ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় আইন ও পরিবেশ নীতিমালার তোয়াক্কা না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা, সরকারি সড়কসংলগ্ন স্থান এবং ফসলি জমিতে অন্তত ১৮টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ভাটায় সামাজিক বনায়নের গাছসহ বিপুল পরিমাণ লাকড়ি পুড়িয়ে ইট উৎপাদন করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ছাড়াই অধিকাংশ ভাটা কার্যক্রম চালাচ্ছে। রহস্যজনক কারণে কয়েকটি ভাটা বৈধতা পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের কার্যকর তদারকির অভাবে উপজেলার কৃষিজমি, বনভূমি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা, জনবসতি এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। স্থানীয় বনবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের তদারকির দায়িত্ব থাকলেও বাস্তবে বিধানগুলো মানা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, ভাটা মালিকরা অবৈধভাবে ফসলি জমির টপসয়েল কেটে ইট তৈরিতে ব্যবহার করছে। এর ফলে জমির উর্বরতা কমছে, ফলদ ও বনজ গাছ ধ্বংস হচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্যে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সরেজমিন ধলিয়া পলাশতলী গ্রামে দেখা গেছে, পলাশতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একেবারে উত্তর পাশে আনিছুর রহমানের রিফাত ব্রিক্স, সোহাগ খানের আলসাফা ব্রিক্স ও জালাল উদ্দিনের সেবা ব্রিক্স নামে তিনটি লাইসেন্সবিহীন ভাটা চালু রয়েছে। রিফাত ব্রিক্সের চারপাশে কয়েক শ’ মণ লাকড়ি স্তূপ করে রাখা হয়েছে। চিমনি থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে বের হওয়া কালো ধোঁয়ায় বিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী, আশপাশের বসতবাড়ি এবং ফসল মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
মেদুয়ারি গ্রামের জাহিদ ব্রিক্স, বহুলী গ্রামের মিরাজ ব্রিক্স, মেদিলা বাহিরপাথারের খোরশেদ আলমের আলম ব্রিক্স এবং উরাহাটির সুরুজ তালুকদারের টিএলএ ব্রিক্সেও একই অবস্থা দেখা গেছে। শান্তিগঞ্জে দীপ্তি একাডেমি উচ্চবিদ্যালয়ের পেছনে এবং শান্তিগঞ্জ-ধলিয়া সড়কসংলগ্ন স্থানে এমবিবি ও এমআরএল ব্রিক্স অব্যাহতভাবে দূষণ ছড়িয়ে চলেছে।
স্থানীয়রা জানান, ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, চোখজ্বালা ও নানা অসুখ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। আশপাশের জমিতে ফল ও সবজি উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ভাটায় শিশু ও নারী শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে এবং ইটের মাপ ও মান পরিবর্তন করে ক্রেতাদের সাথে নিয়মিত প্রতারণা করা হয়।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা যেমন ধলিয়া, মেদুয়ারী, বহুলী, উরাহাটির ভাটাগুলোতে বিপুল পরিমাণ কাঠ মজুদ রয়েছে। বিদ্যালয় ও আবাসিক এলাকার পাশে ইট পোড়ানোর কারণে কালো ধোঁয়া ও উড়ে আসা ধুলা শিশুসহ সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে। সরকারি রাস্তার ৫০০ মিটার ভেতর কিছু ভাটা অবৈধভাবে চললেও প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ভালুকা শাখার সদস্য সচিব কামরুল হাসান পাঠান কামাল জানিয়েছেন, উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটার বৈধ লাইসেন্স নেই এবং কেউ নীতিমালা মানছে না। ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আনিছুর রহমান সবুজ ভাটার কাগজপত্র সম্পর্কে অবগত নন। উপজেলা ইটভাটা তদারকি কমিটির সদস্য রেঞ্জ কর্মকর্তা সাদিকুজ্জামান বলেন, তাকে কমিটির বৈঠকে কখনো ডাকা হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন জানান, তদন্ত করে যেসব ভাটায় অনিয়ম ও কাঠ পোড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



