পাকিস্তানের সাথে স্থবির সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি : পররাষ্ট্র সচিব

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
Printed Edition
পররাষ্ট্র সচিব মো: জসীম উদ্দিনের সাথে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন : পিআইডি
পররাষ্ট্র সচিব মো: জসীম উদ্দিনের সাথে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন : পিআইডি

পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন বলেছেন, জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রেখেই আমরা পাকিস্তানের সাথে স্থবির সম্পর্কটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে যোগাযোগ, বিশেষ করে বিমান যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের ওপর আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে চাচ্ছি।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের ওপর আলোকপাত করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বেলা ১১টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা এই বৈঠক চলে। পরে মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সার্কের তিন সদস্য রাষ্ট্র নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার মিশন প্রধানরা। তবে সার্কের অপর সদস্য ভারতের কোনো প্রতিনিধি এতে ছিলেন না।

১৫ বছর পর বাংলাদেশের সাথে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে (এফওসি) যোগ দিতে আমনা বালুচ গত বুধবার ঢাকা এসে পৌঁছান। এফওসির পর তিনি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তবে পররাষ্ট্র সচিবের সাথে সংবাদ সম্মেলনে তিনি উপস্থিত ছিলেন না।

বাংলাদেশ বিগত আওয়ামী সরকারের সময় ভারতের দিকে বেশি ঝুঁকে ছিল। বর্তমান সরকার কি পাকিস্তানের দিকে বেশি ঝুঁকছেÑ এই প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন বলেন, পাকিস্তানের সাথে আমাদের যেসব প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি রয়েছে, এর মধ্যে পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠক একটি, যা সর্বশেষ ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের শেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৪ সালে। অর্থাৎ ২১ বছর আগে। জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রেখেই আমরা এখন পাকিস্তানের সাথে স্থবির সম্পর্কটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে যোগাযোগ, বিশেষ করে বিমান যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের ওপর আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে চাচ্ছি। এগুলো করতে গিয়ে কোনো দেশের প্রতি ঝোঁকা হচ্ছে- তা বলা যাবে না। তিনি বলেন, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও লাভের ভিত্তিতে আমরা পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব হলো, দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা হবে। যেমন পাকিস্তানের সাথে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক প্রতি বছর হওয়ার কথা। আমরা চাচ্ছি, এটা যেন প্রতি বছর একবার অনুষ্ঠিত হয়, দেড় দশক পরে না। নিয়মিত যোগাযোগ থাকলে আমরা লাভবান হতে পারব। তাই আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এই যোগাযোগগুলোকে নিয়মিত করা এবং এর মাধ্যমে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ইত্যাদি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

পাকিস্তানের সাথে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়গুলো উত্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এর মধ্যে রয়েছে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভক্ত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা দেয়া, ১৯৭০ সালে (তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তানে) ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাঠানো বিদেশী সহযোগিতার অর্থ হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সশস্র বাহিনীর চালানো গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। আমরা বলেছি, দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে পাকিস্তানের সাথে অমীমাংসিত ইস্যুগুলো দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির মাধ্যমে একটি মজবুত ও কল্যাণমুখী সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাংলাদেশ আগ্রহী। এ লক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি।

অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলো নিষ্পত্তিবিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ১৫ বছর পর পাকিস্তানের সাথে পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠক হলো। তাই এক বৈঠকেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা আশা করা ঠিক না। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য সদিচ্ছা তারা প্রকাশ করেছেন।

জসিম উদ্দিন জানান, প্রতিরক্ষা বিষয়ে এফওসিতে সাধারণ একটি আলোচনা হয়েছে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই রয়েছে। আমাদের সামরিক কর্মকর্তারা সে দেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য যান। পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তারাও বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে যোগ দিতে আসেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে সামরিক বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাকিস্তান সফর করেছে। এফওসিতে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, এফওসিতে পাকিস্তানের বাজারে বাংলাদেশী পণ্য প্রবেশের সুযোগ বাড়ানো, বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ, শুল্কবাধা দূর করা ও বাংলাদেশে পাকিস্তানের বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া পারস্পরিক শিক্ষাবৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। পাশাপাশি সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথাও আলোচনায় এসেছে। দুই দেশের শিল্পী, লেখক ও শিক্ষাবিদদের সফর বিনিময়কে উৎসাহিত করা হয়েছে।

আগামী ২৭ এপ্রিল পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার ঢাকায় আসবেন বলে জানান তিনি।

এ দিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তৌহিদ হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে শুধু বলেছেন, ঢাকায় এসে আমি খুশি। আলোচনা খুব চমৎকার হয়েছে। বাংলাদেশের খাবার, এখানে শপিং কেমন হয়েছেÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব ভালো হয়েছে।