লোহাগড়ায় জমজমাট পাটের হাট, দাম পেয়ে খুশি কৃষক

Printed Edition
লোহাগড়ার মিঠাপুর হাটে জমে উঠেছে পাট বেচাকেনা : নয়া দিগন্ত
লোহাগড়ার মিঠাপুর হাটে জমে উঠেছে পাট বেচাকেনা : নয়া দিগন্ত

শরিফুজ্জামান লোহাগড়া (নড়াইল)

সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। এ বছর নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মিঠাপুর হাটে সর্বোচ্চ দামে পাট বেচাকেনা হচ্ছে। নড়াইলের সর্ববৃহৎ পাটের পাইকারি মোকাম লোহাগড়ার মিঠাপুর হাট।

গত শনিবার সরেজমিন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মান ভেদে প্রতি মণ পাট তিন হাজার ২০০ টাকা থেকে তিনি হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভালো মানের পাট তিন হাজার ৮০০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে। সামনে পাটের দাম আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এবার পাট চাষের শুরুতে অতিবর্ষণে নড়াইলে পাটের আবাদ ব্যাহত হলে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েন; কিন্তু বর্তমানে পাটের আশানুরূপ দামে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন তারা।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় মোট ২৩ হাজার ৪৯৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যার বিপরীতে ৫৮ হাজার ৫৯০ টন পাট উৎপাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। জেলার মধ্যে লোহাগড়ায় এ বছর সবচেয়ে বেশি পাটের চাষাবাদ করা হয়েছে। লোহাগড়ায় ১২ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়, যা লক্ষ্যমাত্রায় ছিল বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার। এরই মধ্যে ৯৮ শতাংশ পাট কেটে ফেলা হয়েছে। এখন জেলা ও উপজেলার প্রসিদ্ধ হাটগুলোতে পাটের জমজমাট কেনাবেচা চলছে।

মিঠাপুর পাইকারি পাটের হাট নতুন পাটে ভরপুর। সকাল থেকেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাট হাটে নিয়ে আসতে থাকেন। বেলা বাড়তে না বাড়তেই ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যাপক সমাগমে হাট পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন বাহনে বোঝাই করা কৃষকদের পাট হাটে উঠতে না উঠতেই ফড়িয়া ব্যাপারিরা ঘিরে ধরছেন। পাটের মান ভেদে দাম বলছেন। দর দামে ঠিক হলে দেখতে দেখতে সেসব পাট হাত বদল হয়ে ব্যবসায়ীদের গুদামে উঠে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর একই মানের পাটের দাম ছিল দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা।

কৃষক সাহেব আলী জানান, বাজারে ভালো মানের পাটের বরাবরই চাহিদা থাকে। অন্যান্য বছর অনাবৃষ্টির ফলে পানিশূন্য খাল-বিল-ডোবা-নালায় পাট পচানো নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়। পানি সঙ্কটে বাধ্য হয়ে নোংরা পানিতে পাট পচানোয় পাটের আঁশ কালো হয়ে বাজার হারায়। এবার ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে স্বচ্ছ পানিতে পাট পচাতে পেরে পাটের মান আশানুরূপ হয়েছে। মান ভালো হওয়ায় ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি বেড়েছে দামও।

কৃষক আনিস বলেন, এ বছর আবহাওয়া পাট চাষের অনুকূলে ছিল না। মে-জুনের তীব্র খরা ও দাবদাহের পর জুলাই মাসে অবিরাম বর্ষণে পাটের ফলন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে এবং উৎপাদন কম হয়। তবে পাটের দাম বাজারে বেশি হওয়ায় সে ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা।

লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা আক্তার জানান, পাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাষ উপযোগী জমিতে পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করাসহ কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পাটচাষিদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল।

পাটের আবাদ বাড়াতে এখানকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিকে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে এক কেজি করে বীজ, পাঁচ কেজি করে ডিএপি এবং পাঁচ কেজি করে এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। দাম বাড়ায় কৃষকরা এবার পাটের আবাদের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।