- মেধার মূল্যায়ন চায় কিন্ডারগার্টেনের ৬ লাখ শিক্ষার্থী
- ২০২৪ এর জুলাই পরবর্তী সময়ে বৈষম্য সমীচীন নয়
আইনি জটিলতায় প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে আবারো অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়ার আদেশ দেয়া হলেও এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার পক্ষ তথা মন্ত্রণালয়। ফলে আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদিও গত ৩ নভেম্বর উক্ত বৃত্তি পরীক্ষায় বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে ঐ আদেশের বিরুদ্ধে এখন আপিল করার ঘোষণায় নতুন করে এই আইনি জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ফলে আগামী ডিসেম্বরের পূর্বঘোষিত সময়সূচিতে বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজন করা যাবে কি না, সেটিও এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
এ দিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিগগিরই এ বিষয়ে আপিল করা হবে। জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের গত ১৭ জুলাইয়ের এক স্মারকে শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে- এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর কেরানীগঞ্জ পাবলিক ল্যাবরেটরি স্কুলের পরিচালক মো: ফারুক হোসেনসহ ৪২ জন তা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্টের সমন্বিত বেঞ্চ রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ওই স্মারকের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য স্থগিত করেন। চূড়ান্ত শুনানির পর আদালত ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বেসরকারি শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়ার নির্দেশ দেন।
রায়ে বলা হয়েছে, সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি নি¤œমাধ্যমিক, রেজিস্টার্ড কিন্ডারগার্টেন, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অন্যান্য অনুমোদিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ২১-২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। রায়ের প্রাথমিক ও চূড়ান্ত নির্দেশ অনুসারে ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে মন্ত্রণালয়কে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো রায় গেলে আপিল করতেই হয়। এটি একটি ফরমালিটি। আপিল দাখিলের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বৃত্তি পরীক্ষা নেয়া হয়তো সম্ভব হবে না। ডিসেম্বরের মধ্যে বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে নিয়মতান্ত্রিক সব প্রক্রিয়া শেষ করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অন্য দিকে গত ৩ নভেম্বরে হাইকোর্টের এক আদেশে বৃত্তি পরীক্ষা দেয়ার অধিকার ফিরে পেয়েছিল দেশের কয়েক লাখ কোমলমতি শিক্ষার্থী। যদিও সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই সরকারিভাবে অনুষ্ঠিত বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। কিন্তু এই অযৌক্তিক ও অমানবিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের যুগ্ম মহাসচিব ফারুক হোসেন। রিট পিটিশন নং ১৪৭৩৫/২০২৫। আর এই রিটে পক্ষভুক্ত হয়ে আইনি লড়াইয়ে যুক্ত হন আরো ৪২ জন শিক্ষক। রিট পিটিশনটি দায়ের করে শুনানিতে অংশ নেন বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিয়াজ মোর্শেদ।
অবশ্য শুরু থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় বেসরকারি তথা কিন্ডারগার্টের স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেনের অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। তারা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা: বিধান রঞ্জন রায়ের সাথে সাক্ষাৎ করে এই দাবির বিষয়টিও একাধিকবার তুলে ধরেন তারা। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ রানাও উপস্থিত ছিলেন। ঐ সময়ে কিন্ডারগার্টের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে তাদের দাবি সংবলিত স্মারকলিপি উপদেষ্টার হাতে তুলে দেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো: মিজানুর রহমান সরকার। তিনি বরাবরই বলে আসছিলেন যে আমরা বিশ্বাস করি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আজকের এই শিশুদের হাতেই নির্ভর করছে দেশের আগামী নেতৃত্ব। কাজেই শিক্ষায় দৃশ্যমান সাফল্য বাংলাদেশের একটি বড় অর্জন। আমরা দৃঢ়তার সাথে মনে করি বাংলাদেশের কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ছয় লাখ শিক্ষক দেশের এই অর্জনের অংশীদারও বটে। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী অবদান রেখে আসছে এবং বেকার সমস্যা দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
দেশের চল্লিশ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে প্রায় ৫০ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। মহাসচিব মিজানুর রহমান সরকার আরো বলেন, ২০০৯ সাল থেকে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। তাই চলতি বছর থেকে পুনরায় অনুষ্ঠিতব্য বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণের সুযোগদানের অনুরোধ জানান তিনি। অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, শিক্ষা শিশুদের মৌলিক অধিকার। কোনো শিশুকে তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। জুলাই বিপ্লবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষার্থীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান বৈষম্যবিরোধী সরকার বিধায় বর্তমান সরকারের সময়ে কিন্ডারগার্টেনের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আবার সেই বৈষম্যের শিকার হোক এটা আমরা আশা করি না।



