নাইন্দার হাওরে অক্ষত বাঁধকে ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে প্রকল্প

ব্যয় দেখানো হয় ২ কোটি টাকা

সোহেল মিয়া, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)
Printed Edition
দোয়ারাবাজার উপজেলার নাইন্দা হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ : নয়া দিগন্ত
দোয়ারাবাজার উপজেলার নাইন্দা হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ : নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নাইন্দার হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে প্রকল্প লুটপাটের অভিযোগ। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, এখানে প্রতি বছর ‘ফসল রক্ষা বাঁধ’ নামের প্রকল্পে ব্যয় দেখানো হয় প্রায় দুই কোটি টাকা, অথচ হাওরের ফসলের বাজারমূল্যও প্রায় একই অঙ্কের। অক্ষত বাঁধকেও ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে বরাদ্দ আত্মসাৎ করার পদ্ধতি এখন যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার পাশে অবস্থিত নাইন্দার হাওরের অধিকাংশ ফসল রক্ষা বাঁধই অক্ষত রয়েছে। কোনো অংশ ভাঙা বা ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নতুন করে সার্ভে শুরু করেছে ‘সংস্কারের প্রয়োজন’ দেখিয়ে। স্থানীয়রা বলছেন, গত বছরও অক্ষত বাঁধ সংস্কারের নামে ব্যয় দেখানো হয় প্রায় দুই কোটি টাকা। এবারো একই দৃশ্যপট দেখা যাচ্ছে।

পাউবো কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাইন্দার হাওরে প্রতি বছর ১২টির বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) অনুমোদন দেয়া হয়, যার মোট ব্যয় ধরা হয় প্রায় দুই কোটি টাকা। অথচ কৃষি অফিস বলছে, এই হাওরে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়, যার বাজারমূল্য বছরে মাত্র দুই কোটি টাকার মতো। কৃষকদের প্রশ্ন; হাওরের মোট ফসলের সমান অর্থ যদি প্রতিবছর অক্ষত বাঁধে ব্যয় করা হয়, তবে এর যৌক্তিকতা কোথায়?

স্থানীয়রা জানায়, ২০২৪ সালে বন্যা বা বড় কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না থাকায় অধিকাংশ বাঁধ অক্ষত ছিল। তবুও পাউবো কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পিআইসি কমিটি কাগজে-কলমে ক্ষতি দেখিয়ে প্রকল্প অনুমোদন নেয়। এ বছরও একই পদ্ধতিতে প্রকল্প তৈরির চেষ্টা চলছে। ফলে কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে, ফসল বাঁচানোর নামে আবারো শুরু হতে পারে লুটপাট।

তাদের অভিযোগ, কৃষকদের মতামত না নিয়েই সার্ভে করা হয়। হাওরের বাস্তব অভিজ্ঞতা বিবেচনায় না এনে কাগুজে রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রকল্প নেয়া হলে তা কখনো টেকসই হয় না। পিআইসি গঠন থেকে কাজের বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব ও তদবির চলার অভিযোগও দীর্ঘ দিনের। স্থানীয় কৃষক, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকর্মীরা দাবি জানান; স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে জনপ্রতিনিধি, প্রকৃত কৃষক এবং নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের নিয়ে যৌথ সার্ভে কমিটি গঠন করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন দোয়ারাবাজার উপজেলা আহ্বায়ক এসার মিয়া বলেন, গত বছরের মতো এবারো যদি অক্ষত বাঁধে বরাদ্দ লোপাট হয়, তবে কৃষকের দুর্ভোগ বাড়বে এবং জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, প্রতি বছর অস্থায়ী বাঁধে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়। অথচ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করলে সরকার যেমন সাশ্রয়ী হবে, তেমনি কৃষকরাও নিরাপদ থাকবে।

পাউবো দোয়ারাবাজারের এসও সাদ্দাম হোসেন জানান, নাইন্দার হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ চিহ্নিতের জন্য সার্ভে করা হচ্ছে। শুধু ক্ষতিগ্রস্ত অংশেই কাজ হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুপ রতন সিংহ বলেন, যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হবে না। অক্ষত বাঁধে অনুমোদনের কোনো সুযোগ নেই।