বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনার পর অবশেষে মাধ্যমিকের বাংলা বই থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ। যদিও এর আগে একাধিকবার এ সংক্রান্ত সভায় ৭ মার্চের ভাষণ বাদ দেয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিন্তু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন ব্যক্তির আপত্তিতে এই ভাষণ বাদ দেয়া হয়নি। পরে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনা ও ভাষণ থাকার বিষয়ে আপত্তি আসে। এরই ফলে গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় সদস্যদের অধিকাংশই এই ভাষণ পাঠ্যবইয়ে বিশেষ করে বাংলা বইয়ে না রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তবে কয়েকজন সদস্য অবশ্য ইতিহাস বইয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে এই ভাষণ রাখার পক্ষে তাদের মতামত দিয়েছেন। আর সভার সিদ্ধান্ত মতে ২০২৬ সালের অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বই থেকে ৭ মার্চের ভাষণ পুরোপুরি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অন্য দিকে গত শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেয়া বক্তব্য অনুসারে জুলাই সনদ পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তারই আলোকে গতকালের সভায় এ বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে পাঠ্যবইয়ে জুলাই সনদ যুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের দলিল জুলাই সনদ যুক্ত হচ্ছে ২০২৬ সালের নতুন পাঠ্যবইয়ে। সভা সূত্রে জানা গেছে যেহেতু প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে কাজেই এই সনদ এখন পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা সময়ের দাবি।
সূত্র আরো জানায়, আগের সিদ্ধান্ত অনুসারে ৭ মার্চের ভাষণ বাংলা সাহিত্য বইয়ে যুক্ত করার সিদ্ধান্তে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনাও শুরু হয়। পরে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেই ৭ মার্চের ভাষণ যুক্ত করা সমীচীন হবে কি না তা নিয়ে পুনরায় আলোচনা করার নির্দেশনা দেয়া হয়। যদিও অনেকের মতে ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য অনন্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে তাই এই বিষয়টি বাংলা সাহিত্যে সংযুক্ত না করে বরং পৌরনীতি কিংবা ইতিহাস বইয়ে যুক্ত করার বিষয়েও অনেকে মতামত দিয়েছেন। তবে গতকালের সভায় সবচেয়ে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল জুলাই সনদ পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি। যেহেতু ইতোমধ্যে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ওই দিন (শুক্রবার) স্বাক্ষর শেষে দেয়া এক বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, জুলাই সনদ পাঠ্যবইয়ে থাকবে। এটি ছাত্রদের পড়ানো হবে। বহুল কাক্সিক্ষত এই দলিল তথা জুলাই সনদ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুুষ্ঠানের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ এ স্বাক্ষর করেন তারা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরাও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র গতকাল সন্ধ্যায় জানায়, এনসিসিসির সভা দুপুর আড়াইটায় শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সভায় ৭ মার্চের ভাষণ থাকা বা বাতিল করা নিয়ে সবার বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে উপস্থিত অধিকাংশ সদস্য এই ভাষণ মাধ্যমিকের ৮ম শ্রেণীর বাংলা বই থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন। একই সাথে পাঠ্যবইয়ে জুলাই সনদ যুক্ত করার বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেন। পরে সর্বসম্মতিতে জুলাই সনদ যুক্ত করা এবং বাংলা বই থেকে ৭ মার্চের ভাষণ বাদ দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গতকালের সভায় উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা, দুই মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, নায়েম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিন বিভাগের সচিবদের একান্ত সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
গতকালের সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন এক সদস্য এই প্রতিবেদককে জানান, ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যবইয়ে থাকা কিংবা না থাকা নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য আসে। অনেকে পাঠ্যবইয়ের সব শ্রেণির বই থেকেই এই ভাষণ বাদ দেয়ার জন্য তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। আবার অনেকে ইতিহাস কিংবা পৌরনীতি বইয়ে রেখে বাংলা বই থেকে বাদ দেয়ার জন্য মতামত দিয়েছেন। পরে সবার মতামত নিয়ে বাংলা বই থেকে এই ভাষণ বাদ দিয়ে শুধু ইতিহাস কিংবা পৌরনীতি বইয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।



