গুজরাটের আহমদাবাদে মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলের ওপর এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ আছড়ে পড়ার ঘটনায় নিখোঁজ লোকজন ও বিমানের যন্ত্রাংশের খোঁজে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। বৃহস্পতিবারের ওই দুর্ঘটনায় লন্ডনগামী ফ্লাইটটির ২৪২ আরোহীর একজন বাদে বাকি সবাই নিহত হয়েছেন। বোয়িংয়ের এ ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারটি যে হোস্টেলের ওপর পড়েছে তার অনেক বাসিন্দাও হতাহত হয়েছেন।
উড়োজাহাজের আরোহীদের বাইরে দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত আরো ২৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। তাতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬৫। এ দুর্ঘটনা এক দশকের মধ্যে উড়োজাহাজসংক্রান্ত সবচেয়ে বাজে দুর্ঘটনা।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষগুলো জানিয়েছে, তারা এখনো হোস্টেল এবং এর আশপাশের নিখোঁজদের সন্ধানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ উদ্ধারে বৃহস্পতিবার রাতভর অভিযান চলেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, উদ্ধারকর্মীরা এর মধ্যেই উড়োজাহাজটির দুটো ব্ল্যাক বক্সের একটি পেয়েছেন।
রয়টার্স এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হতে পারেনি। যে ব্ল্যাক বক্স মিলেছে সেটি ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার নাকি ককপিট ভয়েস রেকর্ডার তা জানায়নি হিন্দুস্তান টাইমস। ব্ল্যাক বক্সগুলো পাওয়া গেলে তা থেকে দুর্ঘটনার কারণ জানা যেতে পারে। বিশ্লেষকরা আপাতত যান্ত্রিক ত্রুটি এবং পাখির আঘাতকে দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ বিবেচনা করছেন।
তিনি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বিমানবন্দরে নেমেই চলে যান পাশের মেঘানি নগরে, যেখানে এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনারটি আছড়ে পড়েছিল। তার সাথে ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল।
পরে মোদি হাসপাতালে গিয়ে দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া উড়োজাহাজের একমাত্র যাত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিশ্বাস কুমার রমেশের সাথেও দেখা করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ১২ বছর গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মোদি এর আগে আহমেদাবাদে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ‘স্তম্ভিত’ হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
মোদির আগে বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাম মোহন নাইড়ু কিনজারাপু।
এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে কিনজারাপু জানিয়েছেন। আবাসিক এলাকায় বিমান আছড়ে পড়ায় হতাহতের পরিমাণ অনেক বেশি হবে বলে আশঙ্কা থাকলেও উড়োজাহাজ আছড়ে পড়ার সময় মেডিক্যাল হোস্টেলটিতে খুব বেশি লোক ছিল না বলে জানিয়েছেন আশপাশের ভবনগুলোর বাসিন্দারা।
দুপুরের খাওয়ার সময় উড়োজাহাজটি হোস্টেলের ওপর পড়ে; দুর্ঘটনার পর বিমানের লেজের একটা অংশকে ভবনের মাথায় আটকে থাকতেও দেখা গেছে। আশপাশের বাসিন্দারা বলছেন, হোস্টেলটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছিল বছরখানেক আগে, যে কারণে সেটি পুরোপুরি ভর্তি ছিল না।
‘আমরা বাড়িতে ছিলাম, হঠাৎ এক শব্দ শুনি, মনে হয়েছিল বড় কোনো বিস্ফোরণ। এরপর আমরা দেখি পুরো এলাকাজুড়ে গাঢ় কালো ধোঁয়া’- বলেছেন ওই এলাকায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে থাকা ৬৩ বছর বয়সী নিতিন যোশি। সিসিটিভি ফুটেজে উড্ডয়নের পর উড়োজাহাজটিকে আবাসিক এলাকার ওপর দিয়ে খানিকক্ষণ উড়তে দেখা যায়। এর পরই উড়োজাহাজটি স্ক্রিন থেকে গায়েব হয়ে যায় এবং সাথে সাথে বিশাল এক আগুনের কুণ্ডকে ভবন ছাপিয়ে আকাশের দিকে উঠতে দেখা যায়।
দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানিও আছেন। শুক্রবার এয়ার ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী ক্যাম্পবেল উইলসনও দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন। এয়ার ইন্ডিয়া বলছে, দুর্ঘটনা নিয়ে তাদের তদন্ত শেষ হতে সময় লাগবে। আর উড়োজাহাজের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং জানিয়েছে, তদন্তে সহায়তা করতে তাদের একটি বিশেষজ্ঞ দল ভারতে যেতে প্রস্তুত রয়েছে।
বোয়িংয়ের কোনো ড্রিমলাইনার এবারই প্রথম বিধ্বস্ত হলো। ২০১১ সাল থেকে এই ড্রিমলাইনার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিকভাবে চলাচল করছে বলে এভিয়েশন সেইফটি নেটওয়ার্কের তথ্যে দেখা যাচ্ছে। ফ্লাইটরেডার টোয়েন্টিফোর বলছে, এয়ার ইন্ডিয়ার যে ড্রিমলাইনারটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেটি ২০১৩ সালে প্রথম উড়েছিল, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে এটি এয়ার ইন্ডিয়ার হাতে আসে।
ভারতে শেষ প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা হয়েছিল ২০২০ সালে, সেবারের ঘটনাতে জড়িত ছিল এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস। এটি এয়ার ইন্ডিয়ারই সস্তা পরিবহন শাখা। এই ক্যারিয়ারটি এর আগে ভারতের সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ২০২২ সালে এটি টাটা গ্রুপের হাতে চলে যায়। ২০২৪ সালে টাটা গ্রুপ এয়ার ইন্ডিয়ার সাথে ভিস্তারাকে এক করে ফেলে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের সাথে মিলে টাটা ভিস্তারা এয়ারলাইন্স বানিয়েছিল। দুর্ঘটনার পর এক বিবৃতিতে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন জানিয়েছে, যে ড্রিমলাইনারটি দুর্ঘটনায় পড়েছে তার চালকদের মধ্যে একজন সুমিত সাবারওয়ালের আট হাজার ২০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল। তার সাথে থাকা ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দারের ঝুলিতে ছিল এক হাজার ১০০ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা।