‘বইয়ের দোকানের বিকল্প বইমেলা’

ঐতিহ্য বুক কার্নিভাল

Printed Edition
বুক কার্নিভালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কথা সাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই  : নয়া দিগন্ত
বুক কার্নিভালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কথা সাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই : নয়া দিগন্ত

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

বইয়ের দোকানের বিকল্প হলো বইমেলা মন্তব্য করে একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই বলেছেন, দেশে বইয়ের দোকান বন্ধে পাঠক কমেছে। তাই পাঠক বাড়াতে বইয়ের দোকানের বিকল্প হলো বইমেলা।

গতকাল বিকেলে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘ঐতিহ্য বুক কার্নিভাল ২০২৫’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তাদের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ কার্নিভাল আয়োজন করেছে। ১৯ দিনের এ আয়োজন আগামী ৩০ নভেম্বর শেষ হবে।

গতকাল প্রথম দিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ফরিদা হোসেন, সাংবাদিক, লেখক অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য, শিক্ষাবিদ ও লেখক মোহীত উল আলম ও ঐতিহ্য প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী এবং স্বত্বাধিকারীআরিফুর রহমান নাঈম ।

হাসনাত আবদুল হাই বলেন, একজন প্রকাশকের সাথে বইয়ের নাড়ির সম্পর্ক থাকে। আর এমনি একটি প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্য। যারা তাদের ২৫ বছরে বই প্রকাশে রেকর্ড গড়েছে। এটা প্রশংসনীয় সাফল্য।

দেশে মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বইয়ের দোকান কমে যাওয়ায় বইয়ের পাঠক কমেছে। আজিজ মার্কেট, নিউ মার্কেটসহ রাজধানীর যত স্থানে বইয়ের দোকান ছিল প্রযুক্তির কারণে তা এখন আর নেই। কিন্তু পাঠক সৃষ্টি করতে হলে দোকানের বিকল্প নেই। কিন্তু যেহেতু দোকান কমে আসছে তাই এখন পাঠক ধরে রাখতে হলে বই মেলার মাধ্যমে পাঠকের কাছে বই পৌঁছে দিতে হবে। এ ছাড়া পাঠক ধরে রাখতে রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলাতেও বইমেলা করতে হবে। তা হতে পারে যৌথ নয়তো এককভাবেও যেকোনো প্রকাশনা করতে পারে। শেষে তিনি ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সাংবাদিক, লেখক অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু বলেন, আমার পেশা সাংবাদিকতা হলেও আমি পাঠক হিসেবে অনুবাদ করি। আমি যা পড়তে ভালো বাসি, যা ভালো লাগে তাই আমি অন্যদের জন্য অনুবাদ করি। তাতে আমার লাভ না হলেও মানুষের জন্য কিছু করতে পারার তৃপ্তি পাই। যদিও বর্তমান সময়ে অনেক ভালো লেখকও আর লিখতে উৎসহবোধ করেন না। কারণ আমাদের প্রকাশকরা লেখক লালন করতে পারেন না। তারপরও সাহিত্যেও প্রতি ভালোবাসা থেকে আমার মতো অনেকে এখনো লিখছেন। এটা একজন লেখকের আত্মতৃপ্তি। আর এর পেছনে ঐতিহ্যের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান আছে বলেই লেখকরা এখনো আমার মতো উৎসাহবোধ করেন।

স্বাগত বক্তব্যে ঐতিহ্যের প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাইম বলেন, ঐতিহ্যের ২৫ বছর আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় মাইলফলক। ২৫ বছর আগে মাত্র তিনজন মানুষ নিয়ে শুরু হয়েছিল ঐতিহ্য। আজ আমাদের ঐতিহ্য অনেক মানুষের। হোঁচট খেয়েছি, ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তবুও হাল ছাড়িনি। এই ২৫ বছরে আমি আমার সব সহকর্মী, লেখক, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীর কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ, যাদের আন্তরিক সহযোগিতায় আজ ঐতিহ্য দুই বাংলার পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়েছে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ফরিদা হোসেন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, মিলেনিয়াম বর্ষ ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে ২০২৫ পর্যন্ত তার গৌরবদীপ্ত প্রকাশনা-পথে ঐতিহ্য আমাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশে এমন কোনো শিক্ষিত-সচেতন লেখক-পাঠকের সংগ্রহ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যেখানে ঐতিহ্য প্রকাশিত কোনো রচনাবলি বা একক বই নেই। যেকোনো প্রকাশনীর জন্য এটা গৌরবের ও আনন্দের বিষয়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য, শিক্ষাবিদ ও লেখক মোহীত উল আলম বলেন, ঐতিহ্য সত্যিই বাংলাদেশে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রকাশকের কথা মতে, ২০০৫ সালে প্রায় কোটি টাকা লস করেও তিনি দমে যাননি। আমার বিশ্বাস তাকে আর কিছুই দমাতে পারবে না।

বইয়ের দুইটা দিক থাকে। একটি হচ্ছেÑ লেখা মানসম্মত কিনা, আরেকটি বইয়ের প্রোডাকশন উন্নত কি না। আমি ঘুরে ঘুরে ঐতিহ্যের প্যাভিলিয়নে যা বই দেখেছি, তার সবই এই দুটো দিক রক্ষা করেছে। ঐতিহ্য বাংলা সাহিত্যকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছে, তা প্রকাশনা ইতিহাসে বিরল।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী এবং স্বত্বাধিকারী আরিফুর রহমান নাঈম বলেন, তার প্রতিষ্ঠান ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে। এ বছর ঐতিহ্য তার পথচলার রজতজয়ন্তী অর্থাৎ ২৫ বছর পূর্ণ করেছে। সবার অব্যাহত সহযোগিতা ও ভালোবাসায় এখন পর্যন্ত তারা প্রায় ২৫০০ বই প্রকাশ করেছেন। যার মধ্যে দুই বাংলায় সর্বাধিক সংখ্যক রচনাবলি রয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯ দিনব্যাপী কার্নিভাল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এতে ঐতিহ্যের প্যাভিলিয়নে থাকবে অনেক নতুন বই। আর মজুদ থাকা বইতে চলছে আকর্ষণীয় ছাড়।

কার্নিভালে অংশ নিয়েছে ইলহাম, কাকাতুয়া, গ্রিপারমার্ক। তাদের বই, নোটবুক ও বুকমার্কেও থাকছে বিশেষ ছাড়। এ ছাড়াও অংশ নিয়েছে বই বিপণন প্রতিষ্ঠান ‘নির্বাচিত’। নির্বাচিততে মজুদ থাকা বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় সব প্রকাশনীর বইয়ে থাকবে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। মজুদ বিদেশী বইয়ে (বাংলা, ইংরেজি) প্রদত্ত মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ও থাকছে।

এ ছাড়াও এতে থাকছে শিশু-কিশোরদের জন্য নানা আয়োজন। রয়েছে ঐতিহ্যের লেখক আড্ডা, লেখকদের জন্য বিশেষ উপহার, পাঠকদের সাথে সাক্ষাৎ, অটোগ্রাফ ও আলাপের সুযোগ। লেখক উপস্থিত থাকাকালীন লেখকের বইয়ে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ ছাড় ও ফোক মেহফিল, ফোক শিল্পীদের পরিবেশনা। রিডার্স ক্লাব ডে, নির্বাচিত পাকেরঘর। এতে প্রতিদিন থাকবে নামমাত্র মূল্যে স্ন্যাকস ও দুপুরের খাবার, সন্ধ্যার নাশতা, রঙ চা ও সেলফি কর্নার।