প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে চলছে প্রতারণা

সড়কের সিনিয়র সচিবের নামে প্রতারণাকারী চক্রটি এখনো ধরা পড়েনি

কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের সদস্যদের ফাঁদ পেতে ধরা সম্ভব হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই চক্রের সদস্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছে।

মনির হোসেন
Printed Edition
দুদক কার্যালয়
দুদক কার্যালয় |সংগৃহীত

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নাম, ছবি ব্যবহার করে প্রতারক চক্র একের পর এক প্রতারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের সদস্যদের ফাঁদ পেতে ধরা সম্ভব হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই চক্রের সদস্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছে।

সর্বশেষ প্রতারক চক্রটি নিজেদেরকে দুদকের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মামলা নিষ্পত্তির নামে প্রতারণা করে আসছিল। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির যে অভিযোগ করেছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় দুই দফায় পাঁচজনকে গ্রেফতারের কথা জানায় সংস্থাটি। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ২৪ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠন হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি ফেসবুক পোস্ট দুদকের নজরে আসে। পোস্টটি আমলে নিয়ে বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এই লক্ষ্যে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন পরিচালকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। র‌্যাব ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সহযোগিতায় শনিবার রাতে প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করে চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে চক্রের মূল হোতা সোহাগ পাটোয়ারী নামে আরো একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ক্যামেরা, ভিজিটিং কার্ড, ব্যাংকের চেক বই, মোবাইল সেট, সিম উদ্ধার করা হয়। দুদকের ডিজি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, প্রতারক চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরেই নিজেদের দুদকের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মামলা নিষ্পত্তির নামে প্রতারণা করে আসছিল।

শুধু দুদক চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক নয়, এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: এহছানুল হকের নাম ও ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। বিষয়টি অবগত হওয়ার পরই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রশাসন শাখার পক্ষে প্রতারক চক্র থেকে সাবধান থাকতে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। কিন্তু এমন সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে গেছে। এখনো ওই চক্রটিকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার তো দূরের কথা, শনাক্ত পর্যন্ত করতে পারেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ১৩ জুন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, একটি প্রতারক চক্র কর্তৃক সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয়ের নাম ও ছবি ব্যবহারপূর্বক বিভিন্ন অপরিচিত নম্বর দিয়ে হোয়াটস অ্যাপ, মোবাইলের মাধমে ফোন করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাওয়া হচ্ছে। চক্রান্তকারী গ্রুপ থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এ ধরনের প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে কোনো আর্থিক লেনদেন না করা বা ব্যক্তিগত আর্থিক তথ্যাদি (এটিএম কার্ড, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড, পিন নাম্বার ইত্যাদি) শেয়ার না করার জন্য বিশেষভাবে সতর্ক করা যাচ্ছে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যার আগে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টার তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা নোবেল দে’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে এই প্রসঙ্গে শুধু বলেন, এমন একটি প্রতারণার ঘটনায় মন্ত্রণালয় থেকে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছিল; কিন্তু এখনো প্রতারক চক্রের সদস্যরা ধরা পড়েছে এমন তথ্য শুনিনি। থানায় কোনো অভিযোগ দেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়টি জানেন না বলে জানান।

তবে মন্ত্রণালয়ের অপর একটি সূত্র নয়া দিগন্তকে জানিয়েছে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নামে প্রতারণার খবরটি প্রথম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিজস্ব হোয়াটস গ্রুপে থাকা দুই-তিনজন কর্মকর্তার মাধ্যমে জানাজানি হয়। তারা বিষয়টি দেখে সচিবকে অবহিত করেন। এরপরই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।

গতকাল সোমবার রাতে এই প্রসঙ্গে জানতে শাহবাগ থানার ওসি মো: খালিদ মনসুরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিবের পক্ষ থেকে থানায় এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অভিযোগ পাইনি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে হোয়াটস গ্রুপে প্রতারণাসংক্রান্ত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সেটি জিডি হিসেবে গ্রহণ করে সাইবার ক্রাইম ডিভিশনে পাঠিয়ে দিয়েছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রতারক চক্র মূলত হোয়াটস গ্রুপ খুলে নানা কৌশলে প্রতারণার চেষ্টা করে থাকে। যোগ করেন ওসি খালিদ মনসুর।