পরিবেশ রক্ষায় পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণ ও সবুজায়নের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের একদল তরুণ। ‘গার্ডেনিং হোসনাবাদ’ নামের এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য পুরো গ্রামটিকে পরিকল্পিত সবুজ বাগানে পরিণত করা। তাদের স্লোগান হচ্ছে ‘প্লান্ট ইউর ফিউচার’।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ উদ্যোগে অর্ধশতাধিক তরুণ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক বাগান তৈরি, রাস্তার দুই পাশে ফুল ও ফলের গাছ লাগানো, প্রতিটি বাড়িতে বাগান, ছাদ বাগান, মসজিদকেন্দ্রিক সবুজায়ন, বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ সংরক্ষণ, ওষুধি গাছ রোপণ এবং সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এলাকাকে পরিবেশবান্ধব করে তুলছেন।
এ বিষয়ে হোসনাবাদ গ্রামের অধিবাসী অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিয়াজুল ইসলাম (ফিরোজ খলিফা) বলেন, গ্রামকে সবুজায়নের এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এ কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাই।
হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গার্ডেনিং হোসনাবাদের তরুণরা যেসব গাছ লাগাচ্ছেন, তা ছাত্রছাত্রীদের অনেক উপকারে আসবে। যাতে এলাকার মানুষের মধ্যে আরো বৃক্ষরোপণে সচেতনতা বাড়বে। তারা বুঝতে পারবে যে, বৃক্ষ হলো মানব জীবনের ছায়া।’
নিজাম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘গাছ আমাদের জীবনের ও পরিবেশের অন্যতম অংশ। পুরো গ্রামকে বাগান বানানোর পরিকল্পনা অবশ্যই প্রশংসনীয়। যারা এ সবুজায়নের মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রইল।’
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘সবুজ হোসনাবাদের স্বপ্ন সত্যিই প্রশংসনীয়। তাদের কর্মপ্রচেষ্টা গ্রামবাসীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
গার্ডেনিং হোসনাবাদের স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্যতম রাসেল শিকদার, মোহাম্মদ জসিম, জাহিদুল ইসলাম উজ্জ্বল, মাসুম বিল্লাহ, মঈম রাঢ়ী, তৌহিদুল ইসলাম, তারেক রহমান, শাফিন, কায়েস, সোহান ও রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজটি করছি। গাছ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সেরাটা গ্রহণ করছি। এ জন্য চারাগুলো নির্দিষ্ট স্থানে বছরব্যাপী পরিচর্যা করি। আমরা শুধু গাছ লাগাচ্ছিই না। গাছের রক্ষণাবেক্ষণেও কাজ করছি। আমরা মনে করি গার্ডেনিং হোসনাবাদের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে হোসনাবাদ গ্রামটি হবে দেখার মতো সুন্দর। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসবে আমাদের গ্রাম দেখতে।’
গার্ডেনিং হোসনাবাদের উদ্যোক্তা ও দৈনিক নয়া দিগন্তের অনলাইন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গাছ শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনেকেই গাছ লাগান, কিন্তু পরিচর্যা করেন না। আমরা সে ঘাটতি পূরণে কাজ করছি। আমরা ঔষধি ও মৌসুমি ফলের গাছ রোপণের দিকে বেশি নজর দিচ্ছি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মৌসুমি ফল হচ্ছে ওই মৌসুমের এন্টিবায়োটিক।’
তিনি বলেন, ‘গাছ রোপণ শুধু দায়িত্ব নয়, এটি একটি ইবাদত। আমরা চাই, গার্ডেনিং হোসনাবাদের মাধ্যমে হোসনাবাদ শুধু একটি সবুজ গ্রামই নয়, বৃক্ষ গবেষণার একটি ক্ষেত্র হিসেবেও দেশ-বিদেশে পরিচিত হোক।’
এ উদ্যোগে নেতৃত্ব দেয়া তরুণরা জানিয়েছেন, ‘তারা গাছ বাছাই থেকে শুরু করে রোপণ ও পরিচর্যা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারা শুধু ফটোসেশন নয়, গাছের জীবন নিশ্চিত করাকেই নিজেদের সাফল্য মনে করছেন।’
পরিবেশ রক্ষায় তরুণদের এমন উদ্যোগ গ্রামীণ বাংলাদেশে একটি অনুকরণীয় মডেল হয়ে উঠতে পারে, এমনটাই আশা করছেন স্থানীয়রা।