‘ঋতু আমাদের মধ্যে ব্যতিক্রম। সেই বাংলাদেশের নারী হকিতে প্রথম হিজাবধারী খেলোয়াড়।’ কিশোরগঞ্জের এক নারী হকি খেলোয়াড়ের তথ্য ধরেই ঋতুকে খোঁজা। সদ্যসমাপ্ত ব্র্যাক ব্যাংক ডেভেলপমেন্ট কাপ হকির সময়ই তাকে পাওয়া গেল। মাঠে অন্য নারী হকি খেলোয়াড়রা যখন সাধারণ খেলার পোশাকে তখন ঋতুকে পাওয়া গেলো মাথা ওড়না দিয়ে ঢেকে পুরুষ সিনিয়র জাতীয় দলের অনুশীলন দেখতে। ঋতুর মতো এখন নারী হকিতে আরো কয়েক খেলোয়াড়ও হিজাব পরে খেলেন। এই সংখ্যা অবশ্য চার-পাঁচ এর বেশি হবে না। অন্য দিকে বিকেএসপির হকিতে হিজাব পরে ‘বিল্পব’ ঘটিয়েছেন নাদিরা। নানা বাধা পেরিয়ে তিনিই বিকেএসপির প্রথম হিজাবধারী নারী হকি খেলোয়াড়। এখন অবশ্য বিকেএসপির পর্ব চুকিয়েছেন ঝিনাইদহের এই মেয়ে। এবারের ডেভেলপমেন্ট হকিতে খেলেছেন নিজ জেলার হয়ে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ যুব গেমস দিয়ে হকি খেলা শুরু করেছেন ঋতু। আর নাদিরার হকিতে আসা ২০১৯ সাল থেকে। কিশোরগঞ্জেরই জাতীয় হকি দলের খেলোয়াড় রাকিবুল হাসান রকি। ঋতু জানান, ‘রকি ভাইই আমাকে হিজাব পরে হকি খেলতে উৎসাহিত করেছেন। বলেছেন, মুসলিম নারী হিসেবে আমাদের হিজাব পরা উচিত। সেই থেকে আমি হিজাব পরেই হকি খেলছি।’ এই ডিফেন্ডারের মতে, ‘বেশ ভালোই লাগছে হিজাব পরে খেলতে। কোনো সমস্যাই হচ্ছে না। একেবারেই অভ্যাস হয়ে গেছে।’ হকির পাশাপাশি হ্যান্ডবল ও ভলিবল খেলেন ঋতু। হ্যান্ডবলে তিনি গোলরক্ষক। সেখানেও তার মাথায় থাকে হিজাব। ঋতু জানান, ‘আমার দেখাদেখি আরো কয়েকজন খেলোয়াড় হিজাব পরে খেলছেন। এতে বেশ ভালোই লাগছে আমার।’ এখনো বাংলাদেশ দলে খেলা হয়নি। ছিলেন অনূর্ধ্ব-২১২ দলের ক্যাম্পে। এখন তার স্বপ্ন হিজাব পরেই লাল-সবুজ জার্সিতে বাংলাদেশ দলে খেলা।
বিকেএসপির সাবেক ছাত্রী নাদিরা। ২০২৪ সালে এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে এখন ঝিনাইদহের একটি কলেজে পড়ছেন। নাদিরা জানান, আমি ২০১৯ সাল থেকে হকি খেলা শুরু করেছি। আর হিজাব পরে মাঠে নামা শুরু ২০২০ সাল থেকে। ২০১৯ সালেই সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এএইচএফ কাপ অনূর্ধ্ব-২১ হকিতে খেলেছেন নাদিরা। তখন অবশ্য হিজাব পরে খেলা হয়নি তার। মাঝে দেড় বছরের মতো হাঁটুর ইনজুরিতে ভুগেছেন তিনি। আড়াই লাখ টাকা খরচ করে ভারতে গিয়ে হাঁটুর চিকিৎসা করিয়েছেন। এবারের ডেভেলমপন্টে কাপ দিয়েই ফের হকিতে ফেরা। এখন তার লক্ষ্য আবার জাতীয় দলে ফেরা। আর সেই ম্যাচ তিনি খেলতে চান হিজাব পরেই।
নাদিরা জানান, ‘আমিই বিকেএসপির প্রথম হিজাবধারী হকি খেলোয়াড়। আমার পর আরো অনেকেই হিজাব পরে খেলা শুরু করেছিল। বিকেএসপিতে বাধার কারণে তাদের অনেকেই হিজাব পরা ছাড়তে বাধ্য হন। আমাকেও নানান কথা বলা হতো। বলা হয়েছিল আমি নাকি বিকেএসপিকে মাদরাসা বানিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আমার হকি কোচ আমার পাশে ছিলেন। তাই আমি হিজাব পরেই খেলা অব্যাহত রাখি।’ আরো যোগ করেন, আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় হকি খেলা শুরু করি। তখন বুঝতাম না। তাই সে সময় হিজাব ছাড়াই চলাচল করতাম। তবে এখন বড় হয়েছি। বুঝতে শিখেছি। তাই মাঠেও মুসলিম রীতি মেনে চলার চেষ্টা করি।’ হকির পাশাপাশি অ্যাথলেটিক্সও খেলেন তিনি।