ডিফেন্সের ভুলে হতাশার হার

বাংলাদেশ ৩-৪ হংকং

Printed Edition

ক্রীড়া প্রতিবেদক

হংকংয়ের বিপক্ষে জয়ের কোনো রেকর্ড নেই বাংলাদেশ দলের। গতকাল জাতীয় স্টেডিয়ামে তাদের বিপক্ষে তিন পয়েন্ট পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ ছিল হাভিয়ার কাবরেরা বাহিনীর। সেখানে জয়ের বদলে উল্টো হার। তাও সেটা ৯ মিনিট ইনজুরি টাইমের সাথে আরো দুই মিনিট যোগ করা সময় মানে ১১তম মিনিটে। যেখানে বাংলাদেশ এই ৯ম মিনিটে স্কোর ৩-৩ করে স্মরণীয় ড্রয়ের আশা দেখিয়েছিল। আসলে যে দলের ডিফেন্স লাইন এতটা নড়বড়ে তাদের পক্ষে কোনোভাবেই জেতা সম্ভব নয়। এই রক্ষণকর্মী এবং গোলরক্ষকরা মিলে দলকে হারিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে আগের ম্যাচে। ১০ জুনের সেই লজ্জার পর কাল ফের হতাশা। এবার হংকংয়ের কাছে ৩-৪ গোলে হার। এতে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার চান্স এক প্রকার শেষ হয়ে গেছে লাল-সবুজদের। অথচ হংকং চার গোল দিলেও তা ছিল হাভিয়ার কাবরেরা বাহিনীর ভুলের উপহার। তা না হলে বাংলাদেশই জিতে যেতে পারত। তা না হলেও ড্রটা তাদের প্রাপ্যই ছিল। কাল ‘সি’ গ্রুপের অন্য ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করেছে সিঙ্গাপুর ও ভারত। হংকং এমন কোনো দল ছিল না যে তাদের হারানো যেত না। টানা দুই জয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে হংকং। আর বাংলাদেশ ১ পয়েন্টে তলানিতে।

ম্যাচের আগের দিন হংকংয়ের কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউড এক প্রশ্নের জবাবে কৌতুক করেই বলেছিলেন তার দলে হামজা থাকলে তিনি তাকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখতেন। যদিও এর আগে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রশংসা করেছিলেন বাংলাদেশ দলের এই লেস্টার সিটির এই মিডফিল্ডারের। কাল ঠিকই নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ ফের দিলেন ইংল্যান্ড প্রবাসী এই মিডফিল্ডার। ১১ মিনিটেই ফ্রি-কিকে তার গোলে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ দলের। তবে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ‘সি’ গ্রুপের এই ম্যাচে প্রথমার্ধে আর সেই লিড ধরে রাখতে পারেনি লাল-সবুজরা। প্রথমার্ধের ৪ মিনিট ইনজুরি টাইমে কর্নার থেকে স্কোর ১-১ করে হংকং। ম্যাচে একপর্যায়ে হংকং ৩-১ এ এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশ ইনজুরি টাইমে স্কোর ৩-৩ করে ফেলে।

হংকংয়ের প্রথম গোলের কর্নারের সময় হাভিয়ার কাবরেরা বাহিনীর ডিফেন্স লাইন বল ক্লিয়ার করতে দুর্বলতার পরিচয় দেয়। কর্নারের বল ঘুরে অন্য প্রান্তে গেলে সেখান থেকে ক্রস হয়। তা শাকিল আহাদ তপু হেডে ক্লিয়ার করলেও ঠিক মতো হয়নি। এরপর ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিম হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল ফেলেন বাংলাদেশ কিপারের সামনে। মিতুল মারমা সেই বলের কাছে যাওয়ার আগেই বলের দখল নেন ম্যাট ওর। মুহূর্তেই ফাঁকায় থাকা এই স্ট্রাইকার ডান পায়ের টোকায় বল জালে পাঠান। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেও এমন হাস্যকর ডিফেন্স লাইনের কারণে গোল হজম ও বাংলাদেশের হার। কাল জাতীয় স্টেডিয়ামে ফের একই দৃশ্য। তাই প্রথম গোলের পর ক্ষুব্ধ হামজা চৌধুরী বল হাতে নিয়ে জোরে লাথি মারেন। আর হারের পর হতাশায় মাঠে বসে পড়েন।

