এনসিটিবির অর্থ লোপাটকারী প্রেস মালিকদের তালিকা হচ্ছে

বই মুদ্রণের দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দেয়ার চিন্তা

শাহেদ মতিউর রহমান
Printed Edition

বিগত বছরগুলোতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণে অনিয়ম করেছে কিংবা বইয়ের কাগজের মান খারাপ ছিল এমন প্রেসের তালিকা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই সাথে এসব প্রেসকে চলতি বছরে কোনো কাজ না দেয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সাথে সিন্ডিকেট করে বইয়ের দাম বাড়িয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দেয়ার যে অভিনব ফাঁদ কিছু প্রেস মালিক করেছিল সেটিও এবার ভেস্তে গেছে। কেননা মাধ্যমিকের অধিকাংশ বই ছাপার কাজের টেন্ডারও ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। এখন নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। তবে এই তালিকায় কোনো অভিযুক্ত প্রেস যাতে সুযোগ না পায় সে জন্য গোপনে একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে।

সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পরিদর্শন টিম গঠন করা হয়েছে। তারা গোপনে গোপনে বিভিন্ন প্রেসের তথ্য যাচাই-বাছাই করছে।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর বই মুদ্রণের পর্যাপ্ত সময় হাতে না থাকায় অনেক প্রেস আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পার হয়ে গেছে। তবে সব প্রেসের তথ্যই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। এবার যাতে কোনো দুর্বল প্রেস বা অনিয়মের জড়িত থাকায় অভিযুক্ত প্রেস বই মুদ্রণের কাজ না পায় সে জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখছে এনসিটিবি ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ দিকে গত মাসে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল-মাদরাসা এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যবই মুদ্রণের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। সেখানে এখন নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করে যোগ্য এবং আগের বছরগুলোতে ভালো পারফম্যান্স করেছে এমন প্রেসগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আওয়ামী আমলে আইনের তোয়াক্কা না করে যেসব প্রেস সক্ষমতার বেশি বই ছাপার দায়িত্ব নিয়েও সময় মতো শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারেনি তাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এবার তাদের বাদ দেয়া হবে।

অন্য দিকে ২০১৮ সালের পরে অনেক প্রেস সরকার তথা তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সাথে আঁতাত করে নিম্ন মানের কাগজে বই ছেপে শত শত কোটি টাকা লোপাট করেছে এমন অনেক প্রেসের বিষয়েও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আওয়ামী আমলে এমন দু-একটি প্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তারা বই না ছেপেই এনসিটিবি থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। একটি প্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে যে, তারা কয়েক লাখ বই না ছেপে কিংবা শিক্ষার্থীদের হাতে বই না পৌঁছিয়েই দুই কোটি টাকার বেশি এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশে লোপাট করেছে। এমন প্রতিষ্ঠানও এবার বিনামূল্যের বই ছাপার কাজ বাগিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে। তবে তদন্ত চলমান থাকায় অনেক প্রেসের নাম এখনই প্রকাশ করছে না এনসিটিবি।

এ বিষয়ে গতকাল রোববার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, গত বছর বই ছাপানোর ক্ষেত্রে যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে চলতি বছর তাদেরকে বই ছাপার কাজ দেয়া হবে না। মাধ্যমিক স্তরে সরকারের দেয়া বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে নানা অভিযোগ রয়েছে। নিম্ন মানের কাগজে ছাপানো এসব বইয়ে ছিল ভুল আর বিভ্রান্তিকর বিভিন্ন তথ্য। আশা করি, আগামী শিক্ষাবর্ষে জানুয়ারি মাসেই শিক্ষার্থীরা নতুন পাঠ্যবই হাতে পাবে। অপর দিকে এনসিটিবির সচিব অধ্যাপক মো: সাহতাব উদ্দিন বলেছেন, এবারের পাঠ্যবইয়ের মান ভালো করার জন্য শিক্ষা উপদেষ্টার একান্ত সচিব এ কে এম তাজকির উজ জামান চেষ্টা করছেন। তিনি কাজের ক্ষেত্রে সবসময় আন্তরিক। এনসিটিবি সূত্র আরো জানায়, বিনামূল্যে বিতরণের জন্য পাঠ্যবই নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে নানা অভিযোগ রয়েছে। নিম্ন মানের কাগজে ছাপানো এসব বইয়ে ছিল ভুল আর বিভ্রান্তিকর বিভিন্ন তথ্য। সমালোচনার মুখে কয়েকটি বই প্রত্যাহারও করা হয়।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এসব বই মুদ্রণ ও বিতরণসহ সব কাজের তদারকির দায়িত্বে।

সূত্র জানায়, গতকাল রোববার ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির ৩৭তম সভায় নতুন শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিকের নবম ও দশম শ্রেণীর বইয়ের দরপত্র অনুমোদনের প্রস্তাব উপস্থাপন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

সম্প্রতি এক কর্মশালায় শিক্ষা উপদেষ্টার একান্ত সচিব এ কে এম তাজকির উজ জামান বলেছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের হাতে যেন কোনো প্রকারের ভুল বই না পৌঁছায়, সে জন্য শিক্ষা উপদেষ্টা এনসিটিবিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।