স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাই এ মুহূর্তে পুঁজিবাজারের বড় চ্যালেঞ্জ

Printed Edition

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো: সাইফুদ্দিন সিএফএ বলেছেন, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতাই এ মুহূর্তে পুঁজিবাজারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কোম্পানিগুলো থেকে তথ্য পাওয়া বিনিয়োগকারীদের অধিকার। কিন্তু তথ্য প্রকাশে স্বচ্ছতা এখনো বাজারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ যা বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির কারণ হয়ে আছে।

বুধবার (৮ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে হাইব্রিড পদ্ধতিতে ‘ঊসঢ়ড়বিৎরহম ওহাবংঃড়ৎং ঃযৎড়ঁময ঊসবৎমরহম ঞবপযহড়ষড়মু ধহফ উরমরঃধষ ঋরহধহপব’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহ ২০২৫ এর ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

ডিবিএর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম ও সিএসইর চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিএসইর সহকারী মহাব্যবস্থাপক কামরুন নাহার।

স্বাগত বক্তব্যে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান জানান, বিশ্বের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়কারী ও তাদের বৈশ্বিক মান নিরূপণকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনের (আইওএসসিও) আহবানে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরা ও বিনিয়োগ সচেতন করতে নবম বারের মতো ৬-১২ অক্টোবর ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০২৫’ ঘোষণা করেছে। বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহের প্রচারণায় এ বছর আইওএসসিও তিনটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে: ১. প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ফাইন্যান্স ২. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং ৩. জালিয়াতি ও কেলেঙ্কারি প্রতিরোধ। ৬ অক্টোবর বিএসইসি কার্যালয়ে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টেকহাল্ডারদের অংশগ্রহণে ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০২৫’ এর উদ্বোধন করেন বিএসইসি কার্যালয়ে। বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।

আসাদুর রহমান আরো বলেন, এই সপ্তাহটি বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের শিা ও সুরা প্রচার এবং বিনিয়োগ শিা বৃদ্ধি করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। আমরা আমাদের বাজারে স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই। সুশাসন ও জবাবদিহিতার মান বজায় রাখতে এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো আরো শক্তিশালী করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর ফলে আমাদের বিনিয়োগকারীরা তাদের লেনদেনে নিরাপদ বোধ করবে এবং বিনিয়োগে আত্মবিশ্বাসী হবে।

সেন্ট্রাল ডেপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো: আব্দুল মোতালেব চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে উদীয়মান প্রযুক্তির ব্লকচেইন ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মতো উদ্ভাবনী বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে। সিডিবিএল ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বেশ কিছু কার্যক্রম চালু করেছে, যার মধ্যে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য বিনিয়োগকারীদের ই- মেইল ও মোবাইল নম্বরে প্রেরণ অন্যতম।

তিনি যোগ করেন, বিনিয়োগকারীদের নাম, ব্যাংক হিসাব, মোবাইল নম্বর বা ই-মেইল পরিবর্তনের তথ্যও বার্তার মাধ্যমে জানানো হয়। এমনকি বিও হিসাব বন্ধ হলেও সংশ্লিষ্ট তথ্য বিনিয়োগকারীরা পান। তবে এই সেবা উপভোগের জন্য সঠিক মোবাইল নম্বর ও ই- মেইল ঠিকানা প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করেন, তাদের যোগাযোগের তথ্য ও টিআইএন নম্বর হালনাগাদ রাখতে, কারণ উৎসে করের েেত্র টিআইএনধারীরা ছাড়ের সুবিধা পান। তিনি আরো বলেন, মোবাইল অ্যাপে শেয়ারবাজারের সংবাদ যুক্ত থাকবে, যাতে বিনিয়োগকারীরা আপডেট থাকতে পারেন। এসব সুবিধা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিও অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে সবসময় অবগত থাকবেন ও উপকৃত হবেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিবিএ- প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, অগ্রসরমান প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ফাইন্যান্স বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মতায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সচেতন ও তথ্যসমৃদ্ধ বিনিয়োগকারীই একটি টেকসই, স্বচ্ছ ও কার্যকর বাজার গঠনের মূল চালিকাশক্তি। বর্তমানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ দ্রুত বাড়ছে এবং ডিজিটাল ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বিনিয়োগকে আরো সহজ করেছে। তবে এখনো অনেক বিনিয়োগকারী রিয়েল-টাইম তথ্যের সীমিত প্রাপ্যতা, আর্থিক পণ্যের জটিলতা, কম আর্থিক সারতা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ভুল তথ্য ও প্রতারণার ঝুঁকির মুখে রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, ডাটা অ্যানালিটিক্স ও রোবো-অ্যাডভাইজরের মতো উদীয়মান প্রযুক্তি পুঁজিবাজারে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এসব প্রযুক্তি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তকে তথ্যভিত্তিক ও নিরাপদ করছে, একই সাথে বাজারে স্বচ্ছতা ও দতা বৃদ্ধি করছে।

প্রধান অতিথি বিএসইসির কমিশনার মো: সাইফুদ্দিন বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে একটি সম্পূর্ণ ইনভেস্টমেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হলে আমরা এখন কোথায় আছি, তা স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমাদের বর্তমান অবস্থা, কাঠামোগত ঘাটতি এবং জবাবদিহিতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করা জরুরি। তথ্য প্রকাশে স্বচ্ছতা এখনো বাজারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ যা বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বড় ভোগান্তির কারণ ।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের প্রযুক্তিগত কাঠামোয় রয়েছে এক্সচেঞ্জ ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারগণ যেমন সিডিবিএল, সিসিবিএল ইত্যাদি। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এখনো যথাযথ যোগাযোগ ও সমন্বয়ের অভাব আছে। এখন সময় এসেছে সব প্রতিষ্ঠানের একসাথে সমন্বয় করে কাজ করার।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে পুঁজিবাজারে নতুন নতুন প্রোডাক্ট আসছে। সাথে সাথে পুঁজিবাজারে দতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা প্রযুক্তিতে বড় বড় বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু সেখান থেকে সুফল খুব ভালোভাবে পাইনি। একটা বড় কারণ হলো পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারের টেকনোলজি আর্কিটেক্ট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগকারীদের সুরার জন্য বিভিন্ন পদেেপর জন্য যদি অবাধ তথ্যপ্রবাহ না থাকে তবে প্রযুক্তির মাধ্যমে যেসব পদপে নেয়া প্রয়োজন তার অনেক কিছু সিস্টেম ধরতে পারছে না। এ জন্য অনেক অনিচ্ছাকৃত ননকমপ্লায়ান্স হচ্ছে। এেেত্র আমাদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ফাইন্যান্সিয়াল প্রোডাক্ট নির্ভর করে তার আন্ডারলাইন অ্যাসেটের ওপর। ডিএসইর প্রোডাক্টগুলোর অধিকাংশই হলো ইক্যুইটি। এখানে কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশের তথ্য সঠিকভাবে আসছে না। সে েেত্র পুরো দেশের ইকোসিস্টেম পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। আমাদের কার্যক্রমগুলোকে টেকনোলজি ব্যবহার করে ডিজিটালাইজ করতে পারলে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। সে েেত্র শুধু পুঁজিবাজার নয়, ব্যাংকিং খাত ও রাজস্ব আদায়সহ আরো সব েেত্র দতা বৃদ্ধি করে অর্থনীতিকে আরো দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।