রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী হজ ও ওমরাহ মেলা জমে উঠেছে। গতকাল শুক্রবার মেলায় ছিল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উপচেপড়া ভিড়। মেলায় এসে তারা সরাসরি হজ এজেন্সির কাছ থেকে তথ্য জানার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত। স্পটে বুকিং দিলেও মিলছে ছাড়সহ নানা উপহার। মেলায় প্রত্যাশিত দর্শনার্থী থাকায় খুশি আয়োজক সংগঠক হাবও।
দুই বছর বিরতির পর গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীতে শুরু হয়েছে পবিত্র হজ ও ওমরাহ মেলা। বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাব এ মেলার আয়োজন করেছে। ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন মেলার উদ্বোধন করেন। গতকাল ছিল মেলার দ্বিতীয় দিন। আজ শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এ মেলা। এর আগে সন্ধ্যায় এক সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। হাবের মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার জানিয়েছেন, এবারের মেলায় মোট ১৫৪টি এজেন্সি ৭০টি স্টল দিয়েছে। মূলত হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের সাথে এজেন্সির সরাসরি যোগাযোগ ঘটাতে ও মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
গতকাল মেলার দ্বিতীয় দিনে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উপচেপড়া ভিড়। নানা বয়সী নারী-পুরুষ এসেছেন মেলায়। প্রতিটি স্টলেই হজ-ওমরাহ প্রত্যাশীরা প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে ভিড় করছেন। এজেন্সি মালিকরা তাদেরকে তথ্য দেয়াসহ নানাভাবে আপ্যায়িত করছেন। আবাবিল হজ গ্রুপের মালিক আলহাজ মো: আবু ইউসুফ বলেন, মানুষ মেলায় আসছেন হজ-ওমরাহর প্যাকেজ জানতে। এতে তাদের সাথে এজেন্সির একটি সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে।
কোবা হজ গ্রুপের মালিক মাওলানা মাহমুদুর রহমান বলেন, ওমরাহর জন্য আমাদের তিনটি প্যাকেজ রয়েছে। এক লাখ ৩৫ হাজার থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকায় ওমরাহ করতে পারবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
সেন্ট্রাল ট্রাভেলস অ্যান্ড টুর্যসের মালিক মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী বলেন, মেলায় অনেক দর্শনার্থী আসছেন। তবে বেশির ভাগই আসছেন তথ্য জানতে আর পরিচিত হতে। পরবর্তীতে তাদের অনেকে সরাসরি এজেন্সিতে এসে বুকিং দিবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।
জমজম ট্রাভেলস বিডির কর্মকর্তারা জানান, ওমরাহ যেতে তাদের বেশ কিছু প্যাকেজ রয়েছে। এ ছাড়া হজ প্যাকেজও রয়েছে ৫টি। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হজ ও ওমরাহ প্যাকেজ নিতে পারবেন। অনলাইনেও বুকিং দিতে পারবেন।
মেলা উপলক্ষে বিশেষ ছাড় দিচ্ছে বাংলাদেশ এয়ার ট্রাভেলস। এজেন্সির মালিক মাওলানা জাহিদ আলম বলেন, মেলায় ওমরাহ বুকিং দিলেই ওমরাহ-সামগ্রী ফ্রি দিচ্ছি আমরা। আমাদের তিনটি প্যাকেজ রয়েছে। এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকার প্যাকেজ রয়েছে আমাদের।
মেলায় তথ্য জানতে পেরে খুশি হজ-ওমরাহ প্রত্যাশীরাও। মিরপুর-১০ থেকে সস্ত্রীক মেলায় এসেছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, মেলায় এসে অনেক এজেন্সির সাথে কথা বললাম। বেশ ভালো লাগছে। আমার পরিচিত এজেন্সি আছে। তবে এখানে এসে বিভিন্ন এজেন্সির খরচ ও সেবার মান নিয়ে জানতে পারলাম। এখন বাসায় গিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারব। যে এজেন্সি ভালো সেবা দিবে তার মাধ্যমে ওমরাহ যাওয়ার ইচ্ছা আছে। মগবাজার থেকে মেলায় এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, হজে গিয়ে মানুষ নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়ে। সব এজেন্সি ঠিকমতো সেবা দেয় না। এটা নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে। এজন্য মেলায় এসে এসব বিষয়ে এজেন্সির মালিকদের সাথে সরাসরি কথা বলেছি। তাদের সাথে কথা বলে অনেক ভুল ভেঙেছে। আবার অনেক কিছুতে তাদের উন্নতি করার সুযোগ আছে সেটাও তাদের বলেছি। মেলা হওয়ায় অনেক এজেন্সিকে একসাথে এক জায়গায় পাওয়া গেছে। এজন্য কথা বলে ভালো লেগেছে। এখন পরবর্তীতে চিন্তা করে সঠিক এজেন্সি বাছাই করার সুযোগ পাবো।
মেলা প্রসঙ্গে হাবের সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার নয়া দিগন্তকে বলেন, মেলা আয়োজনের আমাদের উদ্দেশ্য হলো হজ ও ওমরাহ প্রত্যাশীদের সাথে এজেন্সির সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা। যারা হজ-ওমরাহে যেতে চান তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে আপনারা মধ্যসত্বভোগীদের সাথে যোগাযোগ না করে এজেন্সির সাথে সরাসরি লেনদেন করুন। আমাদের সরকারের সাথে চুক্তি আছে ভালো সেবা দেয়ার। এজেন্সির সরাসরি লেনদেন করলে ভালো সেবা পাবেন। আমরা এ বছর এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো সেবা দেয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছি। আগামী বছর আমরা বিশ্বের সব দেশের চেয়ে ভালো সেবা দিতে চাই। এজন্য আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি।