নাজিম উদ্দিন মুরাদনগর (কুমিল্লা)
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মুরাদনগর-ঢাকা সড়কের গোমতী নদীর উপর বহুল প্রতীতি সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আপত্তির কারণে প্রায় ৮৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দ স্থগিত হয়ে আছে। ফলে মুরাদনগর-দাউদকান্দি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের তৃতীয় প্যাকেজের কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারের বরাদ্দ থাকলেও দফতরগুলোর সমন্বয়হীনতা, দায়িত্বহীনতা ও টালবাহানায় প্রকল্প বাস্তবায়ন আটকে গেছে।
এ দিকে স্থানীয়দের আশঙ্কা, দ্রুত সমাধান না হলে বরাদ্দ অর্থ ফেরত যেতে পারে, যা মুরাদনগরবাসীর জন্য বড় তি বয়ে আনবে। ফলে এলাকাবাসী দাবি করেছেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তেেপর মাধ্যমে দ্রুত সমন্বয় করে গোমতী সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হোক। স্থানীয় ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, এই সেতুটি হলে যোগাযোগব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
জানা যায়, সেতুর উচ্চতা নিয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং পাউবোর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। পাউবো বলছে, গোমতীর পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে নতুন সেতুটি বর্তমান বেইলি সেতুর চেয়ে অন্তত ২০ ফুট উঁচুতে নির্মাণ করতে হবে। অন্য দিকে সওজের দাবি, নদীর অন্যান্য সেতুর সাথে সামঞ্জস্য রাখতে ৩৪ ফুট উচ্চতাই যথেষ্ট। এই মতবিরোধের কারণে সেতুর নকশা ও ডিজাইন অনুমোদন আটকে থাকায় দরপত্র আহ্বানও বন্ধ রয়েছে।
দুই সরকারি সংস্থার এই টানাপড়েনে প্রকল্পটি দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে আছে। বর্তমানে গোমতী নদীর উপর রয়েছে ১৯৮৮ সালে নির্মিত একটি জরাজীর্ণ বেইলি সেতু। প্রতিদিন শত শত যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। ভারী যানবাহন উঠলেই সেতুটি দুলে ওঠে, যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে এই নড়বড়ে সেতু দিয়েই চলতে হচ্ছে। সরকার টাকা দিয়েছে; কিন্তু দুই অফিসের দ্বন্দ্বে কাজ শুরু হচ্ছে না। ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর একনেকে ৩৪৮ কোটি ২৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এতে ৩৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ, আটটি পুরনো বেইলি ব্রিজের বদলে পাঁচটি নতুন আরসিসি গার্ডার সেতু এবং তিনটি কালভার্ট নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। প্রকল্পের প্রথম দু’টি প্যাকেজে কাজ এগোলেও তৃতীয় প্যাকেজে পাউবোর অনুমোদন না পাওয়ায় সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে।
মুরাদনগর ইউএনও আবদুর রহমান বলেন, গোমতী নদীর উপর একটি টেকসই সেতু এখন সময়ের দাবি। দীর্ঘ দিন ধরে নদী পারাপারে মানুষ নানামুখী দুর্ভোগে পড়ছেন। স্থায়ী ও নিরাপদ সেতু নির্মাণ হলে মুরাদনগরের মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে, ব্যবসাবাণিজ্য ও সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি পাবে।
সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, পাউবো যে উচ্চতা চাচ্ছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। ওই পরিমাণ উচ্চতায় সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। অপর দিকে পাউবো কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার জানান, আমি এখানে এক বছর ধরে আছি, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই।



