বাংলাদেশ ব্যাংক শিল্প আমদানিকারকদের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। এখন থেকে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির আওতায় আমদানি করলে অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলো কোনো এক্সপোজার বা ক্রেডিট লাইন ছাড়াই ডকুমেন্টারি কালেকশন সেবা দিতে পারবে। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সব এডি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রচলিত আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী শিল্প আমদানিকারকরা এখন কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারি এবং ফায়ার ডোর ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির মাধ্যমে মূল্যসীমা নির্বিশেষে আমদানি করতে পারবেন। তবে বাণিজ্যিক আমদানি েেত্র নির্ধারিত মূল্যসীমা পূর্বের মতোই বহাল থাকবে।
আগে এলসি পদ্ধতিতে আমদানি করলে ব্যাংকগুলো আমদানিকারকের ওপর একটি নির্দিষ্ট এক্সপোজার বা দায়ভার বহন করত। এতে ব্যাংকের ঝুঁকি বাড়ত এবং অনেক েেত্র আমদানিকারকদেরও প্রক্রিয়াগত জটিলতার মুখে পড়তে হতো। কিন্তু নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিভিত্তিক আমদানিতে ব্যাংকগুলো শুধুমাত্র নথিপত্র যাচাই ও নিষ্পত্তির কাজ করবে, কোনো আর্থিক দায় নেবে না।
এই নীতির আওতায় ইউনিফর্ম রুলস ফর কালেকশনস অনুযায়ী ডকুমেন্টারি কালেকশন সেবা প্রদান করা হবে। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নিরাপদ উপায়ে অর্থ ও পণ্যের লেনদেন সম্পন্ন হবে।
এছাড়া, এফই প্রজ্ঞাপন নং ৩৩/২০২৫-এর অনুচ্ছেদ ৩৪(৪) ও ৩৫ অনুযায়ী বিলম্বিত মূল্য পরিশোধের সুবিধা আগের মতোই বহাল থাকবে, যা শিল্প খাতে নগদ প্রবাহে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই পদেেপর মূল উদ্দেশ্য হলো বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন প্রক্রিয়াকে সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত করা। একই সাথে আমদানির েেত্র তারল্য বৃদ্ধি ও সময় সাশ্রয় নিশ্চিত করা হবে।
ফলে শিল্পোদ্যোক্তারা দ্রুত কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে পারবেন। এতে উৎপাদন ও শিল্পায়নের গতি বাড়বে, যা সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্কট ও আমদানি জটিলতা নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কারণ, এতে এলসি খুলতে বাধ্য না হওয়ায় ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ কমবে এবং উদ্যোক্তারা সহজে আমদানির সুযোগ পাবেন। একই সাথে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক লেনদেনের স্বচ্ছতা ও আনুষ্ঠানিকতা বাড়বে।
তবে তারা সতর্ক করে বলেছেন, ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই ডকুমেন্ট যাচাইয়ে কঠোরতা বজায় রাখতে হবে, যেন কোনো ভুয়া চুক্তি বা অর্থ পাচারের ঝুঁকি না থাকে।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিভিত্তিক আমদানিতে ছাড় প্রদানের এই সিদ্ধান্ত শিল্প খাতের জন্য এক ইতিবাচক পদপে। এটি আমদানির প্রক্রিয়া সহজ করবে, ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি কমাবে এবং দেশের উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্পে নতুন গতি সঞ্চার করবে।