এশিয়া কাপে সুপার ফোরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শুরুটা ভালো না হলেও শেষে বল হাতে বাজিমাত। তাতেই এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে রান পাহাড়ে উঠতে পারেনি ভারত। নির্ধারিত ওভারে তাদের ৬ উইকেটে ১৬৮ রানে আটকে রাখল বাংলাদেশ। এই ম্যাচ জিতলে ফাইনালের পথে এগিয়ে যেত লিটনের বদলি অধিনায়ক হওয়া জাকের আলী বাহিনী। কিন্তু তা আর হলো কই। ভারতীয় বোলাদের দাপটে ১৯.৩ ওভারে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। হলো না কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে মাত্র দু’জনই যেতে পারলেন দুই অঙ্কের ঘরে (সাইফ-৬৯ ও ইমন-২১)। সব ক’টি উইকেট হারিয়ে করতে পারল কেবল ১২৭ রান। তাতে ৪১ রানের জয় নিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে গেল ভারত।
তবে এই ম্যাচের সবচেয়ে বড় খবরটি নিজের করে নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। পেয়েছেন ১৫০টি আন্তর্জাতিক টি-২০ উইকেট। ‘কাটার মাস্টার’ খ্যাত সেই মোস্তাফিজ আবার জানিয়ে দিলেন, তিনি এখনো আছেন। সূর্যকুমার যাদবকে ফেরানোর সাথে সাথেই তিনি জায়গা করে নেন এক বিরল তালিকায়- বিশ্বে মাত্র চারে। আফগানিস্তানের রশিদ খান, কিউইদের টিম সাউদি, ইশ সৌধি এবং এখন বাংলাদেশী মোস্তাফিজ। সাকিব আল হাসানকে টপকে এখন বাংলাদেশের এক নম্বর টি-২০ উইকেট শিকারি তিনিই। ১১৮ ম্যাচে ১৫০ উইকেট। শুধু পরিসংখ্যানই নয়, এটি বাংলাদেশের পেস আক্রমণের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র!
দুবাইয়ে গতকাল টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লেতে অভিষেক শর্মা ও শুবমান গিল ঝড় তুলে ভয় পাইয়ে দেন বাংলাদেশকে। প্রথম ১০ ওভারে ৯৬ রান। কিন্তু পরের ১০ ওভারে টাইগার বোলাররা দিলো মাত্র ৭২ রান। অভিষেক শর্মার টর্নেডো ব্যাটিংয়ে ৭৫ রানের সুবাদে ৬ উইকেটে ১৬৮ রানে থামে তারা। ৭ রানে জীবন পাওয়া অভিষেক যেন সেই উপহারকে রূপান্তর করেন বিস্ফোরণে। নাসুমের ওভারে ২১ রান, তারপর একের পর এক বাউন্ডারি, ৩৭ বলে ৭৫ রান। শুবমান গিলও কম যান না। প্রথম ১০ ওভারে ভারত এক উইকেটে তোলে ৯৬ রান।
ঠিক তখনই দৃশ্যপট বদলায়। অভিষেক রান আউট। একই ওভারে বিদায় নেন সূর্যকুমার যাদব। ক্রিজে নেমেই বিদায় নেন তিলক ভার্মা। গতি হারিয়ে ভারতের ইনিংস যেন হারিয়ে ফেলে তার আত্মা। খোলস ছাড়া নুয়ে পড়ে ব্যাটিং অর্ডার। তীরে এসে তরী ডোবার গল্পটা এদিন জানান দিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। শেষ ওভারে দিলেন মাত্র ৪ রান। ততক্ষণে বোলিংয়ে পাথরের মতো শক্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি হাত। রিশাদ হোসেন নিয়েছেন দু’টি উইকেট, মোস্তাফিজ, তানজিম ও সাইফউদ্দিন পেয়েছেন একটি করে উইকেট।
