- ট্রাফিক নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ ডিএমপির, জারি গণবিজ্ঞপ্তি
- এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চার ঘণ্টা টোলমুক্ত চলাচল
- কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ’লীগের নেতাকর্মীদের শনাক্তে নজরদারি
- গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় ৯ চেকপোস্ট
- ডিএমপির ৫০ থানায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
- বিমানবন্দর, গুলশান ও এভারকেয়ার এলাকায় ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ
দেড় যুগের নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাজুড়ে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, তার আগমন ঘিরে তাৎক্ষণিক কোনো নাশকতার নির্দিষ্ট শঙ্কা নেই। তবে সম্ভাব্য যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে পুরো ঢাকা মহানগর।
দলের নেতাকর্মীদের দৃষ্টিতে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন কেবল রাজনৈতিক ঘটনা নয় বরং আবেগ ও উৎসবের উপলক্ষ। দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরা এবং একই সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাসপাতালে ভর্তি থাকার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে আবেগ আরো তীব্র হয়েছে।
রাত থেকেই ঢাকায় নেতাকর্মীদের ঢল : গতকাল রাত থেকেই তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক ঢাকায় এসে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ অবস্থান নিয়েছেন সম্ভাব্য সমাবেশস্থলের আশপাশে, কেউ রাস্তার ধারে, আবার কেউ আত্মীয়স্বজনের বাসা ও আবাসিক হোটেলে। তবে হোটেল সঙ্কটে পড়েছেন অনেক নেতাকর্মী। বেশির ভাগ আবাসিক হোটেলের কক্ষ আগেই বুকিং হয়ে যাওয়ায় এবং অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
বিমানবন্দর থেকে গুলশান- পুরো রুটজুড়ে নিরাপত্তা বলয় : গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তারেক রহমান অবতরণের পর বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট সমাবেশস্থল, সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতাল হয়ে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত পুরো রুটে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পাশাপাশি মাঠে কাজ করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের আওতায় থাকবে পুরো যাত্রাপথ। মঙ্গলবার সকাল থেকেই গোয়েন্দারা সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
রাজধানীজুড়ে কভার্ট ও ওভার্ট নিরাপত্তা : তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে ‘কভার্ট অ্যান্ড ওভার্ট’-অর্থাৎ প্রকাশ্য ও গোপন- নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই হাজারের বেশি পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ডিএমপির ৫০ থানাকে বিশেষভাবে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় ৯টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। আশপাশের এলাকাতেও বিশেষ নজরদারি থাকবে। এ ছাড়া সোয়াট টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড দিয়ে তার বাসভবন ও অফিস এলাকা সুইপিং করা হয়েছে।
রেড-ইয়েলো-হোয়াইট জোনে নিরাপত্তা বিভাজন : নিরাপত্তা ছক অনুযায়ী এলাকা তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট।
রেড জোনে প্রবেশের জন্য বিশেষ সিকিউরিটি কার্ড বাধ্যতামূলক। ইয়েলো জোনেও আলাদা পরিচয়পত্র প্রয়োজন। হোয়াইট জোনে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারবেন। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, “তারেক রহমানের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”
ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ : জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গুলশান-২ ও এভারকেয়ার হাসপাতাল এলাকায় ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি। গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
টোলমুক্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিমানবন্দর এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টোলমুক্ত রাখা হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। নির্ধারিত সময়ে যানবাহনগুলো বিনা টোলে চলাচল করতে পারবে।
নিষিদ্ধ দলের নেতাকর্মীদের ওপর নজর : যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। নাশকতার আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া না হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
দলের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সক্রিয় : বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম। তার নেতৃত্বে চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সসহ একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। উল্লেখ্য, প্রায় দেড় যুগ পর আজ ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যা দলটির রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আবেগঘন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


