অক্টোবরের মধ্যে দল ও জোটের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে চায় বিএনপি

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই-সংগ্রাম বিশেষ করে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত ত্যাগী, সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, এলাকায় জনপ্রিয় ক্লিন ইমেজধারীরা প্রাধান্য পাবেন। এই বিবেচনায় মনোনয়নে এবার ‘চমক’ আসতে পারে।

বিশেষ সংবাদদাতা
Printed Edition

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থী চূড়ান্তে জোর তৎপরতা শুরু করেছে বিএনপি। অবশ্য তিন শ’ সংসদীয় আসনের মধ্যে দেড় শ’ আসনের প্রার্থিতা নিয়ে তেমন ভাবছে না দলটি। হাইকমান্ড মনে করছেন, এসব আসনে দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে তেমন সমস্যা বা জটিলতা নেই। এই আসনগুলোর প্রার্থীরা মোটামুটি নির্ধারিত। বাকি দেড় শ’ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা নিয়ে ‘সিরিয়াস ওয়ার্ক’ করছে বিএনপি। এর মধ্যে পঞ্চাশটির মতো আসন ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের জন্য ছাড়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে দলটির। আগামী মাসের মধ্যে দল ও জোটের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে চায় বিএনপি।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রার্থী চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান।

বিএনপি সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচনে দেড় শ’ আসনের যেসব প্রার্থী নির্ধারিত, তারা ওই নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করেন। তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন কিংবা বয়োবৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন, সেখানে নতুন প্রার্থীকে দল মনোনয়ন দিবে। এ ছাড়া বাকি দেড় শ’ আসনের মধ্যে শতাধিক আসনেও নতুন প্রার্থী আসবে। এ ক্ষেত্রে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই-সংগ্রাম বিশেষ করে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত ত্যাগী, সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, এলাকায় জনপ্রিয় ক্লিন ইমেজধারীরা প্রাধান্য পাবেন। এই বিবেচনায় মনোনয়নে এবার ‘চমক’ আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে সারা দেশে শতাধিক তরুণ প্রার্থীর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে পারে। মনোনয়নের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত না হলেও তরুণ প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

হিন্দু সম্প্রদায় যাতে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘেœ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করতে পারে, সেজন্য অতীতের মতো এবারো তাদের পাশে থাকবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে গত ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মনিটরিং টিম গঠন করেছে বিএনপি; যেখানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রধান সমন্বয়ক এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে দল থেকে এ ব্যাপারে জেলা ও মহানগর নেতাদের ব্যাপক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আসন্ন দুর্গাপূজায় যাতে কেউ বিশেষ করে পতিত স্বৈরাচারের অনুচরেরা কোনো প্রকার অপ্রীতিকর কিংবা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার চক্রান্ত করতে না পারে, সেজন্য সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা সার্বক্ষণিক সতর্ক ও সজাগ দৃষ্টি রাখবে। এ লক্ষ্যে জেলা সদর ও মহানগর এবং জেলা ও মহানগরের অধীন প্রত্যেক উপজেলা-থানা-পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে পূজামন্দির-মণ্ডপের জন্য পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য এবং বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে দিনরাত পাহারার ব্যবস্থা করবে। এই বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং টিমের সদস্যদের সতর্ক থেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েকটি অভিন্ন দাবিতে ইতোমধ্যে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সাতটি রাজনৈতিক দল। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিও নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় দলটি এখন থেকেই দেশে নির্বাচনী ঢেউ তুলতে চায়। আর এই কাজটি দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পৃক্ত করেই করতে চান নীতি-নির্ধারকরা। জনগণকে নির্বাচনমুখী করতে তারা মানুষের ঘরে ঘরে অর্থাৎ ‘ডোর টু ডোর’ যাবেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এ কাজে পুরুষের পাশাপাশি ব্যাপক পরিসরে দলের মহিলা নেতাকর্মীদেরও সম্পৃক্ত করবেন। কেন আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন প্রয়োজন; নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগও পিছিয়ে যাবে, যে ভোটাধিকারের জন্য তারা ১৬-১৭ বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছে- বিএনপির পক্ষ থেকে এই বিষয়গুলো তাদের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। একইসাথে বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফার প্রচারণাও চালানো হবে। বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে এই ৩১ দফার ভিত্তিতে যে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, সেই প্রতিশ্রুতিও দেয়া হবে।

সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির রাজনীতিবিদরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাদের সাথে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এমন ধরনের ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তারা এসব কর্মকাণ্ডের নিন্দাও জানান। স্থায়ী কমিটির অভিমত, এয়ারপোর্টের ঘটনা- এটা আওয়ামী লীগের চিরাচরিত চরিত্র। এই ঘটনায় তারা যে সন্ত্রাসী দল, সেটা আবার প্রমাণ করেছে। তারা অন্যায়-অপশাসন ও গণহত্যার জন্য যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা করে না- সেটাই প্রমাণ করেছে।

সম্প্রতি ভারতের একটি গণমাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। জানা যায়, এ প্রসঙ্গটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব তার বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেটি ডাহা মিথ্যা ও মনগড়া। তার এ বক্তব্যের সাথে স্থায়ী কমিটি একমত পোষণ করে। তা ছাড়া বিএনপি মহাসচিব প্রকাশিত বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন। এই ইস্যুতে দল তার পাশেই রয়েছে বলে জানা গেছে।