যারা দো-জাহানে ক্ষতিগ্রস্ত

Printed Edition

মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম ইব্রাহীম

পাপের শাস্তি শুধু আখরাতে নয়, দুনিয়াতেও কিছু পাপিষ্ঠ ভোগ করবে বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কুরআনুল কারিমের আলোকে তারা হলো-

যারা আল্লাহর আনুগত্যে অটল থাকে না : যারা দুর্বল আকিদা-বিশ্বাস নিয়ে অপরিপক্ব হয়ে দ্বিধার সাথে আল্লাহর ইবাদত করে। তারা যখন কোনো বিষয়ে সফলতা অর্জন করে; তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে আর যখন তাদের উপর কোনো মুসিবত আরোপিত হয়; তখন তারা পাপের পথে ঝুঁকে পড়ে। সূরা হজের ১১ নম্বর আয়াতে কারিমায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধার সাথে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করে। এরপর তার মঙ্গল হলে তাতে তার চিত্ত প্রশান্ত হয় এবং কোনো বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এটাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি।

যারা ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম গ্রহণ করে : যারা ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো পথ, মত, বা জীবন ব্যবস্থা তালাশ করবে, তারা আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সূরা আলে ইমরানের ৮৫ নম্বর আয়াতে কারিমায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা বলেন, আর যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো জীবনব্যবস্থা তালাশ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না। এরপর আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

যারা আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ হওয়াকে মিথ্যা মনে করে : পরকালে একদিন সবাইকে আল্লাহ তায়ালার সামনে হাজির হতে হবে এবং সব কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে। কিন্তু যারা মনে করে আল্লাহর সামনে সাক্ষাৎ করতে হবে না। পরকালে তাদের ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা সূরা আনআমের ৩১ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেন, আর যারা আল্লাহর সামনে সম্মুখীন হওয়াকে মিথ্যা বলেছে, অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আর চিরস্থায়ী জান্নাতের সুসংবাদ ওই ব্যক্তির জন্য যে তার মহান রবের সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে নফসের আনুগত্য থেকে নিজেকে বিরত রাখে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, আর যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দাঁড়ানোর ভয় করেছে এবং নিজেকে কুপ্রবৃত্তি থেকে বিরত রেখেছে। নিশ্চয় জান্নাত হবে তার আবাসস্থল। (সূরা আন নাযিআত : ৪০, ৪১)

যারা মনে করে যে, পরকালে তার বিপক্ষে কেউ সাক্ষ্য দিবে না : যারা মনে করে তাদের কৃতকর্মের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্য দেবে না। এজন্য তারা যা ইচ্ছা তাই করত। তাদের মনে থাকা উচিত যে, সেই দিন তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। সূরা হা-মীম সেজদার ২২ ও ২৩ নম্বর আয়াতে কারিমায় আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ ফরমান, তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে না কান, চোখ ও ত্বক-এ বিশ্বাসে তোমরা এদর কাছে কিছু গোপন করতে না; তাছাড়া তোমরা ভাবতে যে তোমরা যা করতে, তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না, তোমাদের রব সম্পর্কে এই ধারণাই তোমাদের ধ্বংস করেছে এবং তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছ।

সূরা ইয়াসিনের ৬৫ নম্বর আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমান, আমি আজ এদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেবো। এদের হাত কথা বলবে আমার সাথে এবং এদের পা সাক্ষ্য দেবে এদের কৃতকর্মের।

যারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় ও বক্রতা সৃষ্টি করে : যারা মানুষকে আল্লাহর পথে আসতে বাধা দেয় ও বক্রতা সৃষ্টি করে তারা আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সূরা হুদের ১৯ ও২২ নম্বর আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বাধা দেয় এবং তাতে বক্রতা খুঁজতে চায়, আর আখিরাতকে অস্বীকার করে। এরা নিশ্চিত যে, পরকালে তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।

যারা ধনসম্পদের মোহে পড়ে আল্লাহকে ভুলে যায় : যারা সম্পদ উপার্জন করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত থেকে অমনোযোগী হয়ে যায় এবং আল্লাহকে ভুলে যায় তারা আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ আর তোমাদের সন্তানাদি তোমাদেরকে যেন আল্লাহর স্মরণ হতে অমনোযোগী করে না দেয়। যারা এমন করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা মুনাফিকুন : ৯)

লেখক : খতিব বড় চাঁদপুর পূর্বপাড়া জামে মসজিদ মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা