রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে উৎপাদিত ধনিয়া পাতা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। ধনিয়া পাতার মান ও ঘ্রাণ ভালো হওয়ায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে ধনিয়া পাতার আবাদ হয়েছে। শীত মৌসুমে এই আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত ১৫ আগস্ট শুক্রবার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও উজানচর ইউনিয়নের চর করনেশন, মজলিসপুর, দেবীপুর, মহিদাপুর ও কচালিয়া এলাকার পদ্মার চর ঘুরে দেখা যায়, শত শত কৃষাণ-কৃষাণী ক্ষেত থেকে ধনিয়া পাতা সংগ্রহ এবং সেগুলো আঁটি বেঁধে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করছে।
ধনিয়া মূলত মসলাজাতীয় ফসল হলেও সবজি হিসেবে এর সবুজ পাতার চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন তরকারিতে ধনিয়া পাতা অপরিহার্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, পাবনা, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গোয়ালন্দের পদ্মাচরের ধনিয়া পাতা সরবরাহ করা হচ্ছে।
ক্ষেতে কর্মরত কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক বিঘা ধনিয়া পাতা চাষ করতে সার, কীটনাশক, সেচ ও বাজারজাতকরণসহ খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। আর বিক্রি করে আয় হয় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। কৃষকরা জানান, বর্ষা মৌসুমে উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম হয়। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পোকার আক্রমণে অনেক সময় লোকসানের মধ্যে ফেলে দেয় চাষিকে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ধনিয়া পাতা বেশ লাভজনক আবাদ। বীজ বপনের পর ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যেই ধনিয়া পাতা বাজারজাত করা সম্ভব। এ কারণে প্রায় সারা বছরই চাষ করা হয় এই ফসল।
পদ্মার চরাঞ্চলে গেলে দেখা যায়, প্রতিটি জমিতে ২০-৩০ জন করে শ্রমিক সারিবদ্ধভাবে বসে ধনিয়া পাতা সংগ্রহ করছেন। তারা ছোট ছোট আঁটি বেঁধে স্তূপ করে রাখছেন। এরপর ঘোড়ার গাড়ি বা ভ্যানে করে ধনিয়া পাতা নৌকায় তোলা হচ্ছে। পরে বেপারিরা সেগুলো নদী পাড়ি দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় বেপারি আইয়ুব ও ফরিদ বলেন, ‘আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ক্ষেত ধরে প্রতি বিঘা ধনিয়া পাতা ৮০-৯০ হাজার টাকায় কিনে থাকি। বাজারে গিয়ে কেজি প্রতি ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি করি। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে উৎপাদন আরো বাড়বে এবং আমরা বেশি লাভবান হবো।’
কৃষক জুহাস মোল্লা, শামসু মোল্লøা ও বেলাল শেখ জানান, ধনিয়া চাষ এখন অনেক কৃষকের প্রধান আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। তবে বর্ষায় খরচ কম হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সময়েই বেশি। এ ক্ষেত্রে লোকসানের ঝুঁকিও থাকে। তবুও চরাঞ্চলের মানুষ ধনিয়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার বলেন, ‘ধনিয়া পাতা চাষ গোয়ালন্দের কৃষকদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ফসল। এ বছর ১০ হেক্টর জমিতে ধনিয়া পাতা চাষ করা হয়েছে। আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে তারা যাতে আরো বেশি সুযোগ সবিধা পান, সে বিষয়ে কৃষি অফিস থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
পদ্মার চরে উৎপাদিত ধনিয়া পাতা মান ও গুণে আলাদা হওয়ায় চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কৃষক ও বেপারিদের দাবি, সরকারের সহায়তা পেলে চরাঞ্চলকে ধনিয়া পাতার একটি বড় আবাদি অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।