বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রেজিমের পুরোটা সময়জুড়েই তিনি ছিলেন সুবিধাভোগী। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচয় দিতেন। গর্ব করে বলতেন ‘আমি শেখ হাসিনার সাথে রাজনীতি করেছি’। প্রমাণও দিতেন শেখ হাসিনার সাথে ঘনিষ্ঠতার। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ (বাকৃবি) ছাত্রসংসদ নির্বাচনের পর ছাত্রলীগের নেতারা ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। শেখ হাসিনার সাথে গ্রুপ ছবি তোলেন তারা। ওই ছবিতে ১০-১২ জনকে দেখা যায়; শেখ হাসিনার ঠিক ডান পাশে (গোল চিহিৃত) যিনি তার নাম সামিয়া সুলতানা। বাকৃবির সুলতানা রাজিয়া হল সংসদে ছাত্রলীগের প্যানেলে নির্বাচিত নেত্রী তিনি। এখন তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠান মৃত্তিকাসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) মহাপরিচালক।

ছাত্রজীবনে সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতি করা সামিয়া সুলতানা ১৫তম (কৃষি) বিসিএসের মাধ্যমে চাকরিজীবনে প্রবেশ করেন। বিগত শেখ হাসিনার আমলে যে কয়জন এই সংস্থায় সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী তাদেরই একজন তিনি। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সরাসরি সম্পর্ক। তাই গর্ব করে বলতেন, দুঃসময়ে শেখ হাসিনা এবং ওয়াহিদা আক্তারের (সাবেক কৃষিসচিব) সাথে রাজনীতি করেছি। হাসিনার আমলে এসআরডিআইতে অনেক সিনিয়র কর্মকর্তার ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন। বিগত সময়ের কৃষিমন্ত্রী, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মতিয়া চৌধুরীর সাথে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এসআরডিআই’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিএসও) পদে পদোন্নতি নিয়ে লুফে নেন গুরুত্বপূর্ণ এসআরডিআই’র ভবন নির্মাণ ও সমতা বৃদ্ধি (সিসিবিএস) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের পদ। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও তা এখনো শেষ হয়নি। একই সাথে তিনি সংস্থাটির পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পান। সিসিবিএস প্রকল্পের আওতায় ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে বহুতল ভবন কোনোমতে সম্পন্ন হলেও রাজশাহী, খুলনায় ও কুমিল্লায় সংস্থার আঞ্চলিক গবেষণাগার ভবনগুলোও নির্মাণ এখনো সম্পন্ন হয়নি বলে জানা যায়। প্র
চলতি বছরের আগামী ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু, বর্ধিত এ সময়ের মধ্যেও প্রকল্পের বাকি কাজ বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
মৃত্তিকাসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শেখ হাসিনার সাথে তোলা গ্রুপ ছবি সামিয়া সুলতানার ফেসবুকে কাভার ফটো ছিল। এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে মিটিংয়ের পর গর্ব করে নিজেকে আওয়ামী লীগার হিসেবে জাহির করতেন। অফিসারের চেয়ে দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সামিয়া সুলতানা হতাশ হন। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবি ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলেন। কিন্তু, ভাগ্য তার সুপ্রসন্ন। ফ্যাসিস্ট আমলের শেষের দিকে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসা মো: জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে এসআরডিআইতে আন্দোলন শুরু হয়। চাপের মুখে তিনি ডিজির দায়িত্ব ছেড়ে দেন। তারই চেয়ারে বসানো হয় ফ্যাসিস্টের দোসর ড. বেগম সামিয়া সুলতানাকে।
এসআরডিআইতে দু’টি পরিচালকের পদ রয়েছে। একটিতে ক্যাডার অফিসার এবং অপরটিতে নন ক্যাডার অফিসার দায়িত্ব পালন করেন। ডিজি পরিচালকের পদটি ধরে রেখেছেন। অন্যদিকে, নন ক্যাডারের পরিচালক পদটি খালি রাখা হয়েছে। সাবেক ডিজি জালাল উদ্দিন ফিরে গেছেন তার মূল পদ মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে।
গত ১৩ নভেম্বর এসআরডিআই’র মহাপরিচালকের চেয়ারে বসেই বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফারুক হোসেনসহ কয়েকজনকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন দেন। ফলে তারাই এখন ডিজিকে শেল্টার দিচ্ছেন। সরকারের একাধিক সংস্থার প্রতিবেদনেও এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে প্রতাপশালী কর্মকর্তার নাম ওয়াহিদা আক্তার। ছিলেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিএস। পরবর্তীতে কৃষিসচিব। ৫ আগস্ট আওয়ামী দু:শাসনের ইতিঘটার পরেও কৃষি মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক সচিব ছিলেন। তিনি এবং তার স্বামী তখনকার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) চুক্তিভিত্তিক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার মিলে পুরো কৃষি সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। তাদেরই ঘনিষ্ঠজন ড. বেগম সামিয়া সুলতানাকে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে মৃত্তিকাসম্পদ ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) মহাপরিচালক করা হয়। বিগত সময়ে মুজিববন্দনা করাই যার কাজ ছিল তিনিই পেয়েছেন মৃত্তিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব।
চাঁপাইনবাগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী সামিয়া সুলতানা সম্প্রতি তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সয়েল সায়েন্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এ সাধারণ সম্পাদক হন।
এসব বিষয়ে এসআরডিআই’র ডিজি সামিয়া সুলতানা বলেন, ৪০ বছর আগের বিষয় নিয়ে কেন আপনারা টানাটানি কর ছেন। আমি ছাত্রসংসদে নির্বাচিত ছিলাম না। কোনো এক পরিপ্রেক্ষিতে ছবিটি (শেখ হাসিনার সাথে) তোলা হয়।
তিনি বলেন, সরকার আমাকে ৫ আগস্ট পরবর্তী ডিজি বানিয়েছে। কর্মজীবনে আমি পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করছি। যারা এটা পছন্দ করছে না, প্রতিষ্ঠানটিকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তারাই এখন এসব কিছু সামনে আনছে।