হকি লিগের ভবিষ্যৎ কী

রফিকুল হায়দার ফরহাদ
Printed Edition

এএইচএফ কাপ হকিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়া। শিরোপা ছাড়া অন্য কিছু কখনই লক্ষ্য ছিল না বাংলাদেশের। কিন্তু ফিরতে হয়েছে তৃতীয় হয়ে। অর্থাৎ ফাইনালেও উঠতে পারেনি। অভিজ্ঞ রাসেল মাহমুদ জিমিকে বাদ দিয়ে খেলতে গিয়ে চরম ব্যর্থতা নিয়ে দেশে ফেরা মামুনুর রশীদের দলের। এতে এশিয়া কাপে এবারের মতো খেলার স্বপ্নভঙ্গ। এরপর বছরের শেষ ভাগে যুব বিশ্বকাপ। যে আসরে এই প্রথম খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। রয়েছে নারী হকি দলের আন্তর্জাতিক ম্যাচও।

নতুন করে দায়িত্ব নেয়া হকি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি এখন পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রম টুর্নামেন্ট আর জাতীয় দল নিয়েই। তারা ব্র্যাক ব্যাংক মহিলা ডেভেলপমেন্ট কাপ হকি আয়োজন করেছে। জাতীয় দলকে ইন্দোনেশিয়ায় পাঠিয়েছে। তবে পুরুষ হকির লিগ কবে শুরু করবে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। অথচ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো করা তথা বিশ্বকাপে দেশের সম্মান বৃদ্ধি করা এবং হকি খেলোয়াড়দের অর্থিকভাবে সচ্ছল করতে লিগ শুরু করা জরুরি।

প্রিমিয়ার হকি লিগ মাঠে গড়িয়েছিল ২০২৩ সালে। তা সেটা শেষ হতে পারেনি। পরে সভা ডেকে আবাহনী ও মেরিনার্সকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রিমিয়ারের পর হওয়ার কথা প্রথম বিভাগ লিগ। মামলার কারণে সেই প্রথম বিভাগ লিগও মাঠে গড়াতে পারছে না। সর্বশেষ প্রথম বিভাগ হকি লিগ মাঠে গড়িয়েছিল ২০২৩ সালে। যা হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। আগের কমিটির সময় নির্বাচনকে ঘিরে মামলা হয়েছিল। প্রথম বিভাগের দুই ক্লাব হকি ঢাকা ইউনাইটেড ও কম্বাইন্ড স্পোর্টিং ক্লাব থেকে কাউন্সিলরশিপ পাননি সাজিদ আদেল ও জহিরুল ইসলাম মিতুল। দুই ক্লাবেরই সভাপতি সাজিদ আদেল। ২০২৩-এর হকি ফেডারেশনের নির্বাচনে সাজিদ আদেল ছিলেন হকি ঢাকা ইউনাইটেডের কাউন্সিলর। আর মিতুল ছিলেন কম্বাইন্ডের কাউন্সিলর। কিন্তু নির্বাচনের আগে এই দুই ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ কেড়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে কাউন্সিলরশিপ প্রমাণের জন্য সাজিদ আদেল ও জহিরুল ইসলাম মিতুল কাগজ পত্র নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে যান। ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারাই তাদের ডেকেছিলেন। কিন্তু ক্রীড়া পরিষদের লিফট থেকে নামার পরপরই হকি ফেডারেশনের সাবেক সাধারন সম্পাদক এ কে এম মমিনুল হক সাঈদের ৩০-৪০ জন লোক সাঈদের সামনেই সেই কাগজপত্র মিতুলের হাত থেকে কেড়ে নেন। জানান সাজিদ আদেল। হকি ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজিদ আদেল অভিযোগ করেন, সাঈদের লোকজন কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে আমাকে জানায়, এই দুই ক্লাব আর আপনাদের না। এরপর আমি কাগজপত্র ফেরত চাইলে তা দিতে অস্বীকার করে। সে সাথে সাঈদের উত্তর, কি ঘটেছে তা আমি কিছুই দেখিনি।’ পরে অন্য দুই ব্যক্তি হন এই দুই ক্লাবের কাউন্সিলর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাজিদ আদেল আদালতে মামলা করেন। এই মামলার কারণেই মাঠে গড়াচ্ছে না প্রথম বিভাগ হকি লিগ। সাজিদ জানান, ‘আদালত বলেছে এই দুই ক্লাবের মালিকানা আমাদের ফেরত দেয়া ছাড়া ক্লাব দু’টি লিগে অংশ লিগে পারবে না। এমনকি নাম বদল করেও খেলতে পারবে না।’

প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগের সাথে সম্পৃক্ত প্রথম বিভাগ হকি। এই প্রথম বিভাগ লিগ না হলে প্রিমিয়ার লিগেরও দল কম হবে। কারণ প্রতি প্রথম বিভাগ লিগ থেকেই একটি করে দল উঠে প্রিমিয়ারে। প্রথম বিভাগের সাথে সম্পৃক্ত দ্বিতীয় বিভাগ হকিও।

হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল (অব:) রিয়াজুল করিম জানান, কম্বাইন্ড স্পোর্টিং ও হকি ঢাকা ইউনাইটেড ক্লাবকে ছাড়াই প্রথম বিভাগ হকি লিগ করতে কোনো বাধা নেই। তবে আমরা সব দলকে নিয়েই লিগ করতে চাই। যদি কম্বাইন্ড ও ঢাকা ইউনাইটেড না খেলে তাহলে দুই দলের ৩০টিরও বেশি খেলোয়াড় বসে থাকবে। এর পরও যদি এই দুই ক্লাবকে খেলাতে না পারি তাহলে তো বাকি দলগুলোর খেলোয়াড়দের বঞ্চিত করতে পারি না। তখন হয়তো এই দুই দলকে বাদ দিয়েই লিগ করতে হবে। তবে আমি আবারো বলছি, সব দলের অংশগ্রহণেই লিগ চাই।

ফেডারেশন সেক্রেটারি যোগ করেন, কোর্ট বলেছে মালিকানা বদল করতে হবে ওই দুই ক্লাবের। সেই মালিকানা বদলের সাথে লিগে অংশ নেয়া না নেয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। সাজিদ আদেল চান অচিরেই হকি লিগ চালু হোক। তার দুই ক্লাবকে মালিকানা ফেরত দিয়ে। হকির উন্নয়নে তার দুই ক্লাবও লিগে অংশ নেবে।