গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম টিকটক সম্প্রতি বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের জন্য চালু করেছে ‘স্টেম ফিড’ ফিচার। ডিজিটাল লার্নিংয়ে টিকটকের ‘স্টেম ফিড’ কিভাবে কাজ করবে সেটি নিয়ে নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেছেন টিকটকের দক্ষিণ-এশিয়ার হেড অব পাবলিক পলিসি ও গভর্নমেন্ট রিলেশনস ফেরদৌস মোত্তাকিন।
শর্ট ভিডিওর প্ল্যাটফর্ম টিকটক কেন শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে? শিক্ষামূলক কনটেন্ট নিয়ে এমন উদ্যোগ জাতীয় পরিসরে কোনো ভূমিকা রাখবে কি?
বাংলাদেশের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের কেন্দ্রে রয়েছে শিক্ষা এবং এই লক্ষ্যকে আমরা গুরুত্ব দিই। দেশের সব টিকটক ইউজারের জন্য স্টেম ফিডে আমরা নির্ভরযোগ্য বিষয়বস্তু তুলে ধরতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হলো এই ডিজিটাল লার্নিংয়ে সবাইকে যুক্ত করা। প্রান্তিক জায়গা থেকে শুরু করে শহরের শিক্ষার্থীরা, সবাইকে মানসম্পন্ন শিক্ষামূলক কনটেন্ট সহজে আমরা পৌঁছে দিতে চাই। সৃজনশীলতা বজায় রেখে প্ল্যাটফর্মটির মূল শক্তিকে আমরা শিক্ষার কল্যাণে কাজে লাগাতে চাই। শিক্ষণীয় কনটেন্ট সম্পর্কিত আমাদের উদ্যোগগুলো সর্বোপরি দক্ষতা, কর্মসংস্থান এবং ডিজিটাল নাগরিকত্ব নিয়ে সরকারের কার্যক্রমকেই সমর্থন করে।
টিকটকে বিভিন্ন দেশ থেকে নানান ভাষায় কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে স্টেম ফিড কীভাবে শিক্ষার সমান মান এবং সুযোগ নিশ্চিত করে?
‘লোকালাইজেশন’ বিষয়টিকে আমরা প্রাধান্য দিই এবং এটা আমাদের অন্যতম একটি পলিসি। স্টেম ফিডে বাংলা ভাষার কনটেন্ট তৈরি করা যায় এবং বাংলাদেশের কনটেন্টগুলোকে এখানে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এমনকি, বড় শহরের বাইরের ক্রিয়েটরদেরও সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করি এমন বিষয় তুলে ধরতে যেন সেগুলোর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশুনার ও পরীক্ষার সমস্যাগুলো সাধারণ ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারে। আমাদের লক্ষ্য হলো নির্ভরযোগ্য এবং সহজ কনটেন্টের মাধ্যমে সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া।
কীভাবে টিকটক কনটেন্টের মান এবং নির্ভরতা নিশ্চিত করে?
আমরা এই কাজটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন করি। প্রথমে টিকটক নিজেই নির্ধারণ করে কোন ভিডিওগুলো স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত) সম্পর্কিত। এরপর, আমরা কমন সেন্স নেটওয়ার্কসের মাধ্যমে প্রতিটি ভিডিও ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখি যে, এটি স্টেম ফিডের জন্য উপযুক্ত এবং বয়স উপযোগী কিনা। সবশেষে পয়েন্টারের মাধ্যমে আমরা তথ্যের সত্যতা যাচাই করি। এই তিনটি ধাপে কনটেন্ট যাচাই করার পর সেটি স্টেম ফিডে দেখানো হয়।
সবার মধ্যে ডিজিটাল সচেতনতা এখনো তৈরি হয়নি। কনটেন্ট নির্বাচনে এবং প্ল্যাটফর্ম ইউজারদের ক্ষেত্রে ডিজিটাল সচেতনতা কিভাবে নিশ্চিত হবে?
ডিজিটাল সাক্ষরতাকে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হিসেবে দেখি। আমরা চাই ব্যবহারকারীরা যেকোনো কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে এর সোর্স বা উৎস এবং সত্যতা যাচাই করুক। এছাড়া ক্রিয়েটরদের প্রশিক্ষণ দিতে ও স্কুলভিত্তিক চ্যালেঞ্জ আয়োজন করার জন্য আমরা শিক্ষক ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সাথে কাজ করছি। কোনো কনটেন্ট থেকে কিছু শেখার পর সেটির বাস্তব সমাধান, বা কনটেন্টের সারমর্ম বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের এই উদ্যোগগুলো শিক্ষার্থীদের সাহায্য করবে।
টিকটকের পার্টনারশিপে সরকার, স্কুল ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কী ধরনের ভূমিকা রাখছে?
আমরা সব ধরনের সহযোগিতা ও পার্টনারশিপকে স্বাগত জানাই। কনটেন্ট ক্রিয়েটররা যেন কারিকুলাম অনুযায়ী কাজ করতে পারে সেই লক্ষ্যে আমরা দক্ষতার কাঠামো এবং শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে কাজ করি। যেমন, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে প্লেলিস্ট তৈরি এবং দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য আমরা শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে চাই। এতে পড়াশুনার পদ্ধতিতেও এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। সমস্যা সমাধান, প্রশিক্ষণ এবং ক্যারিয়ারের পরামর্শ তুলে ধরতে আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কনটেন্ট তৈরি করতে চাই।
শর্ট-ফর্ম ভিডিওগুলো কি কাঠামোগত বৈষম্য দূর করতে সাহায্য করতে পারে?
নিশ্চয়ই, তবে কেবল একটি উদ্যোগে কোন সমস্যা সম্পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব নয়। নিয়মিতভাবে কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করতে থাকলে এবং সেটি সহজ ভাষায়, স্পষ্টভাবে তুলে ধরলে সবাই সেই বিষয়গুলো বুঝতে শিখবে। আর এই কনটেন্টগুলো যদি আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয় তাহলে সেটি আরো দ্রুত বোধগম্য হবে এবং আরো বেশি মানুষ তখন নতুন বিষয় শিখতে আগ্রহী হবে।
স্টেম ফিডের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, ব্যবস্থাপনা এবং স্বচ্ছতা বিষয়ে টিকটকের প্রতিশ্রুতি কী?
আমাদের অঙ্গীকারগুলো একেবারেই স্পষ্ট। টিকটক ইউজারদের বয়স-অনুযায়ী অভিজ্ঞতা, কমিউনিটি গাইডলাইন, ভুল তথ্য সরানো, অভিভাবকদের জন্য বিশেষ টুলের মতো বিষয়গুলো আমাদের প্রতিশ্রুতির অংশ। আমরা স্টেম ফিড ফিচারটিকে এমন একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত করতে চাই যেন এটি সবাইকে শিক্ষালাভে যুক্ত করতে পারে।



