অফশোর ব্যাংকিংয়ে পাচার হওয়া অর্থের খোঁজে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট

এস আলম ও বেনামী ৫১ প্রতিষ্ঠানের ৮ বছরের লেনদেনের তথ্য তলব

আশরাফুল ইসলাম
Printed Edition

অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের খোঁজে নেমেছে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম নিজ নামে ও বেনামী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাড়ে আট বছর কী পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে তার তথ্য তলব করেছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত এস আলম সংশ্লিষ্ট ৫১টি প্রতিষ্ঠানের অফশোর ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের তথ্য তলব করেছে সংস্থাটি। আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট থেকে বিশেষ পরিদর্শন দলকে এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করতে ইসলামী ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে বেনামে চট্টগ্রামের বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। যার বেশির ভাগ অর্থই পাচার করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রমাণও পাওয়া গেছে। শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকেই নয়, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক থেকেও অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচারের তথ্য রয়েছে। এ বিষয়ে নামে বেনামে কতগুলো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ বের করে নিয়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য বের করতেই আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিশেষ তদন্ত শুরু করেছে।

তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম ও তার পরিবার নিয়ন্ত্রণাধীন ২২টি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে। অপরদিকে ইসলামী ব্যাংকের আরো ২৯টি বেনামী প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে, যার মাধ্যমে ঋণ নিয়ে অর্থ পাচার করা হয়েছে। এস আলম ও তার পরিবারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন ২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬টি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার, বাকিগুলো গুলশান সার্কেল-১ ও পাহারতলী শাখার গ্রাহক ছিল।

বেনামী ২৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দু’টি কাকরাইল, ১১টি রাজশাহী, দু’টি জুবলি রোড, বাকিগুলো খাতুনগঞ্জ, চকবাজার, পাবনা, গুলশান-১, আমিন বাজার, রাজশাহী নিউমার্কেট, নাটোর ও আন্দরকিল্লা শাখার গ্রাহক। এসব শাখা থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে অর্থ বের করে নেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই অর্থ আর পরিশোধ করেনি এস আলম। ফলে এসব ঋণ এখন বিশেষ ঋণ হিসেবে সমন্বয় করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইসলামী ব্যাংক এস আলমের কোনো পণ্য আমদানির জন্য বিদেশী কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়েছিল। অফশোর ব্যাংকিংয়ের শর্ত হলো, সংশ্লিষ্ট পণ্য দেশে আসার পর তা বিক্রি করে এস আলমকে ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু বিদেশী ঋণের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক এস আলমের জন্য পণ্য এনেছে, দেশে বিক্রিও করা হয়েছে। কিন্তু বিপরীতে ইসলামী ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করেনি। এভাবে বছরের পর বছর এসব ঋণ অনাদায়ী রেখেছে। তবে বেশির ভাগ সময় ঘোষিত পণ্য দেশে আনা হয়নি। বিদেশী এস আলমের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ দেখানো হয়েছে। পণ্য দেশে না হলেও ইসলামী ব্যাংককে বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধ করতে হয়েছে। এভাবে ভয়াবহ জালজালিয়াতির মাধ্যমে অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য হাতে পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্যই আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এখন মাঠে কাজ করছে।