যশোরের চৌগাছায় রাতের আঁধারে কপোতাক্ষ নদের দুই পাড় কেটে মাটি লুট করছে মাটিখেকোরা। কবি মাইকেল মধুসূধন দত্তের স্মৃৃতিবিজড়িত সেই কপোতাক্ষ নদের দুই পাড় কেটে এ মাটি লুট করছে পতিত আওয়ামী রাজনীতির সাথে সংযুক্ত একটি সিন্ডিকেট।
উপজেলার বুকচিরে একেবেঁকে বয়ে চলা মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নদটির দুই ধারের মাটিখেকো সিন্ডিকেট বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। কপোতাক্ষ নদ সাধারণ মানুষের কাছে যেন এক আতঙ্কের নাম। ভারত সীমান্ত ঘেঁসে এ নদটিবলা চলে ভারত ও বাংলাদেশকে যেন এ নদটি দুইভাগে ভাগ করে দিয়েছে। নদের দু’পাড়ের মাটি রাতের আঁধারে কেটে লুট করে নেয়ায় স্বাভাবিকভাবে নদের তীরের ঘরবাড়ি, ফসলিজমি ও রাস্তাঘাট চরম ঝুঁকিতে পড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ মাটিখেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা যশোরের জেলা প্রশাসনের অনুমোদিত ইজারা ব্যবস্থা নিয়ে নদের পাড়ের মাটি কাটছেন বলে দাবি করে থাকেন। তবে তাদের নিকট ইজারা ব্যবস্থা কাগজপত্র দেখতে চাইলে তা দেখাতে পারেননি। পতিত সকারের রাজনীতির সাথে সংযুক্ত একটি সিন্ডিকেট খোলস পালটিয়ে প্রতিনিয়ত নিয়মনীতি ভেঙে নদের পাড় কেটে সরকারি মাটি লুট করছে। রাতের আঁধারে দুই-তিনটি এসকেভিটর ও ভেকু গাড়ি ভিড়িয়ে নদের পাড়ের সরকারি মাটি কাটা হয়। সে মাটি ড্রাম ট্রাক, ট্রলি ও ট্রাক্টর বোঝায় করে পৌঁছে দেয়া হয় ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে। যার ভিডিও-প্রমাণ স্থানীয়রা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর থেকে শুরু করে বকসিপুর, দেবীপুর গ্রাম; নারায়ণপুর ইউনিয়নের ভগমানপুর, ইলিশমারী, হাজরাখানা, নারায়ণপুর, পেটভরা, টেঙ্গুরপুর; পাতিবিলা ইউনিয়নের নিয়ামতপুর, তালপট্রি, পৌর শহরের পাঁচনামনা, বেড়বাড়ী, চৌগাছা শহর, তারনিবাস, কদমতলা; স্বরূপদাহ ইউনিয়নের মাশিলা, লক্ষ্মিপুর, কদমতলা; চৌগাছা সদর ইউনিয়নের দিঘলসিংহা, ঢেকিপোতা, মশ্মমপুর এবং ধুলিয়ানী ইউনিয়নের শাহাজাদপুর, কাবিলপুর, ধুলিয়ানী ও উজিরপুর গ্রাম পর্যন্ত নদের দুই পাড়ের মাটি কেটে সাবাড় করেছে এ সিন্ডিকেট। অবৈধভাবে মাটি কাটার ফলে নদপাড়ের শত শত বসতঘর চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, বিগত পতিত সরকারের রাজনীতির সাথে যুক্ত একটি গ্রুপ খোলস পালটিয়ে নদের দুইপাড় মাটি রাতের আঁধারে লুট করে চলেছে। একটি পক্ষকে ম্যানেজ করে নির্বিঘেœ কোটি টাকার সরকারি মাটি বিক্রি করে যাচ্ছে। তাদের আশ্রয়ে গত কয়েক বছরে নদের সরকারি মাটি বিক্রি করে ১০-১৫ জন কোটিপতি হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হামলা-মামলা ও হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।
বকসিপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবুল ও আতিয়ার রহমান বলেন, প্রশাসনের একটি অংশ এতে জড়িত না থাকলে এভাবে নদের মাটি রাতের আঁধারে লুট করা সম্ভব হতো না।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, মাটি যারা কাটছে তারা এলাকার বেশ প্রভাবশালী। বিকেলে বাজারে বসলেই মাটি বিক্রির দৃশ্য দেখা মেলে। আর সন্ধ্যায় পরিষদ ভবন এলাকায় মাটি বিক্রির টাকা ভাগাভাগি হয়। সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে এক্সকাভেটর ও ভেকু গাড়ি লাগিয়ে নদের পাড় কেটে মাটি লুট করে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র। কিছুদিন আগে এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করে ও একটি ট্রাক আটকিয়ে দেয়। এলাকাবাসীর চরম ক্ষতি, কিন্তু সেটি দেখার কেউ নেই।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রকৌশলী তাসমিন জাহান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে কয়েকজনকে জেল ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে। নদপাড়ের মাটি না কাটতে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। কেউ তা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আহমদ বলেন, নদের মাটি যারা কাটছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এ সরকারি মাটি লুটের সাথে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।



