শিল্প উৎপাদনে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ট্যারিফ হতে পারে বড় চ্যালেঞ্জ

শাহ আলম নূর
Printed Edition

বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্প উৎপাদনে আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্র স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের মে মাসে দেশের বৃহৎ শিল্পখাতে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

বস্ত্র ও পোশাক খাতেই ৭২ শতাংশ অবদান

বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে শিল্পখাতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে তৈরী পোশাক খাত। এককভাবে এই খাত ১১.৯৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বিবিএস জানায়, শিল্প উৎপাদন সূচকের মোট স্কোরের প্রায় ৭২ শতাংশই এসেছে বস্ত্র ও পোশাক খাত থেকে, যার বেশির ভাগই তৈরি পোশাকের অবদান।

অন্য দিকে কাপড় উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বস্ত্র খাত ৯.৪৮ শতাংশ সংকোচনের মুখে পড়লেও তৈরী পোশাক শিল্পের পুনরুদ্ধার সেটিকে সামগ্রিকভাবে পুষিয়ে দিয়েছে।

৩৪ লাখ শ্রমিকের খাত, জিডিপিতে ১১% অবদান

বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) জানায়, এই খাতে সরাসরি কর্মরত আছেন প্রায় ৩৪ লাখ শ্রমিক। দেশের জিডিপির ১১ শতাংশের বেশি অবদান রাখছে খাতটি। মে মাসে বৃহৎ শিল্পখাতের ২৩টি উৎপাদন বিভাগের মধ্যে ১৭টিতেই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থিতিশীলতা, আমদানি প্রক্রিয়ায় কিছুটা শিথিলতা এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিই শিল্প উৎপাদনে গতি ফেরাতে সহায়ক হয়েছে।

ট্যারিফ বাড়লে পোশাক রফতানি হুমকিতে

তবে ইতিবাচক এই ছবির মধ্যেও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নতুন শুল্ক নীতি। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ নতুন ট্যারিফ আরোপের প্রস্তাব রয়েছে, যা বর্তমানে কার্যকর থাকা ১৫ শতাংশের সাথে যোগ হবে। বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, ট্যারিফ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে অনেক মার্কিন ক্রেতা অর্ডার স্থগিত রেখেছে। ইউরোপীয় ক্রেতারাও দাম কমানোর চাপ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক রফতানিকারক। এর ফলে আগামী মাসগুলোতে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মত : রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘শিল্পখাত একটি ইতিবাচক মোড়ে রয়েছে। যদিও ট্যারিফ ও মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে, তবে রাজনৈতিক রোডম্যাপ স্পষ্ট হলে ব্যবসায়িক আস্থা বাড়বে।’ তিনি আরো জানান, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল বাংলাদেশের রেটিং ‘বি প্লাস’ পর্যায়ে অপরিবর্তিত রেখেছে; অর্থাৎ অর্থনীতি এখনো ঝুঁকিমুক্ত না হলেও স্থিতিশীল রয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জরুরি

বিশ্লেষকদের মতে, মে মাসের ৭.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য আশার বার্তা। বিশেষ করে পোশাক, ইলেকট্রিক ও ধাতু খাতের উজ্জ্বল পারফরম্যান্স এ প্রবৃদ্ধিকে চালিকাশক্তি দিয়েছে। তবে বৈশ্বিক ট্যারিফ, মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা মোকাবেলায় এখনই দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।