২ দশকের মধ্যে এডিপির বাস্তবায়ন হার সর্বনিম্ন

বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ২৬ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। বছর শেষে খরচ হয় মাত্র এক লাখ ৫২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন হার ৬৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

বিশেষ সংবাদদাতা
Printed Edition
  • করুণদশা দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের
  • ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে বাস্তবায়ন হার ছিল ৯২ শতাংশ

দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বিশাল আকারের অর্থব্যয়ে উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবায়নের হার প্রতি বছরই আগের বছরের তুলনায় কমে রেকর্ড করছে। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হার গত ২০ বছরের বা দুই দশকের মধ্যে সর্বনি¤œ, অর্থাৎ ৬৭.৮৫ শতাংশ। আর স্বাস্থ্যসেবা খাতের অবস্থা আরো করুণ। ২০০৪-২০০৫ অর্থ বছরে বাস্তবায়ন হার ছিল ৯২ শতাংশ। গেল বছরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বাস্তবায়ন হার মাত্র ২১.৭৪ শতাংশ। অথচ এই বিভাগটি সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাপ্ত বিভাগের মধ্যে একটি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ওয়েবসাইটে দেয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য থেকে এসব জানা গেছে। প্রকল্প পরিচালক পালিয়ে যাওয়া, ঠিকাদারদের খুঁজে না পাওয়ার কারণে প্রকল্পের কাজ থমকে ছিল বলে আইএমইডির কর্তারা জানান।

আইএমইডির তথ্য বলেছে, বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ২৬ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। বছর শেষে খরচ হয় মাত্র এক লাখ ৫২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন হার ৬৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এর মধ্যে জিওবি হলো ৬৭.৩৩ শতাংশ, পিএ হলো ৬৫.৫৩ শতাংশ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থ ৯৩.২১ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫২ হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। এমন ঘটনা খুব একটা ঘটেনি। কোভিডের শুরুর বছরে আগের বছরের চেয়ে কম খরচ হয়েছিল। তবে এত ব্যবধান হয়নি। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপির এক লাখ ৫২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা খরচ হয়। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির দুই লাখ পাঁচ হাজার ১১৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। ২০০৪-০৫ অর্থবছরের পর থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত সংশোধিত এডিপির ৮০ শতাংশ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু গত অর্থবছরের মতো এত কম বাস্তবায়ন হয়নি।

স্বাস্থ্যসেবা খাতের করুণদশা

গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি বা প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে খারাপ করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। এ বিভাগের ১৫টি প্রকল্পের অনুকূলে দুই হাজার ২৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বছর শেষে এসব প্রকল্পের কর্মকর্তারা মাত্র ৩৫০ কোটি টাকা খরচ করেছেন। এই বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার মাত্র ১৫ শতাংশ। শুধু স্বাস্থ্যসেবা খাতের হার হলো ২১.৭৪ শতাংশ। ১৯ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার ৬৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর ব্যয় করতে পেরেছে মাত্র এক হাজার ২৩৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

সবচেয়ে খারাপ করা শীর্ষ পাঁচের মাধ্যমে থাকা অন্য চারটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হলো নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (৩২ শতাংশ), বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (৩৭ শতাংশ), ভূমি মন্ত্রণালয় (৩৭ শতাংশ)। অন্য দিকে সবচেয়ে ভালো করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এই বিভাগ তাদের বরাদ্দের ৯৮ শতাংশ টাকা খরচ করেছে।

আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হয়নি বললেই চলে। এ ছাড়া আন্দোলনের সময়ে বেশ কয়েক দিন কারফিউ ছিল। বছরজুড়ে এক ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতাও ছিল। গত বছর ক্ষমতার পটপরিবর্তনের বেশ কয়েকজন প্রকল্প পরিচালককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। এসব কারণে প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা পুরোটা খরচ যায়নি।