বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে বিদেশী অর্থছাড় এবং নতুন প্রতিশ্রুতি উভয়ই কমেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ তথ্য বলছে, ৯১৩ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক অর্থ পাইপলাইনে অলস পড়ে আছে। একই সময়ে বিদেশী ঋণ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বেড়েছে ২১.২২ শতাংশ।
অর্থছাড়ে বড় হ্রাস: গত অর্থবছরে প্রকল্প সহায়তা ও ঋণ মিলিয়ে মাত্র ৮৫৬ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে, যেখানে আগের বছর ছিল ১০২৮ কোটি ডলার। অনুদানও কমেছে একই সময়ে। অনুদান ৮৫ কোটি ডলার থেকে নেমে এসেছে ৪৫.৫ কোটি ডলারে।
প্রতিশ্রুতি কমেছে ২২.৪৯ শতাংশ: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট প্রতিশ্রুতি এসেছে ৮৩২ কোটি ডলার, যেখানে আগের বছর এটি ছিল ১০৭৩ কোটি ডলার। চীন, ভারত ও রাশিয়া নতুন কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি, যদিও পুরনো প্রতিশ্রুতি থেকে অর্থ ছাড় করেছে।
দেনা পরিশোধে চাপ বৃদ্ধি : বিদেশী ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে সরকারকে পরিশোধ করতে হয়েছে ৪০৮.৬৯ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৭১.৫৩ কোটি ডলার বেশি। এ সময়ে আসল পরিশোধ হয়েছে, ২৫৯.৫১ কোটি ডলার। আর সুদ পরিশোধ হয়েছে, ১৪৯.৮৩ কোটি ডলার।
কেন কমেছে অর্থছাড় ও প্রতিশ্রুতি?
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন: ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন যদি মন্থর হয়, তবে উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থছাড়ে আগ্রহ হারায়। বর্তমান সরকার অনুমোদনে সতর্ক হওয়ায় একনেকে প্রকল্প সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।’
ভবিষ্যতের জন্য বার্তা : সরকারি ও পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টদের মতে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের যুগল আঘাতে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন-দু’টিই কমেছে। এতে বিদেশী অর্থছাড় কমার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গতি থমকে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বেশ কটি সুপারিশ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা, বাস্তবায়নে দক্ষতা বৃদ্ধি, দাতা সংস্থার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও আপডেট এবং নতুন প্রতিশ্রুতি বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা।