তারেক নূর জাকিরী, বিপিটি, ডিএমটি (পিটি)
ব্যথা কমানোর বেশ প্রচলিত একটি চিকিৎসাপদ্ধতি হলো ঠাণ্ডা ও গরম সেঁক দেয়া। এই দুটি পদ্ধতিই ব্যথা কমাতে বেশ কার্যকরী। কিন্তু কোন ব্যথায় কোন ধরনের সেঁক দেবেন, সেটা জানা জরুরি। চলুন জেনে নেয়া যাক কোন ব্যথায় কী ধরনের সেঁক দেয়া উচিত।
কোল্ড থেরাপি বা ঠাণ্ডা সেঁক : কোল্ড থেরাপি বা ঠাণ্ডা সেঁক মূলত আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে রক্তনালী সংকোচনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয়। এর ফলে রক্তপাত, ফোলা ও ব্যথা কমে যায় এবং আক্রান্ত স্থানের টিস্যুগুলো ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা পায়। স্পোর্টস ইনজুরি, মচকে যাওয়া বা আঘাতের ক্ষেত্রে কোল্ড থেরাপি বা ঠাণ্ডা সেঁক খুবই উপকারী। যেকোনো স্থানে আঘাত বা ব্যথা পাওয়ার প্রথম ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোল্ড থেরাপি বা ঠাণ্ডা সেঁক দিতে হবে, এই সময় গরম সেঁক দেয়া উচিত নয়।
যেসব স্থানে কোল্ড থেরাপি বা ঠাণ্ডা সেঁক দেয়া যেতে পারে
অ্যাকিউট ইনজুরি বা আঘাত পাবার প্রথম ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে।
ইনফ্লামেশন বা প্রদাহজনিত ব্যথা যদিও হোক সেটি পুরোনো ব্যথা বা ক্রনিক পেইন (প্রদাহজনিত ব্যথা চেনার উপায় : ব্যথার স্থানে চাপ দিলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া, ফোলা, লাল হয়ে থাকা, স্থানটি উষ্ণ-গরম হয়ে থাকলে)
সফট টিস্যু ইনজুরি ও পরবর্তী প্রদাহজনিত ব্যথা (যেমন : স্প্রেইন, স্ট্রেইন, টেনডিনাইটিস, বারসাইটিস)
ব্যথার জয়েন্ট ফোলা থাকলে বা জয়েন্টে ফ্লুইড থাকলে। পুরোনো ব্যথায় বা ক্রনিক পেইনে নতুন করে আঘাত পেলে।
মাইগ্রেনজনিত মাথা ব্যথায়।
অ্যাকিউট মাসল স্প্যাজম বা আকস্মিক টানজনিত পেশির শক্তভাব।
অ্যাথলেটদের এক্সারসাইজ বা জিমের পরে ব্যথার স্থানে। জ্বরের তীব্রতা কমাতে ঠাণ্ডা সেঁক বেশ উপকারী।
কোল্ড থেরাপি বা ঠাণ্ডা সেঁক দেয়ার নিয়ম ও সতর্কতা : আইস কিউব বা আইস প্যাক ব্যথা জায়গায় ধরে রাখতে পারেন বা ধীরে ধীরে ঘষতে পারেন। তবে আইস বার্ন প্রতিরোধ করতে ত্বক ও বরফের মাঝখানে যে কোন লোশন, তেল, জেল বা একটি পাতলা তোয়ালে ব্যবহার করুন।
ব্যথা বা অবস্থার ওপর নির্ভর করে একবারে ১০-১৫ মিনিট করে দিনে ৪-৫ বার দেয়া যেতে পারে। ক্ষতস্থানে সরাসরি ঠাণ্ডা বা বরফ প্রয়োগ করা যাবে না। অনুভূতিহীন বা সংবেদনশীল ও ভাসকুলার সমস্যায় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
গরম সেঁক বা হট কম্পেশন: ব্যথার স্থানে গরম সেঁক দিলে সেখানকার রক্তনালীর প্রসারণ ঘটে এবং সেখানে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায় ফলে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ে। তাতে ব্যথা দ্রুত কমে যায় এবং আক্রান্ত স্থানটির সেরে ওঠার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। সাধারণত পুরোনো ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় গরম সেঁক খুবই কার্যকর। গরম সেঁক পেশি শিথিল ও নমনীয় করতে এবং ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে।
যেসব ক্ষেত্রে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে :
পুরোনো ও দীর্ঘমেয়াদি ঘাড়, কোমর ও হাঁটু ব্যথা।
ব্যথার কারণে মাংসপেশি টাইট বা শক্ত হয়ে যাওয়া (ক্রনিক মাসল স্পাজম বা টাইটনেস)
হাড় ও জোড়ার ডিজেনারেটিভ কন্ডিশন (যেমন : অস্টিওআর্থ্রাইটিস, সারভাইক্যাল-লামবার স্পন্ডাইলোসিস)
ঘাড়ের পেশি শক্ত হবার কারণে মাথায় ব্যথায় ঘাড়ে গরম সেঁক দেয়া যেতে পারে।
অপারেশন বা প্লাস্টার পরবর্তী মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধির স্টিফনেস বা শক্তভাব-জড়তা কাটাতে।
পিরিয়ডের ব্যথা ও পেটের ব্যথায় গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে।
অ্যাথলেটদের এক্সারসাইজ বা ভারী কাজ করার পূর্বে হট শাওয়ার নেয়া উচিত। এর ফলে শরীরের পেশিগুলো শিথিল হয়, নমনীয়তা ও রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়।
গরম সেঁক বা হট কম্পেশন দেয়ার নিয়ম ও সতর্কতা : সাধারণত হিটিং প্যাড, হট ওয়াটার ব্যাগ, তোয়ালে বা কাপড় ভিজিয়ে চিপে আক্রান্ত স্থানে গরম সেঁক দেয়া হয়। একবারে ১০-১৫ মিনিট করে দিনে ২-৩ বার দেয়া যেতে পারে।
হালকা বা সহনীয় গরম সেঁক দিতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত গরম সেঁক দেয়া যাবে না।
গরম সেঁক দেয়া অবস্থায় ঘুমানো যাবে না।
গরম সেঁকের (হিটিং প্যাড, হট ওয়াটার ব্যাগ) উপর শোয়া যাবে না।
স্নায়বিক দুর্বলতা বা অনূভুতিহীন (যেমন ডায়াবেটিক) সমস্যায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
উচ্চরক্তচাপ ও ভাসকুলার রোগীদের গরম সেঁক দেয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ইমেজিং সেন্টার
ইমেইল : ঃধৎবয়হঁৎুধশরৎু@মসধরষ.পড়স



