প্রকৃতির নিয়মেই পড়ছে শীত। দেশের কিছু কিছু জায়গায় হালকা-কুয়াশা পড়া শুরু হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার শীত একটু দেরিতে শুরু হয়েছে। গত বছর ১৩ ডিসেম্বর দেশের কয়েকটি স্থান মৃদু শৈত্যপ্রবাহের আওতায় থাকলেও এবার ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। ঢাকায় কাঠামোগত কারণে শীত পড়তে একটু দেরি হচ্ছে তবে দেশের পূর্ব, উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে শীতের মাত্রা ঢাকার চেয়ে তুলনামূলক বেশি। দেশের সবচেয়ে শীতলতম স্থান তেঁতুলিয়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গার মতো এলাকায় এখন বেশ শীত। দিনের বেলাও মোটা কাপড় পরে বাইরে বের হতে হয়।
ইঞ্জিন চালিত প্রচুর যানবাহন, গায়ে গায়ে লাগানো বাড়ি, সবুজ কম কিন্তু পিচঢালা পথ অনেক বেশি এবং এখনো বেশ কিছু কল-কারখানা ঢাকায় থাকার কারণে সারা দিনের তাপ রাতের অনেক সময় পর্যন্ত ঠাণ্ডা হয় না। সে কারণে শীতের মাত্রা ঢাকায় কম। তবে আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির জানিয়েছেন, প্রতি বছরই এমন ঘটনা ঘটে যে ঢাকায় শীত পড়ে অনেক পরে। এবারো এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে আগামী ২১ ডিসেম্বর থেকে এখানকার তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। মাসের শেষে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেখা যেতে পারে।
পশ্চিম, উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে শীতের মাত্রা বেশি থাকলেও ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম বিভাগে তাপমাত্রা এখনো সহনীয়। রংপুর বিভাগের তুলনায় ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলো এখনো বেশ উষ্ণ। পৃকৃতিতে এখনো অগ্রহায়ণ মাস। পৌষ আসতে আরো একদিন লাগবে অর্থাৎ আগামী মঙ্গল ১৬ ডিসেম্বর থেকে পৌষ মাস গণনা হবে। সেই অনুযায়ী সারা দেশে জাকিয়ে শীত পড়তেই আরো সময় লাগার কথা।
কিন্তু দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবন-যাত্রায় শীত এসেছে ধীরে ধীরে। এত দিন যারা খুব ভোরে কাজে বের হয়ে যেতেন, বাধ্য না হলে তাদের অনেকেই দেরি করে কাজে যাচ্ছেন। শীতজনিত কারণে মানুষের মধ্যে সর্দি-কাশি এমনকি জ্বর শুরু হয়ে গেছে। কেউ কেউ ডায়রিয়ায় ভুগছেন। শিশু ও বৃদ্ধরা একটু বেশি ভুগছেন, কারণ তাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। হাঁপানি, নিউমোনিয়াজনিত কারণে শ্বাসকষ্টে এই বয়সীরাই বেশি ভুগছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঠাণ্ডায় কিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সুপ্ত অবস্থা থেকে অ্যাক্টিভ হয়ে উঠে। সে কারণে শীতে ডায়রিয়া ও সর্দি-কাশির মতো শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
এই সময়ে বাংলাদেশের ঊর্ধ্বাকাশে বয়ে যায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডার জেট বায়ু। বিমানের গতির সমান গতিতে চলে এই বায়ু। এই বায়ু শীতের এই সময়ে অপেক্ষাকৃত নিচে নেমে আসে। এ কারণে বাংলাদেশের কিছু এলাকায় ঠাণ্ডা বেশি অনুভূত হয়ে থাকে। তা ছাড়া এই সময়ে উপমহাপদেশের উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের কাছাকাছি চলে আসে। এটাও শীতের মাত্রা বাড়িয়ে থাকে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এই মূহূর্তে উপমহাদেশের উচ্চচাপ বলয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত এসেছে। সে কারণে পশ্চিমবঙ্গের কাছে বাংলাদেশের সীমান্ত জেলায় ঠাণ্ডা বেশি লাগে।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীতে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গোপালগঞ্জে ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যশোরে ছিল ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চুয়াডাঙ্গায় ছিল ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। কিন্তু ঢাকায় ১৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় ঢাকায় অনেকে বেশি ছিল নিম্ন তাপমাত্রা। তবে চট্টগ্রাম শহরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।



