জমে উঠেনি হাট চাহিদা মাঝারি গরু

আব্দুল কাইয়ুম
Printed Edition

কোরবানির পশুর হাট

  • প্রস্তুত হাট, ক্রেতার অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা
  • রাজধানীর ১৯ জায়াগায় বসছে অস্থায়ী পশুর হাট
  • আজ থেকে শুরু আনুষ্ঠানিক কেনাবেচা

নাতি তাওসিফ ইবনে মুবিনকে নিয়ে রাজধানীর হাজারীবাগ গরুর হাটে আসেন একই এলাকার হাজী মো: নুরুল ইসলাম মুন্সি। উদ্দেশ্য নাতিকে নিয়ে ঘুরে দেখা এবং তার পছন্দ মতো একটি গরু ক্রয় করা। কিন্তু অনেক দেখার পরেও তাদের বাজেট অনুযায়ী না পেয়ে কিছুটা হতাশ হন হাজী মো: নুরুল। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট এক লাখ থেকে এক লাখ ২৫ হাজারের মধ্যে মাঝারি সাইজের একটি গরু কেনা। কিন্তু পাইকাররা যে দাম হাকাচ্ছে তাতে মনে হয় না আজ কিনতে পারবো। এবার দাম কিছুটা কম থাকার কথা থাকলেও নেই। তা ছাড়া এখনো জমে উঠেনি বাজার, তাই ক্রেতাদের আনাগোনাও কম। হয়তো ঈদের আগে কিছুটা কমে পাবো।

এ ছাড়াও আবির নামের অন্য এক ক্রেতা বলেন, এখনো ঈদের কিছু দিন বাকি আছে। তাই বুধবার থেকে বাজার ভালোভাবে জমে উঠবে বলে মনে করছি। আমরা সাধারণত ঈদের এক থেকে দুই দিন আগে গরু কিনে থাকি। কারণ বাসায় রাখার মতো জায়গা ও লালন-পালন করার মতো অবস্থা নেই। আজকে ঘুরে দেখতে আসছি, তবে পছন্দ হলে কিনতেও পারি। গরুর দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। দাম কিছুটা কমলে তবেই কিনবো। যেহেতু একা কোরবানি দেবো, তাই মাঝারি সাইজের গরু কেনার চিন্তা। তবে তারা যেই দাম চাচ্ছে তাতে বাজেট আরো বাড়াতে হবে বলে মনে করি। মাঝারি ধরনের গরুর চাহিদা বেশি হওয়ায় এগুলোর দামও বেশি চাচ্ছে। ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে এক লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাজারীবাগ গরুর হাটে সড়কে দুই ধারে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কোরবানির পশু। তবে হাট এখনো পুরোপুরি জমে উঠেনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে বেপারীরা আসলেও সেই তুলনায় নেই ক্রেতার সংখ্যা। অনেকে কেনার চেয়ে দেখার জন্য বেশি আসছেন বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তাই ব্যবসায়ীদের অনেকে অলস সময় পার করছেন। বাজারে দেখা যায়, মাঝারি ও ছোট গরুর দিকে ক্রেতাদের বেশি আকর্ষণ। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে শুধু মাঝারি ধরনের গরুর দামা-দামি করতে লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া রাজধানীর অন্যান্য হাটের একই চিত্র লক্ষ করা গেছে।

তবে বিক্রেতাদের অভিযোগ, ক্রেতারা গরুর ধরন অনুযায়ী দাম বলতে চাচ্ছে না। এতে করে তাদের পক্ষে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। হাটে ক্রেতা তুলনামূলক কম হলেও গরু শনিবার ও রোববার থেকেই আসতে শুরু করেছে। তবে দাম নিয়ে আপত্তি করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। অনেকেই এসে দাম যাচাই করছেন। কিন্তু কেনার উদ্দেশ্য নয়।