লিড হারিয়ে বিরতিতে গিয়ে ফের মাঠে এসে নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার বদলে আবার ভুল। এবার হাস্যকর ভুল করেন আরেক মিডফিল্ডার মোহাম্মদ সোহেল রানা। ৫০ মিনিটে হংকংয়ের আক্রমণ ঠেকাতে নিয়ে নিজেই ভুল পাস দিয়ে বসেন তিনি। বল অন্য ডিফেন্ডারের কাছে না গিয়ে চলে যায় হংকংয়ের বদলি ফরোয়ার্ড রাফায়েল মার্কিয়াসের কাছে। এরপর বাকি কাজটি করেন ডান পায়ের শটে। হামজা ছুটে গিয়েও কিছু করতে পারেননি।

বাংলাদেশ দলের প্রথম গোলটি পাওয়া ফাহিমকে বক্সের বাইরে ফাউলের কারণে। তা থেকে হামজার ফ্রি-কিক বিপক্ষ ম্যাথ ওরের মাথায় লেগে বোকা বানায় হংকংয়ের কিপারকে। ৭৫ মিনিটে আবার ডিফেন্সের ভুলে গোল হজম। এবার সাদ উদ্দিনকে বোকা বানিয়ে ম্যাথ ওর পাস থেকে গোল মার্কিয়াসের। ৮৩ মিনিটে বাংলাদেশ লড়াইয়ে ফেরার কাজটি করে। জামালের ফ্রি-কিক থেকে হেড হলে সেই বলে ফাহামিদুল বাম পায়ে ভলি মারেন। তা হংকংয়ের গোলরক্ষকের হাত ফসকে গেলে সামনে থাকা মোরসালিন বল জালে পাঠান।

৯ মিনিট ইনজুরি টাইমের ৯ম মিনিটে মোরসালিনের কর্নার থেকে শমিত শোম হেডে স্কোর ৩-৩ করার পর মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ ম্যাচ ড্রই করতে যাচ্ছে। কারণ খেলা তখন শেষ পর্যায়ে। কিন্তু দুর্বল রক্ষণভাগের সুযোগ নিয়ে হংকং ৪-৩ গোলে ম্যাচ জিতে নেয়। ১০১ মিনিটে জয়সূচক করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন মার্কিয়াস। ক্রসে থেকে আসা বলের শটে গোল চীনের লিগে খেলা মার্কিয়াসের। সেই শটে কিছুই করতে পারেননি মিতুল।

মূলত বিরতির পর ১-২ এ পিছিয়ে থেকে জামাল, ফাহামিদুল, জায়ান, শমিত ও তপু নামার পর বাংলাদেশের খেলা পাল্টে গেলেও রক্ষণকর্মীরা জিততে দেয়নি।

ম্যাচ শেষে হংকংয়ের কোচ বলেন, ম্যাচটি ছিল রোলার কোস্টারের মতো। অবশ্যই গোলগুলো ভুলের কারণে। আমরা যেমন ভুল করেছি। বাংলাদেশও ভুল করেছে। বাংলাদেশ কোচ হারের জন্য ভুলকে উল্লেখ করে বলেন, আমি ডিফেন্সে তপুকে মিস করেছি। শুরুতে আমরা ভালো খেললেও বিরতির পর কিছু সময় হংকং দাপট দেখায়। তবে খেলোয়াড় পরিবর্তনের পর আমরা ভালো খেলেছি। এরপরও এই হারের দায় আমারই। এখন আমরা হংকংয়ে গিয়ে ভালো করতে চাই। উল্লেখ্য, আজ দুপুরে হংকং যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। সেখানে ম্যাচ ১৪ তারিখে।