২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া আওয়ামী লীগ আবারো দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে পাল্টা সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এমন আশঙ্কা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ভারতের দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় বাংলাদেশের ভেতরে নাশকতা, বিশৃঙ্খলা ও ‘তৃতীয় শক্তির’ আবির্ভাব ঘটিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তোলার পরিকল্পনা করছেন।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় গত সোমবার রাতে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কয়েক শ’ পৌর মেয়রের সাথে অনলাইনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। একইভাবে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সাবেক এমপিদের সাথেও পর্যায়ক্রমিক বৈঠক হচ্ছে। এরই মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কিছু গোপন নির্দেশনাও পৌঁছে গেছে বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপড়েন, এনসিপি-বিএনপি দ্বন্দ্ব এবং ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ একটি ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ছক আঁকছে। ৫ আগস্টকে সামনে রেখে ‘চূড়ান্ত নির্দেশনা’ দেবেন শেখ হাসিনা এমন আভাসও মিলেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রগুলো বলছে, এই পরিকল্পনায় রাজনৈতিকভাবে বিতাড়িত কিছু সাবেক আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সম্পৃক্ত, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থেকে শেখ হাসিনার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘দ্বিতীয় দফা প্রতিশোধমূলক নাশকতার’ পরিকল্পনায় সহায়তা করছেন।
পাহাড়েও অস্থিতিশীলতা তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সন্তু লারমা চিকিৎসার অজুহাতে ৫ আগস্টের আগেই ভারত গমনের ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাহাড়ে সঙ্ঘাত উসকে দিয়ে সামরিক হস্তক্ষেপকে টেনে আনার পরিকল্পনা থাকতে পারে। এমন অভিযোগে সেনাবাহিনীকে সাবধান থাকতে বলছেন পর্যবেক্ষকরা।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনার মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে। ভারতে বসে থেকে সে দেশেই ষড়যন্ত্র করছে। তারা কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। সরকারকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে, যেন ফ্যাসিবাদী দোসররা দেশকে নতুন বিপদের দিকে ঠেলে না দেয়।’
তিনি পাহাড় ইস্যু নিয়েও বলেন, ‘সন্তু লারমারাই শান্তির নামে অশান্তি তৈরি করে আসছেন। বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হলেও শক্ত অবস্থান না নিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।’
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটি প্রথমে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’-এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার উৎখাতের চেষ্টা করে। পরে গ্রাম পুলিশ, আনসার, শ্রমিক, চাকরিজীবী, সচিবালয় কর্মী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সময় অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে।
সম্প্রতি গোপালগঞ্জ ও সচিবালয়ের কিছু ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ৫ আগস্ট সামনে রেখে দেশ এখন এক উত্তপ্ত সপ্তাহের মুখোমুখি। সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী ও জনসাধারণের সর্বোচ্চ সতর্কতা ছাড়া পরিস্থিতি আরো খারাপ দিকে যেতে পারে।