ইসরাইল-ইরান সঙ্ঘাতের মধ্যেই কানাডায় জি-৭ সম্মেলন শুরু

রয়টার্স
Printed Edition

ইসরাইল এবং ইরানের মধ্যে সঙ্ঘাত ও চলমান বৈশ্বিক বাণিজ্য বিরোধের মধ্যেই জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিতে কানাডার রকি পর্বতমালায় একত্রিত হয়েছেন গোষ্ঠীটির নেতারা। স্থানীয় সময় রোববার ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যেই এ সম্মেলন শুর হয়। এ দিকে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ইসরাইল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভেটোয় সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। তবে নিঃসন্দেহে এ তথ্যটি ইসরাইলের হামলার তীব্রতা নির্দেশ করছে।

চলমান এ সঙ্ঘাত নিয়ে সম্মেলনে তীব্র আলোচনা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তাছাড়া সম্মেলনের আগেও তিনি ট্রাম্প ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন। এবারের সম্মেলনের আয়োজক ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে মতপার্থক্য থাকায় সম্মেলন নিয়ে কোনো যৌথ বিবৃতি দেয়া হবে না। যদিও এ বিবৃতি জি-৭-এর দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য।

এ সম্মেলনের আগে গ্রিনল্যান্ড সফর করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এ সময় ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কিনতে চাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। ম্যাক্রোঁ বলেন, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয় এবং তা ছিনিয়ে নেয়ার জন্যও নয়। রোববার সন্ধ্যায় আলবার্টায় পৌঁছান ট্রাম্প। সোমবার কার্নির সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। এরপর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক সেশন।

ব্যাপক অংশগ্রহণ, পুরোনো উত্তেজনা

ভারত, ইউক্রেন, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতারাও সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। এবার বাণিজ্য ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী শুল্ক কৌশল আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ দিকে ওয়াশিংটন ছাড়ার আগে ট্রাম্প বলেন, সম্মেলনে নতুন বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা আসতে পারে। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কিছু নেতার জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। এর আগে ইউক্রেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে তার ওপর।

ট্রাম্প সম্পর্কে সাবেক কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জ্যাঁ ক্রেতিয়ান নেতাদের উদ্দেশে বলেন, যদি ট্রাম্প মনোযোগ আকর্ষণে কোনো দৃশ্য তৈরি করতে চান, করতে দিন। শান্ত থাকুন ও নিজের কাজ চালিয়ে যান। গত মাসে যানবাহন, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক কমাতে প্রাথমিক বাণিজ্য চুক্তি করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

এ দিকে কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হওয়া উচিত, ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া না জানানোয় কানাডিয়ানদের কাছ থেকে সমালোচিত হয়েছেন স্টারমার। এর জবাবে স্টারমার বলেন, কানাডা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ এবং কমনওয়েলথের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এ ছাড়া সম্মেলনের আগে অটোয়ায় কার্নির সাথে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করেন স্টারমার।

অন্য দিকে চলতি বছরের শুরুর দিকে ওভাল অফিসের বিতর্কিত বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে ট্রাম্পের আবার বৈঠকের কথা রয়েছে। ইরানে ইসরাইলি হামলার পর বিশ্ববাজার ও ওয়াল স্ট্রিটে পতন হয়েছে ও তেলের দাম বেড়েছে।

জার্মান কর্মকর্তারা জানান, সম্মেলনটি জি-৬ বনাম ট্রাম্প হয়ে উঠবে এমন জল্পনা ভিত্তিহীন কারণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যেও মতপার্থক্য বিদ্যমান। তবে ক্রেতিয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কী করবেন, তা তার মেজাজ বা সংবাদ শিরোনামে থাকার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে এটাই সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত দিক।