আজ বিশ্ব স্পাইন দিবস

দেশে স্পাইনের রোগী ৫০ লাখ চিকিৎসক দুই শতাধিক

উন্নত চিকিৎসা নিতে অনেকেই বিদেশ চলে যাচ্ছেন

হাজার হাজার টাকার ডায়াগনোসিস করার পরও সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে রোগীদের বিদেশমুখী হতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে চিকিৎসকরাই বলছেন, আরো বেশিসংখ্যক নিউরোলজিস্ট অথবা স্পাইন সার্জন তৈরি করতে হবে এবং তা করতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। তাহলে স্পাইন সমস্যার সমাধান ছাড়াও নিউরোলজির অন্যান্য রোগীও চিকিৎসা পাবেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক
Printed Edition

দেশে স্পাইনের রোগী ৫০ লাখের বেশি; কিন্তু চিকিৎসক আছেন মাত্র দুই শ’র কিছু বেশি। একজন ভালো চিকিৎসকের দেখা পেতে অনেক দিন লাগে। ফলে অনেকেই সুস্থ হতে বিদেশ চলে যাচ্ছেন। তা ছাড়া অপচিকিৎসার ব্যাপারটি তো আছেই। অনেকসময় হাজার হাজার টাকার ডায়াগনোসিস করার পরও সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে রোগীদের বিদেশমুখী হতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে চিকিৎসকরাই বলছেন, আরো বেশিসংখ্যক নিউরোলজিস্ট অথবা স্পাইন সার্জন তৈরি করতে হবে এবং তা করতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। তাহলে স্পাইন সমস্যার সমাধান ছাড়াও নিউরোলজির অন্যান্য রোগীও চিকিৎসা পাবেন।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার স্পাইনের রোগী চিকিৎসা নিতে পারেন। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু সেন্টারে বা হাসপাতালে অথবা প্রাইভেট চেম্বারে উন্নতমানের চিকিৎসা এমনকি বিশ্বমানের চিকিৎসা হচ্ছে। বাংলাদেশের কিছু স্পাইন সার্জনের কাছে প্রচুর রোগী আসেন এবং অপারেশন করছেন। তবে তারা সংখ্যায় খুবই কম। বেসরকারি হাসপাতাল অথবা চেম্বারে স্পাইন চিকিৎসা ব্যয়বহুল হলেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখনো খুবই স্বল্প অর্থ ব্যয়ে উন্নতমানের চিকিৎসা হয়ে থাকে। এসব হাসপাতালে রোগী বেশি; কিন্তু চিকিৎসা অথবা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কম বলে একটি অপারেশনের জন্য অনেক দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক বাড়ানো এবং একই সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হলে সরকারি হাসপাতালগুলো হয়ে উঠতে পারে বিশ্বমানের স্পাইন চিকিৎসার কেন্দ্র। কারণ এখনকার তরুণ চিকিৎসকরা অনেক বেশি দক্ষতার সাথে কাজ করতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট সার্জন অধ্যাপক ইউসুফ আলী।

নিউরো সার্জনরা জানিয়েছেন, শিশুদের জন্য স্কুলে ব্যবহৃত বেঞ্চ বা চেয়ারগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ ছাড়া দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভারী স্কুলব্যাগ বহন করে। দীর্ঘসময় ভারী ব্যাগ বহনের কারণে অনেকের মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়, পিঠে-ঘাড়ে চাপ পড়ে। অল্প বয়স থেকেই তারা মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে বেড়ে ওঠে। পরে ৪০-৫০ বছরে পৌঁছালে এদের অনেকেই মেরুদণ্ডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য শ্রেণিকক্ষে বসার ব্যবস্থা থাকে না। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তাদেরও মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

নিউরোলজিস্টরা বলছেন, অনেকসময় গাছ থেকে পড়ে যাওয়া ও আঘাতজনিত সমস্যা হলে অস্ত্রোপচার করতে হয়। অন্য রোগীদের ইনজেকশন, ওষুধ ও থেরাপি-জাতীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত ৪০ হাজার রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। এদের অধিকাংশই অর্থ অথবা সঠিক চিকিৎসক না পেয়ে চিকিৎসার বাইরে থেকে যান। চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের ঘাটতি ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে স্পাইনের ৫০ শতাংশ রোগী চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।

মেরুদণ্ড বা স্পাইনের সমস্যাগুলোর মধ্যে কোমর ও ঘাড় ব্যথা, স্লিপ্ড ডিস্ক, মেরুদণ্ডের টিউমার অন্যতম। এই সমস্যাগুলো হলো : দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, অসাড়তা, দুর্বলতা, ভারসাম্যহীনতা এমনকি মলমূত্র নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়ে থাকে।

এই সমস্যাগুলোর জন্য একজন নিউরো সার্জন অথবা অর্থোপেডিক স্পাইন সার্জনের কাছে যেতে হবে। ডায়াগনোসিসের মধ্যে এমআরআই, সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়। অপারেশন ছাড়াও রক্ষণশীল (কনজারভেটিভ) চিকিৎসা দিয়েও রোগ সারানো যায় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।