দেশের পর্যটন খাতে বিদেশীদের রাজত্ব চলছে। এতে করে এ খাতে কর্মহীনতার সাথে আগ্রহ হারাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে বৈধতার তোয়াক্কা না করে দেশের টাকা বিদেশ চলে যাওয়াতে জাতীয় অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পিছিয়ে পড়ছে দেশ।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটক এলেও অর্থনৈতিকভাবে তাদের দ্বারা দেশ লাভবান হচ্ছে না। কারণ আগত পর্যটক তাদের হোটেল বা রিসোর্ট যেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বুকিং দেন তার মালিকানায় রয়েছে বিদেশী ট্যুর অপারেটর ও হোটেল বুকিং ওয়েবসাইট। এতে করে ওইসব প্রতিষ্ঠান লেনদেনেও বিদেশেী চ্যানেল ব্যবহার করে। ফলে যে দেশের পর্যটকই বাংলাদেশে আসুক তার আর্থিক লেনদেনের বড় অঙ্কের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশৃঙ্খলা আর অব্যবস্থাপনায় তারা ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাদের ভাষ্য ট্রেড লাইসেন্স ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন নিয়েই তারা এ ব্যবসায় জড়িয়েছেন। নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্সও পরিশোধ করছেন। তারপরও একদিকে যেমন বিমান ফেয়ারে বঞ্চিত অন্যদিকে দেশের হোটেল মোটেলে ব্যবসায় তারা সুযোগ সুবিধায় বঞ্চিত। তাদের অভিযোগ, হোটেলগুলো অনলাইনভিত্তিক বিদেশী বুকিং সাইটগুলোকে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশনের সাথে নিজেরা ১০-১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেয়, অথচ বাংলাদেশী অপারেটরদের জন্য ১০ শতাংশও দিতে চায় না। এমতাবস্থায় তারা পর্যটক পেলেও টাকা পাচ্ছেন না।
ট্যুর অপারেটরদের অভিযোগ, বিদেশী এজেন্সিগুলোর এই তৎপরতার কারণে শুধু সরকার আয়বঞ্চিত হওয়ার সাথে দেশের পর্যটন খাতে কর্মহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে অভিযোগ করেও তারা এর প্রতিকার পাননি।
বিদেশী কোন্ কোন্ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন প্রশ্নে ট্যুর অপরেটরদের কয়েকজন জানান, মূলত বাংলাদেশের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হোটেল বুকিং ও পর্যটন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বুকিং ডটকম ও আগোডা ডটকম রাজত্ব করছে। সেই সাথে মার্কিন অপর প্রতিষ্ঠান এয়ার বিএনবি এবং ভারতীয় কোম্পানি মাইট্রিপ, চীনা কোম্পানি সিট্রিপসহ আরো বেশ কিছু আন্তর্জাতিক বুকিং সাইট তাদের অনলাইনে সেবা দিচ্ছে। এদের সাথে কাজ করছে বাংলাদেশের অন্তত চার শতাধিক হোটেল- মোটেল ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংস্থা।
এ বিষয়ে ট্যুরিজম ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশনের (টিডাব) পরিচালক বলছেন, তারা যাদের সাথে কাজ করেন সেসব বিদেশী বুকিং সাইটগুলোকে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দেয়। অথচ বাংলাদেশী অপারেটরদের ১০ শতাংশও দিতে চায় না। এমতাবস্থায় তারা ব্যবসা করতে পারছেন না। অথচ সরকারের নিয়ম মেনে তারা ট্রেড লাইসেন্স ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন নিয়েছেন। নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্সও পরিশোধ করছেন। কিন্তু কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না।
ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী নয়া দিগন্তকে জানান, উড়োজাহাজের টিকিটের বাড়তি দামসহ সব কিছুর খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ খাত পিছিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমান অবস্থায় বিদেশীরা এদেশে এলেও আর্থিকভাবে তেমন লাভ হচ্ছে না। তবে দেশীয় পর্যটকের কারণে এখনো এ খাত টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। তবে এর মধ্যেও অনেক বাংলাদেশীর কাছে এখন পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, নেপালসহ আশপাশের কিছু দেশ। এতে করেও দেশীয় পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও ট্যুরিজম বোর্ডের অধীনে এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৫৫ লাখ ট্যুরিস্ট আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এখন কাজ করছেন। আপাতত পাঁচটি ট্যুরিজম স্পটকে আন্তর্জাতিক মানের করতে কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোকেও উন্নত করা হবে।