পুশইনের পর ঢাকায় ঘুরছিলেন ৬ ভারতীয়

ওই ছয়জন ঢাকায় তাদের দূরসম্পর্কের আত্মীয়স্বজনদের বাসায় কিছুদিন অবস্থান নেয়। সেখান থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর এলাকায় গিয়ে কাজ শুরু করেন। পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে ওই ছয়জনকে আটক করে।

এস এম মিন্টু
Printed Edition
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আটক ছয় ভারতীয় নাগরিক
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আটক ছয় ভারতীয় নাগরিক |নয়া দিগন্ত
  • ছয়জনকে ফিরিয়ে নিতে কলকাতায় স্বজনদের মামলা
  • বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে গুরুত্ব পাবে পুশইন

গত ২৫ জুন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুসহ ছয়জন ভারতীয় নাগরিককে কুড়িগ্রামের এক সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক পুশইন করে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এরপর ওই ছয়জন ঢাকায় তাদের দূরসম্পর্কের আত্মীয়স্বজনদের বাসায় কিছুদিন অবস্থান নেয়। সেখান থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর এলাকায় গিয়ে কাজ শুরু করেন। পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে ওই ছয়জনকে আটক করে। এরপর মামলা দিয়ে গত শুক্রবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে নারী শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জোরপূর্বক পুশইন করছে বিএসএফ। এই সংখ্যা প্রায় দুই হাজার দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ১২৬ জনই ভারতীয় নাগরিক। সবার কাছে আধার কার্ড ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট থাকলেও তাদের সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে জোরপূর্বক পুশইন করছে বিএসএফ। নিজ দেশের নাগরিকদের সাথে এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন আটকদের স্বজনরা।

এ প্রেক্ষাপটে আগামীকাল থেকে তিন দিনব্যাপী সীমান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে। ২৫ থেকে ২৮ আগস্ট দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক হবে। অবৈধ পুশইন বন্ধ ও সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার বিষয়ে জোর আলোচনা হওয়ার কথা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে যে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে, সেই ঘটনার সূত্রপাত্র দুই মাস হলেও আটকের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মানুষ ও প্রশাসনের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তারা ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও সীমান্ত পেরিয়ে কিভাবে ঢাকায় গেলেন এবং সেখান থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কিভাবে ফিরলেন?

ভারতের এমন ন্যক্কারজনক ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। তাদের ফিরিয়ে নিতে এরই মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন আটকদের স্বজনরা। ভারতীয় আটকদের মধ্যে রয়েছেন, দিল্লির সাহেবাবাদ গ্রামের মো: দানেশ (২৮), তার স্ত্রী মোছাঃ সোনালি খাতুন (২৬) এবং ছেলে মো: সাব্বির শেখ (৮)। সোনালি খাতুন বর্তমানে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মুরারাই থানার ধিতরা গ্রামের মোছা: সুইটি বিবি (৩৩) ও তার দুই ছেলে মো: কুরবান দেওয়ান (১৬) এবং মো: ইমাম দেওয়ান (৬)।

গত বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পৌরসভার আলিমনগর ভুতপুকুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ওই ছয় ভারতীয় নাগরিককে আটক করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মনতাজুর রহমান হাকুর হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাদের আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে ভারতীয় আধার কার্ড ও নাগরিকত্ব প্রমাণের নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

আটকদের বরাত দিয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২৪ জুন দিল্লির কালীমাতা থানা পুলিশ আধার কার্ড ও অন্যান্য ভারতীয় প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও তাদের বাংলাদেশী নাগরিক সন্দেহে আটক করে। পরদিন ২৫ জুন বিএসএফ তাদের কাছ থেকে সব কাগজপত্র রেখে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুসহ সবাইকে কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে জোরপূর্বক পুশইন করে।

আটকৃতদের ভারতীয় পরিবারের দাবি, তারা সবাই ভারতীয় নাগরিক। তাদের ফেরত আনার বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলছে।

গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) রেজাউল করিম নয়াদিগন্তকে বলেন, অসম সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে পুশব্যাক করা হয়েছিল তাদের। সেখান থেকে ঢাকায় যান তারা। গত জুলাই মাসের শেষ দিকে তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান করছিলেন। তাদের মোবাইলে ভারতীয় নথি উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত সবাইকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীকে এভাবে পুশইন করা কেবল অমানবিকই নয়, এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিএসএফের এই আচরণে ভারতের পুশইন নীতি নিয়ে আবারো নিন্দার ঝড় উঠেছে।