সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে কক্সবাজারের হিমছড়ি থেকে রেজুখাল পর্যন্ত ‘ক্যাবল কার’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আট কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে পরামর্শক ফি ও প্রশিক্ষণ ফি বাবদ ২৪.৬০ কোটি টাকা, রোপওয়ে এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিবাবদ ৪৫৫ কোটি টাকা, পূর্তকাজ যেমন তিনটি স্টেশন, মসজিদ, পার্কিং, ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন ইত্যাদি বাবদ ২৩৯ কোটি টাকা এবং জমি অধিগ্রহণ/ক্রয় বাবদ ১৯.৪০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল জানুয়ারি, ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর, ২০২৭ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের সম্ভাব্য চুক্তির মেয়াদ ২৫ বছর এবং প্রকল্পের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক জীবনকাল ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।
পিপিপির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আজ মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় পর্যটন শিল্পের বিকাশকে ত্বরান্বিতকরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে মন্ত্রণালয়ের অধীনে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পিপিপি পদ্ধতিতে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে হিমছড়ি থেকে রেজু খাল ব্রিজ পর্যন্ত মোট ৮ কিমি. পর্যন্ত ক্যাবল কার স্থাপনের উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়। প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ২৬ মে ২০২৪ তারিখে চিঠি প্রেরণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় একটি আট হাজার ‘মনো-ক্যাবল ডিটাচেবল গোনডলা (এমডিজি) ক্যাবল কার সিস্টেম নির্মাণ করা হবে। এ সিস্টেমে হিমছড়ি থেকে রেজু খাল ব্রিজ পর্যন্ত মনোরম রুটে ৩৫টি টাওয়ার (সর্বোচ্চ ২৫০ মিটার ব্যবধান) থাকবে এবং ৭০টি আট-সিটার কেবিনের মাধ্যমে ক্যাবল কার পরিচালিত হবে। সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, বন এবং মেরিন ড্রাইভ রোড বরাবর উপকূলীয় এলাকাসহ বিভিন্ন ভূখণ্ড দিয়ে এ ক্যাবল কার অতিক্রম করবে। এ রুটে তিনটি স্টেশন থাকবে এবং পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন বিনোদনমূলক সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
প্রস্তাবিত পিপিপি প্রকল্পের সম্ভাবতা, উপযোগিতা, ভ্যালু ফর মানিসহ আনুষঙ্গিক বিষয় যাচাইয়ের জন্য ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে প্রি-স্কেনিং সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রি স্কিনিংসহ অন্যান্য অনুষঙ্গের প্রাথমিক যাচাই শেষে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় প্রকল্প প্রস্তাবটি পিপিপি কর্তৃপক্ষের নিকট পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত মতে প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষের নিকট পূর্ণাঙ্গ স্কিনিংয়ের জন্য পাঠানো হয়।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে প্রকল্পটির একটি স্ক্রিনিং সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্ক্রিনিং-প্রক্রিয়ার নির্ধারিত আবশ্যিক ক্রাইটিরিয়াতে ৮০ নম্বরের মধ্যে ৬২.৬০ নম্বর পাওয়ায় পিপিপি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ক্যাবল কার নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালে পিপিপি প্রকল্পের গাইডলাইনের ১০.৩ ধারা মোতাবেক নীতিগত অনুমোদনে জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, নীতিগত অনুমোদন প্রাপ্তির পর ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদনের মাধ্যমে প্রস্তাবিত প্রকল্পের কারিগরি ও আর্থিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণপূর্বক চূড়ান্ত করা হবে এবং পিপিপি গাইডলাইন অনুযায়ী উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি অংশীদার নির্বাচন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।