এশিয়া কাপে সুপার ফোরে যখন বাংলাদেশের ত্রাহি অবস্থা, জটিল সমীকরণে হাবুডুবু খাচ্ছে, খাদের কিনারায় বলতে গেলে দু’পা-ই দিয়ে রেখেছিল। সেখান থেকে শ্রীলঙ্কা দল আফগানদের হারিয়ে বাংলাদেশকে বুক ভরে নিঃশ^াস নেয়ার সুযোগ করে দেয়। আফগানরা বাড়ি চলে যাওয়ার এক দিন পরেই সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। গতকাল সেই রক্ষকদের হারিয়ে সুপার ফোরে রোমাঞ্চকর নাগিন ডার্বি জিতে নিলো লিটন দাস বাহিনী। প্রথমে ব্যাট করে লঙ্কানরা দাসুন শানাকার বিধ্বংসী ইনিংসে নির্ধারিত ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১৬৮ রান তুলে। জবাবে ওপেনার সাইফ হাসান, তৌহিদ হৃদয়ের দৃঢ়চেতা হাফ সেঞ্চুরিতে এক বল বাকি থাকতে ছয় উইকেটে ১৬৯ রান করে চার উইকেটে লঙ্কানদের হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের ট্যাংক ফুল করল বাংলাদেশ।
টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক লিটন দাস। শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস দারুণ সূচনা এনে দেন। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে নিশাঙ্কা আউট ২২ রানে। অপর ওপেনার কুশল মেন্ডিস ৩৪ রানে বিদায় নেন। ৫৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে। কামিল মিশারা (৫) ও কুশল পেরেরা (১৬) রান করে বিদায় নেন।
তবে এক প্রান্ত ধরে রেখে লঙ্কান ইনিংসকে টেনে নিয়ে যান দাসুন শানাকা। মাত্র ৩৭ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন এই ব্যাটার, ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও ছয়টি ছক্কা।
শ্রীলঙ্কা পাওয়ার প্লেতে তুলেছিল ৫৩ রান। পরের ছয় ওভারে করে মাত্র ৩০ রান আর শেষ পাঁচ ওভারে তোলে ৫৩ রান। শেষদিকে ক্যাচ মিস ও ফিল্ডিংয়ে কিছু ভুলে আফসোস বাড়ায় টাইগাররা। নির্ধারিত ২০ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে তাদের সংগ্রহ ১৬৮।
বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান, চার ওভারে ২০ রান দিয়ে নিয়েছেন তিনটি উইকেট। তাতে আন্তর্জাতিক টি-২০তে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়ার রেকর্ডে সাকিব আল হাসানের পাশে বসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার উইকেটটি নিয়েই সাকিবকে ছুঁয়েছেন তিনি। দু’জনের-ই উইকেট ১৪৯টি।
জবাবে পাওয়ার প্লেতে এক উইকেটে ৫৯ রান করেছে বাংলাদেশ। দলীয় ফিফটি আসে ৩২ বলে। যদিও ভাগ্য খারাপ তানজিদ হাসান তামিমের। নুয়ান থুসারা ভীতি তার পিছু ছাড়েনি। মাত্র দুই বল মোকাবেলা করে থুসারার বলে বোল্ড হয়ে খালি হাতে ফিরেন। এর আগে গ্রুপ পর্বের ম্যাচেও এই থুসারাই তাকে ফিরিয়েছেন শূন্য হাতে। তখন বল মোকাবেলা করেছিলেন চারটি।
৬.৩ ওভারে দলীয় ৬০ রানে লিটনের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। হাসারাঙ্গার বলে নিশাঙ্কাকে ক্যাচ দেয়ার আগে ১৬ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে ২৩ রান করেন তিনি। ড্রিংকসের পরপরই ৩৬ বলে এক চার ও চার ছক্কায় হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ওপেনার সাইফ হাসান। ১১ ওভারে টাইগারদের রান দুই উইকেটে ৮৮। দলীয় শতরান পার করে ব্যাক্তিগত ৬১ রানে কাটা পড়লেন সাইফ। হাসারাঙ্গার বলে ওয়েল্লালাগেকে ক্যাচ দেয়ার আগে করেন ৪৫ বলে দুই চার ও চার ছক্কায় ওই রান করেন তিনি। সাইফ-লিটন ৫৯ রানের জুটি গড়েন। সাইফ-তৌহিদ হৃদয় ৫৪ রানে জুটি গড়েন।
শামীম হোসেন ও হৃদয় দেখেশোনে এগোতে থাকেন। ১৬ ওভারে সংগ্রহ তিন উইকেটে ১৩৭। এর এরপর তৌহিদ হৃদয় ৩১ বলে চারটি বাউন্ডারিতে ও দু’টি ছক্কায় হাফসেঞ্চুরি করেন। জয়ের জন্য দরকার ১৮ বলে ২৪ রান। হৃদয় আগ্রাসী আর শামীম প্রত্যয়ী। দুই ওভারে দরকার ১২ রান। জয়ের একটু আগে ৩৭ বলে ৫৮ রানে চামিরার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে বিদায় নেন হৃদয়। জয়ের জন্য দরকার ছয় বলে পাঁচ রান। শানাকার প্রথম বলে জাকেরের চার রান, দ্বিতীয় বলে বোল্ড, তৃতীয় বলে মাহেদী নো রান, চতুর্থ বলে মাহেদী আউট, পঞ্চম বলে নাসুমের এক রান। তাতে একবল বাকি থাকতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছয় উইকেটে ১৬৯ রান। চার উইকেটের জয় নিয়ে সুপার ফোরে শুভ সূচনা টাইগারদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : টস বাংলাদেশ
শ্রীলঙ্কা : ১৬৮/৭ (নিশাঙ্কা ২২, কুশল ৩৪, কামিল ৫, পেরেরা ১৬, শানাকা ৬৪*, আসালাঙ্কা ২১, কামিন্দু ১, হাসারাঙ্গা ২, শরিফুল ০/৪৯, নাসুম ০/৩৬, তাসকিন ১/৩৭, মাহেদী ২/২৫, মোস্তাফিজ ৩/২০)।
বাংলাদেশ : (তামিম ০, লিটন ২৩, সাইফ ৬১, হৃদয় ৫৮, শামীম ১৪*, জাকের ৯, মাহেদী ০, নাসুম ১*, ওয়েল্লালাগে ০/৩৬, থুসারা ১/৪২, হাসারাঙ্গা ২/২২, চামিরা ১/৩২, শানাকা ২/২১)।
ফল : বাংলাদেশ চার উইকেটে জয়ী।



