বনাঞ্চল উজাড় করে ইটভাটায় যাচ্ছে কাঠ

বনাঞ্চল থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ কাঠ অবৈধভাবে কেটে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া মূল্যবান গোলকাঠ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করছে সঙ্ঘবদ্ধ একটি চক্র, যা পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।

Printed Edition
ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কাঠ
ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কাঠ |নয়া দিগন্ত

মুহাম্মদ ফজল করিম ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় সংরক্ষিত এবং সামাজিক বনাঞ্চল থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ কাঠ অবৈধভাবে কেটে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া মূল্যবান গোলকাঠ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করছে সঙ্ঘবদ্ধ একটি চক্র, যা পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫-৩০টি জিপ এবং মিনি ট্রাকের মাধ্যমে এসব কাঠ প্রতিদিন পাচার করা হয়। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ফটিকছড়িতে তাদের অধীনে ৩২০ বর্গকিলোমিটার সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে সামাজিক বনায়ন এবং ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বাগানও বিস্তৃত। কিন্তু এসব বনভূমি থেকে অবাধে গাছ কাটার মহোৎসবে মেতেছে এক শ্রেণীর কাঠ ব্যবসায়ী। সংরক্ষিত বনের মূল্যবান প্রজাতির গাছও এই ধ্বংসলীলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। মূলত ইটভাটায় জ্বালানি কাঠের চাহিদা মেটাতেই এই বন উজাড় করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলায় অর্ধশতাধিক ইটভাটা এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বেকারিতে প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ কাঠ সরবরাহ করা হয়। ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং, বাগানবাজার, দাঁতমারা, শান্তিরহাট, হেঁয়াকো, আনন্দপুর, কাঞ্চননগর, শোভনছড়ি, হাজারীখিল এবং সর্তাসহ এসব এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি কাঠ পাচার হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে কাজিরহাট-নাজিরহাট, খাগড়াছড়ি সংযোগ সড়কের বিবিরহাট-নাজিরহাট (পেলাগাজীর দীঘি) এবং রামগড়-বারৈয়ারহাট সড়কগুলো কাঠ পাচারের ‘নিরাপদ করিডর’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কিন্তু প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান ধরে আছে। রহাস্যজনক কারণে প্রশাসন নিশ্চুপ ভূমিকায় রয়েছেন। যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাঠশ্রমিক জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঠ সংগ্রহ করে রাস্তার ধারে মজুদ করা হয়। সুবিধাজনক সময়ে ট্রাক এবং জিপের মাধ্যমে তা বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠানো হয়। তিনিও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

উল্লেখ্য, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী ইট পোড়ানোয় কাঠ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এই আইনের বিধান ফটিকছড়িতে প্রয়োগ হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের উপবন সংরক্ষক সফিকুল ইসলামকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি।