তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দেশ, আতঙ্ক ছড়িয়েছে সবখানে। তবে রাজধানী ঢাকায় ভূমিকম্পের শক্তিশালী ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে। এবারের মতো ভয়াবহ আতঙ্কের অভিজ্ঞতা নিকট অতীতে রাজধানীবাসীর হয়নি। আরো একটি ঝাঁকুনি আসতে পারে (আফটার শক) এমন আশঙ্কায় ভূমিকম্প হওয়ার পরও বেশ কিছু সময় আতঙ্কে কেটেছে মানুষের। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ভবনে ফাটল ও হেলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে আতঙ্কে অনেকে ভবনের ওপর থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়েছেন বাঁচার জন্য।
রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫.৭ এবং এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর ঘোড়াশাল ও মাধবদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে। এটা সংঘটিত হয় মাটির প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে। বাংলাদেশ ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মেশিনে নরসিংদীর ভূমিকম্পটি ৫.৭ মাত্রার বললেও মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার পরিমাপ অনুসারে ভূমিকম্পটি ছিল ৫.৫ মাত্রার। ভূমিকম্পের কারণে নরসিংদীতেই পাঁচজন নিহত হন এবং আহত হয় শতাধিক মানুষ।
ভূমিকম্পে ঢাকাসহ কয়েক জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। একই সাথে আহত হয়েছে সহস্রাধিক ব্যক্তি। এদের বেশির ভাগই বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে ভবন থেকে নামতে গিয়ে তারা পদদলনে আহত হন। অন্য দিকে কয়েক স্থানে ভবনের দুর্বল অংশ ভেঙে পড়েছে ভুক্তভোগী অনেকের গায়ে। দেশের প্রায় সর্বত্রই ভূমিকম্প কিছু না কিছু স্বাক্ষর রেখে গেছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের সময়ে মাঝারি মাত্রার এই ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়। ঢাকার খুব কাছে কেন্দ্র থাকায় রাজধানীর বাসিন্দারা ঝাঁকুনিটা একটু বেশি অনুভব করেছেন বলে মনে করছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নরসিংদীতে এর আগেও কয়েকবার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, উৎপত্তিস্থলও ছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, সামনের বড় কোনো ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা হতে পারে এটা। প্রতি ১০০ বছর পরপর সাধারণত কোনো অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সর্বশেষ বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে ১৯৩০ সালে ধুবড়িতে ৭.১ মাত্রার এবং ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার। সেই হিসাবে বাংলাদেশে আরেকটি বড় ভূমিকম্প সংঘটনের সময় হয়ে গেছে, যেকোনো সময় বড় ভূমিকম্প হতেও পারে। সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে, ভূমিকম্প মোকাবেলার প্রস্তুতিও রাখতে হবে। ঢাকাসহ যেকোনো স্থানে কোনো কিছু নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মেনে চলতে হবে। বিএনবিসির নির্দেশনা না মানলে নির্মিত কোনো ভবনেরই বসবাসের ছাড়পত্র দেয়া যাবে না বলে জানান অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী।
হতভম্ব ঢাকাবাসী, অর্ধশতাধিক ভবনে ফাটল
পুরান ঢাকার আরমানিটোলার কেপি ঘোষ স্ট্রিট (কসাইটুলি) এলাকায় নয়ন আহমেদের দোকান সুলভমূল্যে গোশত বিক্রির জন্য ব্যাপক পরিচিত। প্রতিদিন স্থানীয়রাসহ অসংখ্য মানুষ এই দোকানে গোশত কিনতে ভিড় জমান। শুক্রবার ছুটির দিনে সেই দোকানে গোশত কিনতে ছেলে মেহরাব হোসেন রিমনকে (১২) নিয়ে গিয়েছিলেন আবদুর রহিম (৪৮)। একই সময় মেডিক্যাল শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম সেই দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। গতকাল সকালে আকস্মিক ভয়াবহ ভূমিকম্পে জরাজীর্ণ সাততলা ভবনটির ওপর থেকে ভেঙে পড়ে রেলিং। সেই রেলিং পড়ে তিনজনের ওপর। ঘটনাস্থলেই তিনজনের প্রাণ হারান। ভূমিকম্পের পর রহিমের খোঁজ নিতে স্বজনরা পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, বাবা ছেলে দু’জনেরই মুঠোফোন বন্ধ। পরে সন্দেহ হওয়ায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে গিয়ে বাবা-ছেলের লাশ শনাক্ত করেছেন পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া ভূমিকম্পের ঘটনায় রাজধানীর মুগদা এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের রেলিং ধসে মো: মাকসুদ (৫০) নামে এক নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন। তার লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। অন্য দিকে সন্ধ্যায় নরসিংদীতে আহত হওয়া বাবা ও তার শিশুসন্তানকে ঢামেকে আনা হলে দুপুরে ছেলে ওমর ফারুক (১০) মারা যায়। তার বাবা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার নাম মো: উজ্জ্বল হোসেন (৪০)।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পঙ্গু ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত দুই শতাধিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এ দিকে ভূমিকম্পের ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। একদিকে তীব্র ভূমিকম্পের অনুভূতি, অন্যদিকে রেলিং পড়ে হতাহতের ঘটনায় তারা অনেকটাই বাকরুদ্ধ। কসাইটুলি এলাকার গোশতের দোকানদার নয়ন আহমেদের বিসমিল্লাহ গরু-খাসির গোশত সাপ্লাইয়ের দোকানের ঠিক সামনেই রয়েছে স্বপন সেলুন। এই সেলুনে কাজ করা সূর্য দাস বলেন, সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দোকানে আসছিলাম। যখন নয়াবাজার ছিলাম তখন ভূমিকম্প হয়। তারপর দোকানে এসে দেখি, কয়েকজনকে রিকশা-ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারো মাথা ফেটে গেছে, কেউ শরীরে আঘাত পেয়েছেন। চারজন গুরুতর আহত ছিল। এর মধ্যে একজনকে রিকশা ও তিনজনকে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুনেছি তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছে।
মায়ের সাথে গোশত কিনতে গিয়েছিলেন রাফিউল : মা নুসরাত বেগমের সাথে মহিষের গোশত কিনতে বেরিয়ে ছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রাফি। ছেলেকে নিয়ে তার মা নুসরাত বেগমও যান। তখন ভূমিকম্পে ৭ তলা ভবনের কার্নিশ ভেঙে তাদের গায়ে পড়ে। মুহূর্তেই ছেলের নিথর দেহ পড়ে থাকে রাস্তায়। মাকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা (আইসিইউ) রাখা হয়। কিন্তু মা জানেন না তার ছেলে মারা গেছে।
পুলিশ জানায়, আহত আরো ১০ জনকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টাফ অফিসার মো: শাহজাহান শিকদার বলেন, আরমানিটোলার কসাইটুলি এলাকার একটি ৮ তলা ভবনের পাশের দেয়াল এবং কার্নিশ থেকে ইট ও পলেস্তারা খসে নিচে পড়ে, যেখানে একটি গরুর গোশত বিক্রির দোকান ছিল। সেখানে থাকা ক্রেতা ও পথচারীরা আহত হন। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় লোকজন তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় আরো ১০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
বেলা ১টার দিকে দেখা যায়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে কান্না করছেন রাফিউলের সহপাঠী ইমতিয়াজ উদ্দিন নাদিম। তিনি বলেন, ‘শুনেছি, রাফিউল তার মায়ের সাথে বাজার করতে গিয়েছিল। সকালে ফেসবুক গ্রুপে দেখলাম। রাফিউলের একটা ছবি দেয়া। মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে। এখানে এসে দেখি, সে আর নেই। ওর মা গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন।’
রাফিউলের আরেক বন্ধু অপু বলেন, ‘সে (রাফিউল) খুবই শান্তশিষ্ট একটা ছেলে ছিল। আমাদের সাথে একসাথে ক্লাস করেছে। তার মারা যাওয়ার ঘটনা আমরা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। কী বলব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’
জানা গেছে, রাফিউলের গ্রামের বাড়ি বগুড়া। তারা দুই ভাই-বোন। বাবা চাকরি করেন দিনাজপুরে। হলে সিট পেলেও মা ও বোনের সাথে বংশালের বাসায় থাকতেন তিনি। ভূমিকম্পে হতাহতের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান রাফিউলের একমাত্র বোন।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজহারুল ইসলাম খান বলেন, ২০ জনের মতো আহত ব্যক্তি এখানে আসেন। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ঢাকার বাইরে থেকে আসা শতাধিক রোগী ঢামেকে : বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভূমিকম্পে আহতের সংখ্যা বড়তে থাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক রোগীরা চিকিৎসা নেয় ঢামেক হাসপাতালে। সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালে ভূমিকম্পে আহত রোগী এক এক করে আসতে থাকে। ঢামেক জরুরি বিভাগের সামনে ঢাকার বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী আসছে, তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল সন্ধ্যায় ঢামেক সূত্রে জানা গেছে, ভূমিকম্পে আহত শতাধিক রোগী ঢাকার বাইরে থেকে ঢামেকে আসেন।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো: ফারুক বলেন, দুপুর পর্যন্ত অর্ধশতাধিক রোগী ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই সংখ্যা আরো বাড়বে। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। এ ছাড়া ভূমিকম্পে আহত অবস্থায় আসা দু’জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। অনেকে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ভর্তি আছেন।
দৌড়ে-লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত, পঙ্গু হাসপাতালে রোগীদের ভিড় : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্পে আহত মানুষের ভিড় বেলা বাড়ার সাথে সাথে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) বাড়তে থাককে। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের। সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের বিভিন্ন বেডে ভূমিকম্পের সময় আহত ব্যক্তিরা কাতরাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে, সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নামতে গিয়ে এবং নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম পড়ে আহত হয়েছেন। পঙ্গু হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত সিনিয়র নার্স সজল বলেন, ভূমিকম্পে অনেকেই পায়ে আঘাত নিয়ে জরুরি বিভাগে আসছেন, তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ঢাকায় যেসব স্থানে ভবন ধস ও ফাটল : বংশালের কসাইটুলীতে একটি ভবন ধসে তিনজন নিহতর ঘটনার বাইরেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভবন হেলে ও ফাটলের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, খিলগাঁওয়ের চৌধুরীপাড়া মাটির মসজিদসংলগ্ন একটি নির্মাণাধীন ভবনের অংশ ভেঙে পাশের একটি টিনশেড ঘরের ওপর পড়লে সেখানে দু’জন গুরুতরভাবে আহত হন। খিলগাঁও ভূঁইয়াপাড়া নূরানি মসজিদ গলির একটি আবাসিক ভবনের দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল দেখা গেছে। সূত্রাপুর স্বামীবাগ আটতলা একটি ভবন অন্য একটি ভবনে হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। কলাবাগানের আবেদখালী রোড একটি সাততলা ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ দিকে ভূমিকম্পে হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২-এর পলেস্তারা খসে পড়েছে। বাড্ডা লিংক রোড এলাকার একটি বহুতল ভবন পাশের আরেকটি ভবনের গায়ে হেলে পড়েছে। হাতিরঝিলসংলগ্ন মধুবাগ এলাকায় একটি বহুতল ভবন পাশের অপর একটি ভবনের গায়ে হেলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) একটি ভবনে দুই দেয়ালের সংযোগস্থলে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। মিরপুর-১০ নম্বরের কাছাকাছি এবং রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকায়ও পৃথক দু’টি ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। মিরপুরের ভবনটির বাসিন্দারা অক্ষত আছে, নিকুঞ্জের হেলে পড়া ভবনের গায়ে একাধিক ফাটল দেখা দিয়েছে। শেওড়াপাড়া এলাকায়ও আরো দু’টি ভবন হেলে পড়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
ভূমিকম্পের পরপরই রাজধানীর মতিঝিলের অনেক বেসরকারি অফিসের লোকজনকে দেখা যায় সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসতে। প্রায় আধা ঘণ্টা সময় রাস্তায় দেখা যায় অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে। মতিঝিলে ভূমিকম্প অনুভব করেছেন এমন একজন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, অন্যান্যবার ভবনকে এ দিক-সেদিক দুলতে দেখা যেত; কিন্তু এবার অন্য রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। মনে হয়েছে, ফ্লোরটি উপরে-নিচে কাঁপছে। মনে হয়েছে, এই বুঝি ফ্লোরটি ভেঙে পড়বে।
এ দিকে আতঙ্কিত হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেকেই লাফ দিয়ে নিচে পড়ে বাঁচতে চেয়েছে। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ছাত্ররাও আতঙ্কিত হয়ে দুই ও তিনতলা থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। হাজী মুহম্মদ মুহসিন হলের বেশ কয়েকজন ছাত্র নিচে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছে, তাদেরকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মুহসিন হলকে অনেক আগেই জরাজীর্ণ ঘোষণা করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলে বড় ধরনের কোনো সংস্কার করেনি অথবা হলটিকে পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
গতকালকের ভূমিকম্প সম্বন্ধে রাজধানীর রামপুরা এলাকার বনশ্রীর বাসিন্দা তামান্না জান্নাত (৩৭) জানান, ‘বাসাটা এমনভাবে কাঁপছিল যে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। পাশের যে প্লাস্টিকের চেয়ারটাও একই অবস্থা। কিচেনের তাকে পাতিলগুলো চোখের সামনে ফ্লোরে পড়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই বুঝতে পারলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকায় থেকে অনেক ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, কিন্তু এত জোরে কাঁপুনি আর কখনো টের পেয়েছি বলে মনে পড়ে না।
নরসিংদীতে নিহত ৫, আহত শতাধিক
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীতে স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে পাঁচজন নিহত ও শতাধিক আহতের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীতে এ ভূকম্পনের উৎপত্তি হয়। এ সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে মানুষের দালান কোঠা কেঁপে ওঠে। লোকজনকে এ দিক সে দিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। প্রায় ৬/৭ সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পে নরসিংদীর সদরের গাবতলী এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে পড়ে তিনজন আহত হয়। এ ছাড়া জেলায় আহতদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন (৩৭) ও তার শিশু পুত্র ওমর ফারুককে (৮) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তারা মারা যায়। তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক। এ দিকে ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে পলাশ উপজেলার মালিতা গ্রামের বৃদ্ধ কাজম আলী ভূঁইয়া (৭০) নিহত হয়েছেন। একই উপজেলার ডাঙ্গা গ্রামের নাসির উদ্দিন (৫০) ভূমিকম্পের সময় বিল্ডিং থেকে দৌড়ে বের হতে গিয়ে স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন। এ ছাড়া শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা ইয়াছমিন জানান, তার উপজেলার আছকিতলা গ্রামের ফোরকান মিয়া (৪০) গাছের ডাল কাটার সময় হঠাৎ ভূঁমিকম্পে গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাকে প্রথমে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় প্রেরণ করেন। ঢাকায় নেয়ার পথে ফোরকান মিয়া মারা যান। ভূমিকম্পে নরসিংদী সদর ও পলাশ উপজেলায় প্রায় শতাধিক লোক আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আহতের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ৫৭ জন এবং নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ১৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে সদর ও জেলা হাসপাতাল থেকে দু’জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
অপর দিকে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভূমিকম্পের কারণে কয়েকটি ভবনে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে এবং কেন্দ্রের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর পুরাতন রেল ব্রিজে ফাটল দেখা দিয়েছে।
গাজীপুরে আহতদের অধিকাংশই কারখানা শ্রমিক
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি জানান, ভূমিকম্পে কারখানা ও পোশাক শ্রমিকসহ গাজীপুরে অর্ধ-সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের বড় একটি অংশ তৈরী পোশাকসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। সেফটি এক্সিট বন্ধ থাকা এবং আতঙ্কিত বিপুলসংখ্যক শ্রমিক জীবন বাঁচাতে গেট দিয়ে এক সাথে বের হতে গিয়ে আহত হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। এ দিকে এ সময় গাজীপুর প্রেস ক্লাব, শহীদ তাজউদ্দিন হাসপাতালের পুরাতন ভবনসহ বহু ভবনে ফাটল ধরেছে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় বহু ভবন হেলে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়েছে।
এ দিকে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা: মো: মামুনুর রহমান জানান, জেলায় মোট ৪০০ জন আহত, ভর্তি ৮৬ জন, ছোটখাটো আঘাত নিয়ে ৯৭ জন, টঙ্গীতে চিকিৎসা পেয়েছেন ৯০ জন, গুরুতর ৪৩ জনকে রেফার করা হয়েছে। এ ছাড়া শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, কাপাসিয়া ও গাজীপুর সদরের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের প্রশাসক সরফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নগরবাসীর সুরক্ষা ও সেবা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভূমিকম্পের পরপরই ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। গাজীপুরের এডিসি জেনারেল মুতাসেম বিল্লাহ জানান, ভূমিকম্প-পরবর্তী তথ্য সংগ্রহ ও নাগরিক সেবা প্রদানে জেলা প্রশাসনও জরুরি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে।
নারায়ণগঞ্জে হেলে পড়েছে অনেক ভবন
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ভূমিকম্পে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় হেলে পড়েছে অনেক বহুতল ভবন। এ ছাড়া অনেক স্থানের ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
ভূমিকম্পে ভয়াবহ আতঙ্ক দেখা দেয় জনমনে। বিশেষ করে ফতুল্লা বিসিক এলাকায় যেসব গার্মেন্ট চালু ছিল সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ভূমিকম্পে একাধিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। তাড়াহুড়ো করে বের হতে নিয়ে অনেকেই আহত হয়েছেন।
জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের সিদ্দিকিয়া মাদরাসার ভবনের দেয়াল ধসে যায় এবং আশপাশের একাধিক ভবনে ফাটল দেখা দেয়। এ ছাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জ আটি হাউজিং এলাকার ৫ নম্বর রোডের দু’টি বাড়ি ও দুই নম্বর রোডের একটি বাড়ি একটির ওপর আরেকটি হেলে পড়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়। ফতুল্লার কাশিপুরের ৭৫ বছর বয়সী অনুতপ্ত সাহা জানান, ‘আমার জীবনে এত ভয়াবহ কম্পন কখনো অনুভব করিনি। এটি ছিল সত্যিই আতঙ্কজনক।’
ভূমিকম্প শুরু হতেই নারায়ণগঞ্জ শহর ও ফতুল্লার বিভিন্ন বহুতল ভবন থেকে আতঙ্কিত নারী-পুরুষ ও শিশুরা দ্রুত নিচে নেমে আসে। ফতুল্লার শিল্পাঞ্চল বিসিক এলাকায় কয়েকটি রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু থাকায় শ্রমিকরাও নিরাপদ স্থানে বেরিয়ে আসেন।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জানান, নারায়ণগঞ্জের কোথাও বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো আমাদের কাছে আসেনি। তবে ভবন হেলে পড়া ও ফাটল ধরার খবর পাওয়া গেছে।
রূপগঞ্জে নবজাতকের মৃত্যু
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে দেয়াল ধসে ফাতেমা নামে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয় আরো দু’জন। ফাতেমা গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকার আব্দুল হকের মেয়ে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে ভূমিকম্পের সময় ভুলতা গাউছিয়া যাওয়ার সময় সড়কের পাশের দেয়াল ধসে নবজাতক ফাতেমা (১০ মাস), তার মা কুলসুম বেগম (৩২) ও প্রতিবেশী জেসমিনের (৩৫) ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই নবজাতকের মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় কুলসুম বেগম ও জেসমিন বেগমকে উদ্ধার করে স্থানীয় প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান এ ঘটনার সত্যতা জানিয়েছেন।
কুমিল্লায় অজ্ঞান ৮০ নারী
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা ইপিজেডে কর্মরত অবস্থায় অন্তত ৮০ জন নারী আতঙ্কে অজ্ঞান হয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন দৌড়ে বের হতে গিয়ে আহত হন। ইপিজেডের ভেতরে বেপজা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন আহতরা। এ ছাড়া কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে ৩০ জনকে।
আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা ইপিজেড পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো: সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, ভূমিকম্পের সময় দু’টি কোম্পানির নারীকর্মীরা ভয়ে ছোটাছুটি করতে গিয়ে প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। তবে গুরুতর আহত হয়নি কেউ। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ জানান, সেখানে অন্তত ৩০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
দাউদকান্দিতে বিভিন্ন ভবনে ফাটল
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, ভূমিকম্পে উপজেলার গৌরীপুর বাজারে সৌদিয়া ইস্টার্ন প্লাজাসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু ভবনে ফাটল ধরেছে। এ সময় দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনে থাকা চিকিৎসক, নার্স ও রোগীরা ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। দু’টি ভবন ক্ষতিগ্রস্তের কথা নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরীন আক্তার।
শ্রীপুরে কয়েক শ’ শ্রমিক আহত
শ্রীপুর (গাজীপুর) সংবাদদাতা জানান, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্ব খণ্ডের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় অবস্থিত ডেনিম্যাক ওয়াশিং কারখানায় ভূমিকম্প আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ভিড় ও ধাক্কাধাক্কির কারণে চার থেকে পাঁচ শত শ্রমিক আহত হয় বলে জানা গেছে। পুলিশ ও উদ্ধারকর্মীরা আহতদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং আশপাশের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
আহত নারীশ্রমিক পান্না জানান, ভূমিকম্পের সময় কারখানার ফায়ারিং অ্যালার্ম বেজে ওঠে। আমরা দ্রুত বের হওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু মূল ফটক বন্ধ থাকার কারণে বের হওয়া সম্ভব হয়নি। গেট ভাঙার চেষ্টা এবং তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক আহত হয়। অন্য আরেক শ্রমিক আহাদ বলেন, কারখানার মূল গেট ভেঙে অনেকের উপরে পড়ে যায়, কারখানার ভেতর পরিস্থিতি খুবই ভয়ঙ্কর ছিল।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে চারশতাধিক আহত রোগী এসেছেন। আহতদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের গাজীপুর তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়েছে।
টঙ্গীতে পদদলনে আহত তিন শ’ গার্মেন্ট শ্রমিক
গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি জানান, ভূমিকম্পে টঙ্গীর বিসিক শিল্পাঞ্চলের ফ্যাশন পালস গার্মেন্টসসহ আরো কয়েকটি কারখানা থেকে একসাথে নামতে গিয়ে প্রচণ্ড হুড়োহুড়ির মধ্যে প্রায় তিন শ’ শ্রমিক-কর্মচারী আহত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভূমিকম্প শুরু হতেই শ্রমিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দিগি¦দিক ছুটোছুটি করতে গিয়ে অনেকেই সিঁড়িতে পড়ে যান। ওই সময় কারখানার জরুরি নিরাপত্তা গেট বন্ধ থাকায় বের হওয়ার সিঁড়িতে প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়। ৯ তলা ভবনের শ্রমিকরা একসাথে নিচে নামতে গিয়ে জটলা সৃষ্টি হয় এবং পদদলিত হয়ে অনেকে আহত হন। টঙ্গী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইসরাত জাহান এনি বলেন, ভূমিকম্পের পরপরই শতাধিক শ্রমিক চিকিৎসা নিতে আসে। এখনো রোগী আসছে। বেশির ভাগের হাত-পা ও কোমরে আঘাত রয়েছে।
এদিকে টঙ্গীর বিভিন্ন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্টেশন রোডে ছয়তলা একটি ভবন পাশের ১২ তলা ভবনের ওপর হেলে পড়েছে। বহু ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে; অনেক ভবনে স্থানচ্যুতি হওয়ায় দরজা-জানালা আটকে গেছে।
সোনারগাঁওয়ে ২ জন আহত
সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে একটি প্লাস্টিক গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গতকাল ভূমিকম্পের সময় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে গজারিয়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট প্রায় ৪২ মিনিট চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় গোডাউনের প্রায় সব মালপত্র পুড়ে যায়।
এদিকে উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের কাবিলগঞ্জ এলাকায় দেয়াল চাপায় রাকেশ রায় (৩২) নামের এক যুবক আহত হয়েছেন। তিনি ওই এলাকার যাদব রায়ের ছেলে। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া মারুফ হোসেন (১৭) নামের এক মাদরাসা ছাত্র দ্বিতীয় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়। মারুফ উলুকান্দি মাদরাসার ছাত্র এবং ওই এলাকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে।



