হকির হামজা হ্যাটট্র্রিকম্যান আমিরুল

জসিম উদ্দিন রানা
Printed Edition
অনূর্ধ্ব-২১ বিশ্বকাপ হকিতে টানা দুই হ্যাটট্রিক করা আমিরুল : নয়া দিগন্ত
অনূর্ধ্ব-২১ বিশ্বকাপ হকিতে টানা দুই হ্যাটট্রিক করা আমিরুল : নয়া দিগন্ত

তামিলনাড়– চেন্নাই থেকে

হামজা চৌধুরী দেশে আসার পর একটা হাইপ তৈরি হয়েছে। দেশের ফুটবলকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। যে ফুটবল থেকে দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, তারাই এখন স্টেডিয়ামমুখো হয়েছেন, হচ্ছেন। বিশেষ করে তার ব্যবহার এবং মাথায় ভিন্নধর্মী ঝাঁকড়া চুল আকৃষ্ট করেছে সর্বস্তরের খেলাপ্রেমীদের। চলমান জুনিয়র বিশ্বকাপ হকিতে হ্যাটট্রিক করেছেন আমিরুল ইসলাম। পিসি থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনটি গোল করে নতুনভাবে আলোচনায়। কারণ তার হামজার চুলের সাথে তার চুল মিল থাকায় তার নামকরণ হয়ে গেছে হকির হামজা। টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক তার।

হামজা বিষয়ে আমিরুলের মন্তব্য, ‘ফুটবলের মাধ্যমে হামজা ভাইকে চিনি। তিনি যে বড় তারকা, তা দেশে আসার আগে বুঝা যায়নি। ফুটবলের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর তিনি। তার জন্যই বাংলাদেশের ফুটবলকে নতুনভাবে চেনা। আমরা তো বার্সেলোনা, রিয়াদ মাদ্রিদ, চেলসি, ম্যানসিটি, ম্যানইউ, নতুন করে আল নাসের, মিয়ামি নিয়ে ব্যস্ত। লেস্টার সিটির নাম ভাসা ভাসা ছিল। হামজা আসার পরই তো সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল।’

হামজাকে দেখেই কি চুল অমন করে রাখা হয়েছে। আমিরুল তার চুলের বর্ণনা দিলেন এভাবে, ‘ আমি এভাবে চুল রাখি ২০২২ সালে থেকে। বাই বর্ন আমার চুল এমনই। বাট আগে হামজা ভাই ছিলেন না, তাই হাইলাইট হই নাই। হকিতে এটার প্রচলনও নাই। হামজা ভাই আসার পার তার ফেসকাটিং, একটিভিটি, পারফরম্যান্সের পর তার হেয়ার স্টাইল্টা পপুলার হয়েছে। এটার পরই আমার দিকে নজর পড়ে অনেকের। বলছেন আমি হামজার কাটিং নকল করেছে। শুনতে ভলোই লাগে। অবশ্য এটাও ঠিক যে, হামজা আসার পর আমার চুলের যতœ নেয়াও বেড়েছে।’

হামজার মতো হতে চান কি না। এমন প্রশ্নে হাসোজ্জ্বল আমিরুলের উত্তর, ‘হামজা ভাই যেহেতু ফুটবলের প্রতিনিধিত্ব করছেন, আমিও সে রকম হকিকে নিয়ে চিন্তা করি। আমি যেহেতু হকিতে আছি। যত দিন আছি চেষ্টা করব সর্বোচ্চ স্টেজে নিয়ে যেতে। খালি চুল নয়, বিশ্বমঞ্চে যাওয়ার চেষ্টাও থাকবে।’

আমিরুল ইসলাম। সিনিয়র টিমে থাকতে ছিলেন জুনিয়র। আর জুনিয়র টিমে হয়ে গেলেন সিনিয়র। নুুরুল ইসলাম নুরু। ফরিদপুরের কমলাপুরে জন্ম নেয়া আমিরুলের হকি শিক্ষাগুরু। সম্পর্কে আবার চাচাও হন। স্কুলে কোচিং করার সময়েই কোচের নজরে পড়েন। ইন্টারস্কুলের কোচিং করানোর সময় তাকেও অনুশীলনে ডেকে নেন। ছোটবেলা থেকেই স্টিকের কারিকুরিতে সেরা থাকায় ২০১৫ সালে বিকেএসপিতে ট্রায়াল দেয়ার পর সাত দিনের ক্যাম্পে টিকে যান। এরপর ২০১৬ সালে থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভিন্ন এক জগতে আট বছর পার করেন। কাওছার আলী, জাহিদ হোসেন রাজু ও তারিকুজ্জামান নান্নুর অধীনে পোড় খেতে খেতে খাঁটি স্বর্ণ হন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগে অধ্যয়নরত।

দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আমিরুল মেঝো। বড় ভাই শিক্ষকতা করেন। বোন সবার ছোট, বিবাহিত। উনারা কেউ হকির সাথে জড়িত নন। তারপরও কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াননি। বরং উৎসাহ দিয়েছেন। আমিরুল মানছেন, ‘যেকোনো প্রফেশনে পরিবারের সাপোর্ট অনেক জরুরি।’

আমিরুল যোগ করেন, ‘স্পেসিফিক কিছু টুর্নামেন্ট যেমন এশিয়ান গেমস, কোয়ালিফায়ার, এএইচকাপে লংটাইম ধরে আবদ্ধ হয়ে আছি। কেন প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ হচেছ না, সিরিজি হচ্ছে না। কালচারটা এভাবেই হয়ে আসছে। বাহফে কর্তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে তারা যেন আন্তর্জাতিকমানের টুর্নামেন্ট করেন, নার্সারি থেক জুনিয়র লেভেল পর্যন্ত নতুন করে সাজান। মন্ত্রণালয়ে যারা আছেন তাদেরকে বুঝানো কিভাবে ডেভেলপ করা যায়, সঠিক পরিকল্পনা করে হকিটাকে এেিগয় নিয়ে যাওয়া।’

প্রফেশন হিসেবে হকিকে নেয়ার মতো দুঃসাহস কেউ এখনো দেখাতে পারেনি। যেখানে বছরের পর বছর লিগ হয় না। কমিটি যায়, নতুন কমিটি আসে, ফের মুখথুবড়ে পড়ে। সকলে পরস্পর দোষারোপে ব্যস্ত। খেলোয়াড়দের কথা কেউ চিন্তা করেন না। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনে (বাহফে) সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারটাই যেন মুল মন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ওটির জন্য নিয়ম পাল্টে যায় ক্ষণে ক্ষণে। কেউ কেউ একটি দু’টি টুর্নামেন্ট করে ক্রেডিট নিতে চায়। কিন্তু আসল যে লিগ, সেটি করতে পারেন না। ২০১০ সালের পর থেকে এটি আরো বেশি সামনে এসেছে।