কুষ্টিয়া থেকে ২২টি গরু নিয়ে রাজধানীর হাজারীবাগ হাটে এসেছেন আলফাজ বেপারী। তিনি বলেন, আমি শনিবার গরু নিয়ে হাটে আসি। তার পর থেকে সবাই এসে দেখে যাচ্ছে কিন্তু দাম বলতে চায় না। মাঝারি ধরনের গরুর চাহিদা একটু বেশি। ক্রেতারা আমাদের চাহিদার আশপাশেও দাম বলতে চায় না। অথচ একটি গরু পালন করতে আমাদের এর চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে।

আনোয়ার ইসলাম নামের আরো এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি ২০টি গরু নিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত বিক্রি করতে পারিনি। অনেকেই এসে দাম বলে চলে যায়। কেউ কেনার উদ্দেশ্যে আসে না। আমাদের যেই চাহিদা সেই দাম কেউ বলে না। যার ফলে বিক্রিও হচ্ছে না। দুই লাখ টাকার গরুকে মাত্র এক লাখ ২০ হাজার টাকা দাম বলে। ক্রেতারা সাধারণত দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেশি গরু চাচ্ছে। আশা করছি শেষ মুহূর্তের বাজারের বিক্রি ভালো হবে। কারণ অনেকেই লালন পালনের ভয়ে আগে গরু কিনতে চাচ্ছে না।

হাটের হাসিলের দায়িত্বে থাকা মো. তারেক বলেন, বাজার এখনো পুরোপুরিভাবে জমে উঠেনি। বিক্রেতারা অপেক্ষা করছেন বেশি দামের। অন্যদিকে ক্রেতারাও আশায় আছেন দাম কমবে বলে। মঙ্গলবার ও বুধবার থেকে ভালোভাবে জমে উঠবে বলে মনে করছি। বাজারে মাঝারি ও ছোট সাইজের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এখনো আশানুরূপ বিক্রি শুরু হয়নি। তবে বাজার জমে উঠলে গরু বিক্রিও বাড়বে। হাট মোটামুটি প্রস্তুত। ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে এসেছেন। আমরা ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় প্রস্তুত রয়েছি।

এ দিকে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে বসছে মোট ১৯টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ১০টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ৯টি হাট বসানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ডিএসসিসি এলাকায় শুরুতে ১১টি অস্থায়ী হাট বসানোর পরিকল্পনা থাকলেও আইনি জটিলতা ও রাজনৈতিক কারণে আফতাবনগর ও মেরাদিয়া হাট স্থগিত করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণের চূড়ান্ত ৯ হাট হলো- উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সঙ্ঘ ক্লাবের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পশ্চিম পাশের নদীপাড়, রহমতগঞ্জ ক্লাব-সংলগ্ন খালি জায়গা, হাজারীবাগ ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজির পূর্ব পাশ, আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পাশ, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পাশ, কমলাপুর সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার-সংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড-সংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারের পূর্ব পাশের খালপাড়।

ডিএনসিসি এলাকায় ১০টি হাটের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। হাটগুলো হলো- ভাটারা সুতিভোলা খাল-সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর-সংলগ্ন বউবাজার এলাকা, মিরপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইস্টার্ন হাউজিং, মোহাম্মদপুর বছিলা ৪০ ফুট রাস্তার পাশে, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন খালি জায়গা, খিলক্ষেত থানাধীন মস্তুল চেকপোস্ট-সংলগ্ন মাঠ, ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদরাসা থেকে রানাভোলা স্লুইসগেট পর্যন্ত খালি জায়গা, মিরপুর কালশী বালুর মাঠ, কাঁচকুড়া বাজার-সংলগ্ন খালি জায়গা। অস্থায়ী হাট ছাড়াও ডিএনসিসির গাবতলী ও ডিএসসিসির সারুলিয়া হাটে পশু বিক্রি হবে। এসব হাটে অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে শেড নির্মাণ ও অন্যান্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

আগামী ৭ জুন দেশজুড়ে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। ঈদের আর মাত্র বাকি তিন দিন। রাজধানীতে বসতে শুরু করেছে কোরবানির হাট। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ (৩ জুন) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশু কেনাবেচা শুরু হবে।