জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউটশন।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ উপস্থাপনের পর গতকাল বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ অভিযোগ আমলে নেয়ার আদেশ দেন। সেই সাথে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১৬ জুন দিন ধার্য করেন। এই মামলার আসামিদের গ্রেফতার করে ওইদিন আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ট্রথ্যাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও মো: আবদুস সোবহান তরফদার শুনানি করেন। এ সময় অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। গতকাল ট্রথ্যাইব্যুনালের এই বিচারিক কার্যক্রম বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সে প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই শেষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে কাল ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরো দু’টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
দেশের ইতিহাসে বিচারকাজ প্রথম সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে : দেশের ইতিহাসে প্রথমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ দেখা যাচ্ছে সরাসরি বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) পর্দায়। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিচারকাজ সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের অনুমতিসাপেক্ষে বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে এ বিচার কার্যক্রম। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেইজেও সরসারি সম্প্রচার করা হচ্ছে। একই সাথে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফেসবুক পেইজেও লিংক শেয়ার করে এ বিচার সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে। এদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ১৩৪ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে উপস্থাপন করেন।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা হলেন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের নিউক্লিয়াস। হাসিনা ছিলেন সব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনকারীদের প্রাণভোমরা। এ দিকে গত ২০ মে ট্রাইব্যুনালের বিচারকক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তি স্থাপনের কাজ শেষ করা হয়। এর ফলে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে বিচার কার্যক্রম সরাসরি কিংবা ধারণ করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা যাবে বলে ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আইনজীবীরা বলছেন, সরাসরি সম্প্রচারে বিচারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। এমন উদ্যোগকে বিচার বিভাগের নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলছেন তারা।