১৬৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। জসপ্রিত বুমরার বলে ১ রানে ক্যাচ তুলে ফিরেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। ৪ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় উইকেটে ঝড়ো ব্যাটিং করেছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন ও সাইফ হাসান। তাতে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ সংগ্রহ ১ উইকেটে ৪৪। সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই ইমনকে ফিরিয়েছেন কুলদিপ যাদব। তাতে ৪৬ রানে পড়ে দ্বিতীয় উইকেট। পারভেজ ১৯ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২১ রান করেন। তাতে ভাঙে ৪২ রানের জুটি।
অক্ষর প্যাটেলের দশম ওভারে ছক্কা মেরে চাপ কাটাতে চেয়েছিলেন সাইফ হাসান। এক বল পরেই চাপ আরো বাড়িয়ে দেন তৌহিদ হৃদয়। মেরে খেলতে গিয়ে ৭ রানে বিদায় নেন। তাতে ৬৫ রানে বাংলাদেশ হারায় তৃতীয় উইকেট। ১১তম ওভারে আবার সাইফের ছক্কা। রানের চাপ কাটাতে এই ওপেনার চেষ্টা করলেও অপর প্রান্ত ছিল নড়বড়ে। একই ওভারের চতুর্থ বলে নতুন ব্যাটার শামীমকে শূন্য রানে বোল্ড করেছেন বরুণ চক্রবর্তী।
এক প্রান্তে লড়াইটা করার প্রয়াসে ওপেনার সাইফ। ৩৬ বলে তিনটি বাউন্ডারি ও চারটি ছক্কায় হাফ সেঞ্চুরি করেন দৃঢ় মনোবলের এই ব্যাটার। কিন্তু অপরপ্রান্তে যোগ্য সঙ্গী পাচ্ছেন না। নতুন ব্যাটার জাকের আলীও পারলেন না দাঁড়াতে। ৫ বলে ৪ রানে রান আউট হয়েছেন। তাতে ৮৭ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন। বল হাতে শুরুতে রান দিলেও শেষে নিজেকে শুধরে নিয়েছেন সাইফউদ্দিন। কিন্তু ব্যট হাতে এ কী করলেন, ৭ বলে ৪ রান করে ফিরেন বরুনের বলে তিলক ভর্মাকে ক্যাচ দিয়ে। ১৫.২ ওভারে দলীয় রান তখন ১০৯। ১৬.১ ওভারে দুই উইকেট নেয়া রিশাদও ফিরলেন ২ রান করে। ১৬.২ ওভারে তানজিম হাসান সাকিব ফিরলেন খালি হাতে। উভয়েরই হন্তাকারক কুলদিপ যাদব। নিলেন ৩ উইকেট।
১৭.২ ওভারে দলীয় ১১৬ রানে ফিরতেই হলো ওপেনার সাইফ হাসানকে। বুমরাহর বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিলেন প্যাটেলকে। ৫১ বলে ৩টি চার ও ৫টি ছক্কায় দলীয় সর্বোচ্চ ৬৯ করেন তিনি। সাত রানে চার উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শেষ দিকে ৩ বল বাকি থাকতে মোস্তাফিজ ৬ রানে আউট হলে ৪ রানে অপরাজিত থাকেন নাসুম আহমেদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : টস বাংলাদেশ (বোলিং)
ভারত : ২০ ওভারে ১৬৮/৬, (অভিষেক ৭৫, গিল ২৯, দুবে ২, সুরিয়াকুমার ৫, পান্ডিয়া ৩৮, তিলাক ৫, অক্ষর ১০*; তানজিম ১/২৯, নাসুম ০/৩৪, মোস্তাফিজ ১/৩১, সাইফ উদ্দিন ১/৩৭, রিশাদ ২/২৭, সাইফ হাসান ০/৭)।
বাংলাদেশ : ১৯.৩ ওভারে ১২৭/১০, (সাইফ ৬৯, তানজিদ ১, ইমন ২১, তৌহিদ ৭, শামীম ০, জাকের ৪, সাইফউদ্দিন ৪, রিশাদ ২, তানজিম ০, মোস্তাফিজ ৬, নাসুম ৪*, অক্ষর ১/৩৭, কুলদিপ ৩/১৮, বরুন ২/২৯, বুমরাহ ২/১৮, তিলক ১/১)।
ফল : ভারত ৪১ রানে জয়ী।



