ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনের কাছে গতকাল মঙ্গলবার বিক্ষোভ করেছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। দিল্লিতে পুলিশের বসানো ব্যারিকেড ভেঙে হাইকমিশনের খুব কাছে চলে আসে বিক্ষোভকারীরা। এই বিক্ষোভের ডাক দেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং বজরং দলসহ কয়েকটি সংগঠন। বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী ব্যানার এবং প্ল্যাকার্ড ধরে ময়মনসিংহের ভালুকায় নিহত দীপু চন্দ্র দাসের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে স্লোগান দেয়। তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের কূটনৈতিক এলাকা থেকে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। দিল্লিতে এর আগেও হামলা ও বিক্ষোভ করেছে উগ্রবাদী হিন্দুরা।
এদিকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে গতকাল একই দিনে ঢাকা ও দিল্লিতে দুই দেশের হাইকমিশনারকে পাল্টাপাল্টি তলবের ঘটনা ঘটেছে।
কলকাতার বেকবাগানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি : নয়াদিল্লি ও উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি শহরের পর কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সামনে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে দফায় দফায় বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের ধস্তাধস্তি ও লাঠিচার্জ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে প্রিজনভ্যানে তোলে।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) ও হিন্দু জাগরণ মঞ্চসহ সঙ্ঘ পরিবারের একাধিক সংগঠনের ডাকে বিক্ষোভকারীরা কলকাতার বেকবাগান এলাকায় জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয়।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস হত্যার ঘটনার বিচারের দাবিতে তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়ার উদ্দেশ্যেই তারা সেখানে গিয়েছিলেন। তবে পুলিশের অনুমতি না থাকায় ব্যারিকেড অতিক্রম করতে না দিলে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে। ঘটনাস্থলে উত্তর কলকাতা জেলা বিজেপির সভাপতি তমোঘœ ঘোষ উপস্থিত হয়ে পুলিশের লাঠিচার্জের নিন্দা জানান এবং প্রকাশ্যে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর পাশে থাকার ঘোষণা দেন। এতে রাজনৈতিক মাত্রা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
যানজট ও নিরাপত্তা সতর্কতা : বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ বারবার ঘোষণা দেয় যে, কূটনৈতিক মিশনের সামনে জমায়েত বেআইনি এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিধি লঙ্ঘন করে। ব্যারিকেড থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ উপেক্ষা করায় পার্ক সার্কাস ও আশপাশ এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। উপ-দূতাবাস থেকে পার্ক সার্কাস মোড় পর্যন্ত যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
দিল্লি ও শিলিগুড়িতেও সহিংসতা : নয়াদিল্লিতেও ভিএইচপি ও বজরং দলের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। মঙ্গলবার সকালে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। অতিরিক্ত ব্যারিকেড বসানো হয় এবং মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী।
এর আগে ২২ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা সেন্টারে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে, যা নিয়ে ঢাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব
কূটনৈতিক সংবাদদাতা জানান, ভারতে বাংলাদেশের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের সামনে সহিংস বিক্ষোভ ও ভিসা সেন্টারে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এ ঘটনার কড়া নিন্দা জানানো হয়। ১০ দিনের ব্যবধানে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে আবারো তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এবার ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও কনসুলার কার্যালয়ে সাম্প্রতিক নিরাপত্তা ঘটনার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানাতে হাইকমিশনারকে তলব করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবনের সামনে সংঘটিত সহিংসতা এবং ২২ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে ভিসা সেন্টারে ভাঙচুরের ঘটনায় বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সাথে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ও সংশ্লিষ্ট স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মতে, এসব ঘটনা কেবল কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে না, বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তি ও সহনশীলতার নীতিকেও ক্ষুণœ করে।
বাংলাদেশ আশা প্রকাশ করেছে, ভারত সরকার আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী অবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে, যাতে কূটনৈতিক কর্মকর্তা ও স্থাপনার মর্যাদা ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকে।
এর আগে গত শনিবার রাতে দিল্লির চাণক্যপুরীর কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্র সেনা’র ব্যানারে বিক্ষোভ হয়েছে। ২০ থেকে ২৫ জন বিক্ষোভকারী কয়েকটি গাড়িতে করে এসে সেখানে বাংলাদেশবিরোধী স্লোগান দেয়। এ সময় দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হুমকি দেয়া হয়। রাত সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় ১৫ মিনিট বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ হাউজের সামনে অবস্থান করে ‘হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে হবে’, ‘হাইকমিশনারকে ধর’ বলে স্লোগান দিয়ে স্থান ত্যাগ করে। পরদিন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির কারণে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত ভারতের দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে সব ধরনের কনসুলার সার্ভিস এবং ভিসা প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।
বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে পাল্টা তলব : সকালে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলবের পর একই দিন সন্ধ্যায় দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে পাল্টা তলব করেছে ভারত।
সাউথ ব্লকে ডেকে নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বি শ্যাম বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে বলেছেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইস্যুতে অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। এই অভিযোগ খণ্ডন করে রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ইস্যুতে বাস্তবতার নিরিখে অবস্থান তুলে ধরছে।
