নির্বাচনে প্রার্থীদের সবুজ সঙ্কেত দেয়া শুরু করেছে বিএনপি। চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই কমপক্ষে ২০০ আসনে কে পাবেন দলের টিকিট, তা প্রাথমিকভাবে জানিয়ে দেয়ার কাজ শেষ করা হবে। তবে জানা গেছে, এটি আনুষ্ঠানিকতার বদলে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দলের দায়িত্বশীলরা নিজ নিজ ব্যক্তিকে জানিয়ে দিতে পারেন। একই সাথে মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রাথমিক সবুজ সঙ্কেত পাওয়াদের ওয়াচে রাখা হতে পারে। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কোনো কোনো সদস্য অভিমত দিয়েছেন, তৃণমূলে বিভ্রান্তি এড়াতে দলীয় এসব প্রার্থিতা ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ ঘোষণা দেয়া হোক। দলের হাইকমান্ডকে এমন পরামর্শ দিয়ে তারা বলেছেন, নইলে নির্বাচনের মাঠে তারা পিছিয়ে পড়বেন।
‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠে না থাকায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকেই বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। জামায়াত এরই মধ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে মাঠে থাকলেও বিএনপি এখনো তাদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত ও ঘোষণা করেনি। তবে প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী প্রচারণায় রয়েছেন। এমন অবস্থায় নির্বাচনের মাঠে বিএনপি যাতে পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্য দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা গত মাসে তাদের প্রতিবেদনে দ্রুততম সময়ে প্রার্থিতা ঘোষণা করতে হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেন। এ ছাড়া দলের তৃণমূল পর্যায় থেকেও এমন পরামর্শ আসে।
জানা গেছে, প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে পাঁচটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও মতামত নিয়েছেন তিনি। সব কিছু বিবেচনায় প্রায় দেড় শ’ আসনে তেমন জটিলতা দেখছে না দল। অর্থাৎ এসব আসনে প্রার্থিতা মোটামুটি নির্ধারিত। তারা একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। তবে একাধিক প্রার্থী এবং প্রবল গ্রুপিং থাকায় শতাধিক আসনকে ‘জটিলতাপূর্ণ’ বিবেচনা করে সঙ্কট নিরসনে সাংগঠনিক উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এর অংশ হিসেবে এসব আসনের প্রার্থীদের কেন্দ্রে ডেকে দল থেকে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেয়া হয়। অন্যথায় ‘কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার’ও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
দলের এই সাংগঠনিক উদ্যোগের পরই মূলত আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি। অবশ্য এ ক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীদের না জানাতে হাইকমান্ড থেকে দেয়া হচ্ছে কঠোর নির্দেশনা। নির্বাচনের তপশিলের পর দলীয় সাংগঠনিক প্রক্রিয়া তথা পার্লামেন্টারি বোর্ডের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত করা হবে। তবে মাঠে একাধিক প্রার্থী সক্রিয় থাকায় এভাবে গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে একজনকে ‘সবুজ সঙ্কেত’ দেয়ায় এবং সে বিষয়টি কেন্দ্র কিংবা দায়িত্বশীল কোনো পর্যায় থেকে খোলাসা না করায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি। এমন অবস্থায় দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সর্বশেষ বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচন সামনে রেখে চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল’ প্রস্তুত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে, সারা দেশে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার যে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে, সেটির অধিকাংশ কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির এবং বর্তমানে জামায়াতপন্থী। এমনটা হলে নির্বাচনে তারা একটা বিশেষ দলকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখতে পারে। এতে করে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই সতর্কভাবে দল-মত নির্বিশেষে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে যাতে এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এ লক্ষ্যে তারা আজ বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সাথে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাবে। এখন থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা চায় বিএনপি।
এছাড়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাথে অনুষ্ঠেয় বিএনপির বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, কিছু কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা ও কার্যক্রমে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণœ হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল-পদায়ন নিয়ে কিছু উপদেষ্টা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন, বিশেষ একটি দলের পক্ষে কাজ করছেন। এসব ঘটনায় বিএনপি উদ্বিগ্ন। এই উদ্বেগের কথা জানাতে এবং একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরতে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করেন।