্যের দল এতে অংশ নেয়। শুমারিতে হাওরে ৬০ প্রজাতির মোট ৩৫ হাজার ২৬৮টি পাখি পাওয়া গেছে, যা ছিল গত কয়েক বছরের তুলনায় কম।

বার্ড ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, ’২৪ সালে হাকালুকি হাওরে পাখিশুমারি হয়নি। এর আগে ২০২৩ সালের শুমারিতে এ হাওরে ৫২ প্রজাতির ৩৭ হাজার ৭৭৮টি, ২০২২ সালে ৫১ প্রজাতির ৩৬ হাজার ৫০১টি পাখি দেখা গিয়েছিল। এ ছাড়া ২০২০ সালে ৫৩ প্রজাতির ৪০ হাজার ১২৬টি এবং আগের বছর ২০১৯ সালে ৫১ প্রজাতির ৩৭ হাজার ৯৩১টি পাখির দেখা মিলেছিল।

এদিকে পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, এখানে আগে দেশী-বিদেশী মিলে ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মিললেও এখন দেশী প্রজাতির সংখ্যাই বেশি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় ২৬টি লেক থাকলেও শুধু চারটিতে পাখিরা আসে। নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের অভাবে অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে পাখিদের ফ্লাইং জোন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।