বি শ্যাম বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতের হাইকমিশনসহ অন্যান্য স্থাপনা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়টি হাইকমিশনারকে জানান। তিনি একটি অভিযোগ সংবলিত পত্র হাইকমিশনারকে দিয়েছেন।
এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার উসকানি দিয়ে পলাতক শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ অব্যাহত রাখায় ভারতের কাছে গুরুতর উদ্বেগ জানিয়েছিল। মন্ত্রণালয় একই সাথে বাংলাদেশী রাজনৈতিক নেতা শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার চেষ্টায় জড়িত সন্দেহভাজনদের ভারতে পালানো রোধ করতে এবং যদি তারা ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়, তা হলে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করার জন্য ভারতের সহযোগিতা চেয়েছিল।
এর পর ১৭ ডিসেম্বর দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে ক্রমাবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লির গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল। এ সময় বাংলাদেশের কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের প্রতি হাইকমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, যারা ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন ঘিরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল।
কূটনীতি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও আঞ্চলিক বার্তা : বিশ্লেষকদের মতে, কলকাতা ও দিল্লিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের সামনে ধারাবাহিক বিক্ষোভ নিছক আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়; বরং এর পেছনে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর চাপ সৃষ্টি কৌশল এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সংবেদনশীল প্রেক্ষাপট কাজ করছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কোনো দেশের কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব। একাধিক শহরে একযোগে বিক্ষোভ ও হামলার ঘটনা সেই দায়িত্ব পালনে ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশ সরকার এখন বিষয়টিকে কেবল আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়; বরং কূটনৈতিক নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার প্রশ্ন হিসেবে দেখছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে এটি দক্ষিণ এশিয়ার ইতোমধ্যে স্পর্শকাতর রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক টানাপড়েন আর নিছক দ্বিপক্ষীয় ভুল বোঝাবুঝির পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই। নয়াদিল্লি ও কলকাতাসহ একাধিক শহরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের সামনে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর সহিংস বিক্ষোভ, ভিসা সেন্টারে ভাঙচুর এবং এসব ঘটনায় ভারতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ঢাকার অসন্তোষ; সব মিলিয়ে সম্পর্কটি এক সংবেদনশীল মোড় নিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, এ টানাপড়েনের বাস্তব ফল কী হতে পারে এবং তা কতদূর গড়াতে পারে।
কূটনৈতিক সম্পর্কের তাপমাত্রা কেন বাড়ছে : কূটনৈতিক সূত্রগুলোর মতে, বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এসব ঘটনাকে কেবল আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হিসেবে দেখছে না; বরং বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক নিরাপত্তা ও ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘনের সম্ভাব্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করছে। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে প্রকাশ্যভাবে নিন্দা জানানো তারই প্রতিফলন।
বাংলাদেশের দৃষ্টিতে একাধিক শহরে একই ধরনের বিক্ষোভ ও হামলা ‘আকস্মিক’ নয়; বরং এতে কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতের রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা কতটা কার্যকর সে প্রশ্ন সামনে এসেছে।
নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিধির চাপ : আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো দেশের কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বাগতিক দেশের বাধ্যতামূলক দায়িত্ব। বিশ্লেষকদের মতে, কলকাতা, দিল্লি ও শিলিগুড়িতে ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহ এ দায়বদ্ধতা পালনে ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। বিষয়টি দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশ চাইলে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন তুলতে পারে, যা ভারতের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করবে। একই সাথে উগ্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়, তাহলে ‘নন-স্টেট অ্যাক্টর’ ব্যবহার করে কূটনৈতিক চাপ তৈরির অভিযোগও জোরালো হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রতিফলন : এ টানাপড়েন দুই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় মর্যাদাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ভাষ্য ইতোমধ্যেই শক্তিশালী হয়েছে। কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা প্রশ্নে ভারতের ভূমিকা নিয়ে জনমত আরো সংবেদনশীল হয়ে উঠছে, যা অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর কঠোর অবস্থান নেয়ার চাপ বাড়াতে পারে। অন্য দিকে ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর ভারতের রাজনীতিতে বাংলাদেশ ইস্যু দীর্ঘদিন ধরেই মেরুকরণের হাতিয়ার। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর সক্রিয়তা সেই রাজনৈতিক বাস্তবতাকেই নতুন করে সামনে আনছে।
অর্থনীতি ও বাস্তব সহযোগিতায় নীরব প্রভাব : বিশ্লেষকদের মতে, তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা বা বড় অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা কম। তবে কূটনৈতিক শীতলতা বাড়লে সীমান্ত বাণিজ্য, ট্রানজিট সুবিধা ও যৌথ অবকাঠামো প্রকল্পে প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিদ্যুৎ, রেল যোগাযোগ ও জ্বালানি সহযোগিতার মতো খাতে অগ্রগতি ধীর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ধরনের ‘নীরব স্থবিরতা’ দৃশ্যমান না হলেও দীর্ঘমেয়াদে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি কমিয়ে দেয়।
সামনে কোন পথে সম্পর্ক : কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এ টানাপড়েন যুদ্ধ বা সম্পর্কচ্ছেদের দিকে যাবে না। সবচেয়ে সম্ভাব্য দৃশ্যপট হলো প্রকাশ্য উত্তেজনা কমিয়ে নীরব কূটনৈতিক চ্যানেলে সমঝোতার চেষ্টা। তবে আস্থার ঘাটতি দীর্ঘদিন থেকে যেতে পারে। স্পষ্ট করে বলা যায়, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন আর আগের মতো নির্বিঘœ নয়। এটি প্রবেশ করছে এমন একপর্যায়ে, যেখানে প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি বক্তব্য ও প্রতিটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নতুন করে হিসাব কষে নিতে হচ্ছে।


